২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
কুর্দিদের সমর্থন বন্ধের শর্ত আঙ্কারার

ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে সদস্য হতে আটকাবে না তুরস্ক, আশা ন্যাটোর

-

ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সামরিক জোটের সদস্য হওয়া তুরস্ক আটকাবে না বলে তারা আশাবাদী। গত রোববার ফিনিশ প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো জোটের সদস্য হতে আবেদন করার ঘোষণা দেয়ার পর এই আশাবাদের কথা জানানো হলো। ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের পর নরডিক দেশ দুটি ন্যাটো জোটে যোগ দিতে চাইছে। গত শুক্রবার তুরস্ক এমন পদক্ষেপের বিরোধিতা করার ঘোষণা দিয়েছিল।
ন্যাটোর বিধি অনুসারে, জোটের সম্প্রসারণে সব সদস্য রাষ্ট্রের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফলে এ ক্ষেত্রে তুরস্কের ভেটো দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে। সুইডেনের ক্ষমতাসীন সুইডিশ সোসাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটির পরররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান লিন্ডে জানান, ক্ষমতাসীন দলটি ন্যাটো প্রতিরক্ষা জোটের সদস্য হওয়ার জন্য আবেদনের প্রতি সম্মতি জানিয়েছে। ইউক্রেনে রুশ হামলা সুইডেন ও পুরো ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে। রয়টার্স, ভয়েস অব আমেরিকা, বিবিসি, আলজাজিরা।
শুক্রবার ন্যাটোতে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের যোগদান নিয়ে আপত্তি জানিয়ে জোট মিত্রদের অবাক করেছে তুরস্ক। রোববার দু’টি দেশের জোটের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কয়েকটি শর্তপূরণের দাবি তুলেছেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বার্লিনে ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে বৈঠকের পর তিনি জানান, তুরস্ক চায় নরডিক দেশগুলো কুর্দি বিদ্রোহীদের সমর্থন বন্ধ এবং তুরস্কের অস্ত্র কেনাতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করুক।
তবে একই দিনে ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ বলেছেন, আমি আত্মবিশ্বাসী যে, তুরস্কের উদ্বেগ আমরা নিরসন করতে পারব এমন উপায়ে যাতে করে, দেশ দুটির সদস্যপদ দেয়া আটকে না যায়। বার্লিনের রুদ্ধাদ্বার বৈঠকের বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, আমরা দৃঢ়আশাবাদী যে, আমরা এই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব। ন্যাটো সংলাপের একটি ক্ষেত্র।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু বলেছেন, ৭০ বছর আগে ন্যাটোতে যোগ দেয়া তুরস্ক জোটটির মুক্তদ্বার নীতির বিরোধিতা করে না। সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে তার বৈঠক ভালো ছিল এবং তারা আঙ্কারার বৈধ উদ্বেগ নিরসনে পরামর্শ দিয়েছেন, যা তুরস্ক বিবেচনা করবে। তুর্কি মন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, তুরস্কের অবস্থানের শ্রদ্ধাশীল নয় সুইডেন। সপ্তাহান্তে সুইডেনের স্টকহোমে পিকেকে বিদ্রোহীরা বৈঠক করেছে।
ন্যাটো কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের সদস্যপদের বিষয়টি মেনে নেয়ার জন্য প্রচণ্ড চাপে রয়েছে তুরস্ক। কারণ জোট মনে করে দেশ দু’টি জোটে যোগদান বাল্টিক সাগরে ন্যাটোর অবস্থান অনেক শক্তিশালী হবে। শীতল যুদ্ধের সময় ফিনল্যান্ড ও সুইডেন নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিল। ন্যাটোতে তাদের যোগদানের সিদ্ধান্ত কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপীয় নিরাপত্তা কাঠামো বড় পরিবর্তন। ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর নরডিক অঞ্চলে ন্যাটোর প্রতি জনসমর্থন গড়ে উঠেছে।
সুইডেনের ক্ষমতাসীন দল সবুজ সঙ্কেত দেয়ার ফলে প্রধানমন্ত্রী মাগডালেনা অ্যান্ডারসন কয়েক দিনের আনুষ্ঠানিক আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন। জোট মিত্রদের যাচাইয়ের পর এবং তুরস্ক যদি বিরোধিতা না করে তাহলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সদস্যপদ প্রদান করা হতে পারে। কূটনীতিক ও কর্মকর্তারা বলছেন, তবে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে মিত্র দেশগুলোর পার্লামেন্ট বছরখানেক সময় নিতে পারে।
সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের এমন পদক্ষেপে হুঁশিয়ারি জানিয়ে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে মস্কো। তারা বলেছে, সামরিক-কারিগরি পদক্ষেপ নেয়া হবে। গত শনিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে আলোচনার পর ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তাদের আলোচনা ছিল পরিমিত এবং এতে কোনো হুমকির কথা ছিল না। ফিনিশ প্রেসিডেন্ট বলেন, পুতিন বলছেন এটি একটি ভুল। আমরা হুমকি দিচ্ছি না। সবমিলিয়ে আলোচনা ছিল খুব শান্ত ও শীতল।
ইউক্রেন সীমান্তে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করবে বেলারুশ : ইউক্রেন সীমান্তে বিশেষ বাহিনী মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে বেলারুশ। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের সর্বশেষ গোয়েন্দা বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। দেশের পশ্চিমে প্রশিক্ষণ রেঞ্জে বিমান প্রতিরক্ষা, আর্টিলারি এবং ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট মোতায়েন করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
এ দিকে ইউক্রেনে হামলার জন্য পাঠানো সেনাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সদস্যকে হারিয়েছে রাশিয়া। ব্রিটিশ সামরিক গোয়েন্দারা এমন দাবি করেছে। এক বিবৃতিতে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ডনবাস অঞ্চলে রুশ বাহিনী যে হামলা চালাচ্ছে, সেখানেও রাশিয়ার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।
ইউক্রেনে কমপক্ষে ২৩ সাংবাদিক নিহত : ইউক্রেনের সাংবাদিক ইউনিয়ন জানিয়েছে, রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে দেশটিতে কমপক্ষে ২৩ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ইউক্রেনিয়ান ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টের সদস্য সার্জিয় টমিলেনকোর বলেন, রুশ দখলদাররা সরাসরি মিডিয়াকর্মীদের টার্গেট করেছে। সাংবাদিকদের গাড়িতে গুলি করে হত্যা করেছে এবং সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে তারা।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট সংগঠনের কার্লোস মার্টিনেজ ডি লা সেরনা বলেন, সাংবাদিকেরা মূলত তাদের দায়িত্ব পালনের সময় নিহত হয়েছেন। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে পারি ৭ সাংবাদিক দায়িত্বরত অবস্থায় নিহত হয়েছেন। ইউক্রেনের ডিজিটাল সম্প্রচার মাধ্যম হরোমাডস্কির সাংবাদিক আনাসটাসিয়া স্টানকো বলেছেন, নিহত সাংবাদিকেরা জনগণের নিরাপত্তার বিষয়ে তথ্য জানানোর কাজ করছিলেন। এখনো সাংবাদিকেরা ঝুঁকি নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন।
ইউক্রেনের তিন যুদ্ধবিমান ভূপাতিত : রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার জানিয়েছে, তাদের সেনারা ইউক্রেনের তিনটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রুশ বাহিনী মায়কোলাইভের ইয়েভহেনিভকার কাছে একটি এসইউ-২৫ ও খারকিভের কোমেসুভাকায় আরেকটি এসইউ-২৫ বিমান গুলি করে মাটিতে নামায়। অন্য দিকে কৃষ্ণসাগরের স্নেক আইল্যান্ডের কাছে একটি এসইউ-২৪ বিমান ভূপাতিত করার দাবি জানিয়েছে তারা।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়েছে, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মিসাইল খারকিভের দু’টি কমান্ড পোস্টেও আঘাত হেনেছে। এ ছাড়া অস্ত্রের গুদামও উড়িয়ে দেয়ার দাবি করেছে তারা। এই গুদামে ইউক্রেনের সেনা ও অস্ত্র মজুদ করা ছিল। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, তাদের সেনারা দোনেৎস্ক ও লুহানেস্কেও একই রকম হামলা চালিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement