১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রেকর্ডের পথে করোনা শনাক্ত

গতকাল আক্রান্ত ১৬০৩৩ মৃত্যু ১৮
-

আর মাত্র ২০০ হলেই এক দিনে করোনা শনাক্তের রেকর্ড অতিক্রম করবে। গত বছর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সর্বোচ্চ সংক্রমণের সময় ২৮ জুলাই দেশে এক দিনে করোনা শনাক্ত হয় ১৬ হাজার ২৩০ জন। ওমিক্রন সংক্রমণের এ সময় গতকালই দেশে ১৬ হাজার ৩৩ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সর্বোচচ সংক্রমণের সময় গত বছর ৫ ও ১০ আগস্ট এই দুই দিনে ২৩০ করে ৪৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সে তুলনায় বর্তমানে মৃত্যুর সংখ্যা কম। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, করোনার ওমিক্রন ভয়াবহ রকমের সংক্রামক। ফলে সংক্রমণের আগের রেকর্ড তো ভাঙবেই; বরং এক দিনে সংক্রমণ ৫০ হাজারের ঘর অতিক্রম করবে খুব শিগগিরই।
গত বছরের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে প্রথম ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ দিন তা ঢাকা শহরেই বন্দী ছিল; কিন্তু এখন ঢাকার বাইরেও করোনা শনাক্ত বাড়ছে। যেমন চট্টগ্রাম বিভাগে গত ২৪ জানুয়ারি দেড় হাজারের কাছাকাছি শনাক্ত থাকলেও গতকাল সকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে করোনা শনাক্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩২৫। এভাবে অন্যান্য বিভাগের জেলাগুলোতেও কিছু কিছু করে বেড়ে যাচ্ছে করোনা শনাক্ত। একটি হাসপাতালে করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন এমন একজন চিকিৎসক বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই এক দিনে করোনা শনাক্ত ২০ হাজারের ঘর অতিক্রম করলে বিস্মিত হবেন না তিনি। কারণ ওমিক্রন ভয়াবহ রকমের সংক্রামক।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৪৯ হাজার ৪৯২টি নমুনা পরীক্ষা করে নমুনার ৩২.৪০ শতাংশ করোনা শনাক্ত ছিল। রাজধানী ঢাকায় ৩০ হাজার ৪৩৫টি নমুনা পরীক্ষা করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৯ হাজার ৪৮৭ জন। রাজধানীতে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ৩০.৭৬ শতাংশ। একটা বিষয় লক্ষণীয়, রাজধানীতে মোট করোনা শনাক্ত খুব বেশি বাড়ছে না। এখানে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। গতকাল যে ৩০ হাজার ৪৩৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে নতুন করে ওমিক্রন শনাক্তের পর গতকালকের সংখ্যাটাই সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা ছিল। করোনা পরীক্ষার পরিমাণ আরো বাড়ানো হলে এখানে হয়তো আরো বেশি শনাক্ত হবে তবে শনাক্তের হার নেমে আসবে নিচে।
ময়মনসিংহ বিভাগে করোনার শনাক্তের পরিমাণ যেমন তুলনামূলক কম, আবার নমুনা পরীক্ষাও খুব বেশি নয়। এই বিভাগে গতকাল সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এক হাজার ১৫৮টি; কিন্তু করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৬৫ জনের মধ্যে। এই বিভাগের করোনা শনাক্তের হার ৩১.৫৯ শতাংশ।
অপর দিকে রাজশাহী বিভাগে গতকাল একই সময়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এক হাজার ৮২৮ জনের এবং করোনা শনাক্ত ৮৮২ জনের মধ্যে। রাজশাহী বিভাগে করোনা শনাক্তের হার ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের চেয়ে অনেক বেশি, ৪৮.২৫ শতাংশ। এ রকম অন্যান্য বিভাগেও করোনা শনাক্ত ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে।
গতকাল সারা দেশে করোনায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১০ লাখ শনাক্তের বিপরীতে মৃত্যু হচ্ছে ১৬৫.৯০ জন। গতকাল যে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ এবং বাকিরা নারী।
করোনা সংক্রমণ বর্তমানে খুব বেশি হলেও হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা সে তুলনায় বাড়েনি। এটা খুবই ইতিবাচক একটি দিক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক মো: সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তি কম হলেও কিন্তু এটা করোনা ভাইরাস। আর ওমিক্রন সংক্রমণ একবার হলে বারবার সংক্রমিত হচ্ছে বাইরের দেশগুলোতে। ফলে করোনা যেন সংক্রমিত করতে না পারে সে জন্য অবশ্যই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক ব্যবহারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। বাইরে চলাচল করলে অব্যশই যেন মাস্ক ব্যবহার করা হয় সে দিকে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছেÑ সংক্রমণ কমিয়ে রাখা। আগের মতো মাস্ক ব্যবহার এবং হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সরকার নাগরিকদের মাস্ক সরবরাহ করলে সরকারেরই লাভ, খুব তাড়াতাড়ি করোনা থেকে মুক্তি পাবে দেশ।
অতি আত্মবিশ্বাসে সংক্রমণ বাড়ছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মানুষের অতি আত্মবিশ্বাসের কারণে সংক্রমণ বাড়ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল মঙ্গলবার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, এরকম একটা পরিস্থিতির কারণে ১ থেকে ৩২ শতাংশে উঠেছে সংক্রমণের হার। এটা খুবই আশঙ্কাজনক।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে সংক্রমণ বাড়ছে, বাড়ছে বাংলাদেশেও। তবে আশার খবর হলো, ইউরোপে কমছে, ভারতে কমছে। তাদের আক্রান্তের সংখ্যা লাখ লাখ ছিল, এখন কমে আসছে। ওমিক্রন মাইল্ড হতে পারে কিন্তু তার সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সংক্রমণ যখন বেশি হবে তখন মৃত্যুও বেশি হবে।
করোনা রোগীদের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, রাজধানীতে সরকারি যে হাসপাতাল আছে, সেগুলোর ২৫ শতাংশ শয্যা ভরে গেছে।
সংক্রমণ বাড়লেও সেই হারে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে না উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, এটার কারণ হচ্ছে টিকা। অনেক মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। ফলে হসপিটালাইজেশন কম হবে। আমাদের টার্গেটেড আরো তিন কোটি লোক টিকা নেয়ার বাকি আছে। ট্রান্সপোর্ট, ইন্ডাস্ট্রি, কনস্ট্রাকশন সেক্টরে বাকি আছে। তারা এগিয়ে আসেনি টিকা নিতে। তাদের কীভাবে টিকা দেয়া যায় সে বিষয়ে আমরা বৈঠক করেছি।
হাসপাতালে রোগী যারা আসছেন তাদের ৮৫ শতাংশই টিকা নেননি এবং যারা মারা যাচ্ছেন তাদেরও ৮৫ শতাংশই টিকা নেননি বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বাসার বাইরে মানুষ সেভাবে মাস্ক পরে না। স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। ওমিক্রন মাইল্ড হওয়ায় আমরা যদি ইচ্ছামতো চলাফেরা করি তাহলে ক্ষতি হবে। আমাদের দেশ অনেক ভালো অবস্থায় আছে। আমাদের সব সূচকই ভালো আছে। আমরা যদি ফেল করি তাহলে সূচকগুলো ভালো থাকবে না।
আগেও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকরা যেভাবে এগিয়ে এসেছিলেন, এবারও সেভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আশা করি এবারও আপনারা আগের মতো পাশে থাকবেন।
রাজশাহীতে করোনা ও উপসর্গে ৩ জনের মৃত্যু
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আরো তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকাল ৯টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে একজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। আর অপর দুইজন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। বর্তমানে রাজশাহী জেলায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৫৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী গণমাধ্যমকে জানান, মৃত তিনজনের মধ্যে একজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। আর করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া দুইজনের মধ্যে একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং একজন রাজশাহী জেলার বাসিন্দা।
সোমবার রামেক হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে ১৭৭ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে ৯৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবে ৪৬৪ নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
বগুড়ায় শনাক্তে নতুন রেকর্ড
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় এক দিনে করোনা শনাক্তে নতুন রেকর্ড এবং করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯৮ নমুনায় ২০০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষার হিসাবে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৫০ দশমিক ২৫ শতাংশ, যা এখন পর্যন্ত বগুড়ায় সর্বোচ্চ। এর আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ৪৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত হয়ে সালেক উদ্দিন (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বগুড়া সদরের এই ব্যক্তি শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন। নতুন করে একজন মারা যাওয়ায় মোট মৃত্যু ৬৮৯ জনে দাঁড়িয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাকা লিগে মোহামেডানকে হারাল শাইনপুকুর বিশাল ব্যবধানে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে হারালো গাজী গ্রুপ চকরিয়ায় আধিপত্য বিস্তারে কুপিয়ে হত্যা আবারো বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে আইএমএফ বুয়েটে নতুন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক নিয়োগ পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবে নিহতদের পরিবারের সাথে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ সখীপুরে সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী সেই আ'লীগ নেতা কারাগারে ফরিদপুরে দুর্ঘটনায় মা-ছেলে নিহত, আহত বাবা-মেয়ে দিরাইয়ে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের পাঠ্যক্রম গ্রহণের আহ্বান রাষ্ট্রপতির বগুড়ায় পুলিশ পরিচয়ে ট্রাকভর্তি কলা ছিনতাই : গ্রেফতার ৪

সকল