১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ইউক্রেন নিয়ে উত্তেজনা

পুতিনের ওপর নিষেধাজ্ঞার হুমকি বাইডেনের

আলোচনার আগে রাশিয়ার সামরিক মহড়া; রাশিয়ার জন্য লিখিত প্রস্তাব তৈরি করছে ন্যাটো; শুক্রবার পুতিনের সাথে কথা বলবেন ম্যাক্রোঁ
-

ইউক্রেনে হামলা চালালে খোদ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করলে পুতিনের ওপর ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনা করবে হোয়াইট হাউজ। তবে পুতিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা উত্তেজনা প্রশমনে ফলপ্রসূ হবে না বলে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে ক্রেমলিন। বিবিসি, রয়টার্স ও আলজাজিরা।
ইউক্রেনের সীমান্তের কাছে বিপুল সৈন্য এনে জড়ো করছে রাশিয়া, এর প্রতিক্রিয়ায় ন্যাটো সামরিক জোট পূর্ব ইউরোপে আরো জাহাজ ও জঙ্গিবিমান মোতায়েন করে নিজেদের শক্তি বাড়িয়েছে এবং তাদের বাহিনীগুলোকে সতর্কাবস্থায় রেখেছে; এ পরিস্থিতিতেই মঙ্গলবার বিরল এ নিষেধাজ্ঞার হুমকি এলো বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টায় গতকাল প্যারিসে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা আলোচনায় মিলিত হয়েছেন। উচ্চপর্যায়ের এ বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্স ও জার্মানির সিনিয়র কূটনীতিকরা। ফলে পূর্ব ইউক্রেনে সঙ্ঘাত বন্ধে ২০১৫ সালে সম্পাদিত মিনস্ক শান্তিচুক্তির চার পক্ষ আবার একত্র হলো।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার যে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সে সম্পর্কে ক্রেমলিন বলেছে, পুতিনের ওপর ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞা আরোপ কোনো ফল বয়ে আনবে না এবং ইউক্রেন নিয়ে উত্তেজনা প্রশমনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। সাংবাদিকদের উদ্দেশে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, রাজনৈতিকভাবে এটি বেদনাদায়ক নয়, ধ্বংসাত্মক।
রাশিয়া কোনো আক্রমণের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে উল্টো অভিযোগ করে বলেছে, ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পদক্ষেপেই এ সঙ্কট শুরু হয়েছে। ইউক্রেনকে কখনোই ন্যাটো জোটে নেয়া হবে না, এমন দাবিসহ পশ্চিমের কাছে নিরাপত্তাবিষয়ক বেশ কিছু নিশ্চয়তা চেয়েছে রাশিয়া। মস্কো সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র ইউক্রেনকে ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে একটি ‘বাফার জোন’ হিসেবে বিবেচনা করে। ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একাধিকবার আলোচনা হলেও উত্তেজনা কমেনি। এত দিন বাইডেন মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়ে এলেও এবার বলেছেন, পুতিন ব্যক্তিগতভাবে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারেন।
ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়া এক লাখ সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে বলে বিভিন্ন হিসাবে বলা হচ্ছে। রুশ সৈন্যরা প্রতিবেশী দেশটিতে অভিযান শুরু করলে সেটি ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় আক্রমণ’ হবে আর তা ‘বিশ্বকে পরিবর্তন করে দেবে’ বলে মন্তব্য করেছেন বাইডেন। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে সরাসরি পুতিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন কি না, মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের উত্তরে বাইডেন বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি তেমনটিই দেখছি’। বিদেশী নেতাদের ওপর সরাসরি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিরল হলেও নজিরবিহীন নয়। যারা এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছেন তাদের মধ্যে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ও লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি উল্লেখযোগ্য।
মঙ্গলবার একটি মার্কিন বিমান সামরিক সরঞ্জাম ও যুদ্ধ উপকরণ নিয়ে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে নেমেছে। এটি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা জোরদার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেয়ার ২০ কোটি ডলারের সামরিক প্যাকেজের তৃতীয় চালান। এর পাশাপাশি ইউরোপে প্রায় সাড়ে আট হাজার মার্কিন সেনাকে সতর্ক অবস্থায় রেখেছে পেন্টাগন আর প্রয়োজন দেখা দিলে ন্যাটোর পূর্বাংশের বাহিনীকে মোতায়েন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তারা গভীর উদ্বেগের সাথে এসব লক্ষ্য করছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেনকে ঘিরে উত্তেজনা উস্কে দেয়ার জন্য ওয়াশিংটনকে অভিযুক্ত করেছে।
আলোচনার আগে রাশিয়ার সামরিক মহড়া : প্যারিসে ইউক্রেন নিয়ে চতুর্মুখী আলোচনা শুরুর আগে গতকাল বুধবার সামরিক মহড়া চালিয়েছে রাশিয়া। একই সাথে বেলারুশে মোতায়েন করা যুদ্ধবিমানের সংখ্যাও বাড়িয়েছে মস্কো। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে জানায়, বুধবার বেলারুশে প্যারাট্রুপার মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগের দিন আর্টিলারি বাহিনী ও নৌসেনাদের সেখানে পাঠানো হয়। তারা আগামী মাসে মহড়ায় অংশ নেবে। এতে আরো বলা হয়েছে, বেলারুশে এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমানও পাঠানো হচ্ছে মহড়ার জন্য। ইউক্রেনের উত্তরে অবস্থিত বেলারুশে সেনা ও যুদ্ধবিমান মোতায়েন করার ফলে সম্ভাব্য হামলার একটি যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি হলো। পৃথকভাবে রাশিয়ার আর্টিলারি বাহিনী দক্ষিণাঞ্চলীয় রোস্তভ অঞ্চলে গুলি ছোড়ার অনুশীলনের জন্য প্রস্তুত। বুধবার এ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণাঞ্চলীয় সামরিক জেলার লড়াইয়ের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই মহড়া আয়োজিত হবে। অঞ্চলটি ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী।
রাশিয়ার জন্য লিখিত প্রস্তাব তৈরি করছে ন্যাটো : এ সপ্তাহের শেষের দিকে ক্রেমলিনের কাছে একটি লিখিত প্রস্তাবনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ন্যাটো। মঙ্গলবার সিএনএনের সাথে আলাপকালে ন্যাটো মহাসচিব জিন্স স্টলটেনবার্গ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা রূপরেখা দেবো যে, আমরা বসতে প্রস্তুত। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, নিরস্ত্রীকরণ, সামরিক কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা, ঝুঁকি হ্রাস প্রক্রিয়া এবং ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ন্যাটো প্রস্তুত রয়েছে। আমরা আলোচনার টেবিলে বসে রাশিয়ার উদ্বেগের কথা শুনতে প্রস্তুত রয়েছি।’ স্টলটেনবার্গ বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কটে এখনো কূটনৈতিক উপায় রয়েছে। কিন্তু তার জন্য রাশিয়াকে উত্তেজনা প্রশমন করে, সদিচ্ছা নিয়ে ন্যাটো ও ন্যাটো মিত্রদের সাথে রাজনৈতিক আলোচনায় যুক্ত হতে হবে। তিনি বলেন, ন্যাটো ইউক্রেনে কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন করবে না। তবে সব মিত্রদের, বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের মিত্রদের রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর। ন্যাটো মহাসচিব এমন সময়ে এ মন্তব্য করলেন যার এক দিন আগেই খবর এসেছে, পশ্চিমা এই সামরিক জোটের কিছু সদস্য দেশ পূর্ব ইউরোপে অতিরিক্ত জাহাজ ও যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে।
শুক্রবার পুতিনের সাথে কথা বলবেন ম্যাক্রোঁ : ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ মঙ্গলবার বলেছেন, তিনি এ সপ্তাহের শেষের দিকে ইউক্রেন প্রশ্নে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে টেলিফোনে আলোচনা করবেন। তিনি মস্কোর সাথে সংলাপের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন। জার্মান চ্যান্সেলর স্কলজের পাশাপাশি ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আমি শুক্রবার সকালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলব।’ তিনি বলেছেন, এ আলোচনা হবে রাশিয়ার সাথে ‘সংলাপের দাবির’ এবং মস্কোর ইউক্রেন কৌশল বিষয়ে ‘ব্যাখ্যাদানের’ সুযোগ দেয়ার একটি অংশ।
রাশিয়াকে কোনো ছাড় নয় : ইউক্রেন
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, তার দেশ রাশিয়াকে কোনো ছাড় দেবে না। মঙ্গলবার সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন তিনি। দিমিত্রো কুলেবা বলেন, উত্তেজনা প্রশমনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইউক্রেনের ওপর ছাড় চাপিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না। কিয়েভ এটি মেনে নেবে না। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার দেশ রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে শান্ত করার লক্ষ্যে কোনো আপসের পথে হাঁটবে না। তিনি বলেন, ইউক্রেনের হয়ে অন্য কেউ ছাড় দেয়ার কথা বললেও সেটি কিয়েভ মেনে নেবে না। দিমিত্রো কুলেবা বলেন, ‘নিজেদের ভবিষ্যৎ, নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে আমাদের ১৫ হাজার নাগরিক জীবন দিয়েছে। আমরা অনেক মূল্য দিয়েছি। তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্যক্তিগতভাবে ইউক্রেনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি এ দেশটিকে জানেন এবং তিনি চান না যে রাশিয়া এটিকে ধ্বংস করে দিক।


আরো সংবাদ



premium cement