১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর রণতরী মোতায়েন

মার্কিনিদের রাশিয়া ভ্রমণের বিষয়ে সতর্কতা ; ইউক্রেন থেকে দূতাবাস কর্মীদের সরিয়ে নিচ্ছে ব্রিটেন-যুক্তরাষ্ট্র; অভাবনীয় নিষেধাজ্ঞার হুমকি ইইউর
-

রাশিয়া ও ইউরোপের পূর্বাঞ্চলীয় দেশ ইউক্রেনের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই পূর্ব ইউরোপে সেনাবহর, যুদ্ধজাহাজ ও বোমারু বিমান পাঠিয়েছে পাশ্চাত্য দেশগুলোর সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অ্যালায়েন্স (ন্যাটো)। জোটের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ন্যাটোর মহাপরিচালক জিনস স্টলটেনবার্গ সোমবার এক বিবৃতিতে পূর্ব ইউরোপ অঞ্চলে সেনাবহর, যুদ্ধজাহাজ ও বিমান পাঠানোর তথ্য জানিয়ে এ সম্পর্কে বলেন, ‘যেসব দেশ ন্যাটোতে তাদের সেনাবাহিনী ও যুদ্ধযান পাঠিয়েছেন, তাদের জন্য কৃতজ্ঞতা। এভাবেই সব মিত্রকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষপ গ্রহণ করা অব্যাহত রাখবে ন্যাটো।’ রয়টার্স ও বিবিসি।
তা ছাড়া রাশিয়া যদি ইউক্রেনে আক্রমণ চালায় তাহলে দেশটির ওপর অভাবনীয় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সোমবার জোটের সদস্য ডেনমার্ক জানিয়েছে, ইইউ এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপে প্রস্তুত রয়েছে, যা রাশিয়া আগে কখনো দেখেনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলছেন, তারা ঐক্যবদ্ধভাবে মস্কোকে একটি সতর্ক বার্তা পাঠাবেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার কৌশল অনুযায়ী আমি নিশ্চিত যে তাদের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো পশ্চিমকে বিভক্ত করা। এটি এমন একটি বিজয় যা আমরা রাশিয়ানদের দিতে পারি না।’ ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেপ্পে কফোড সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রাশিয়া যদি আবার ইউক্রেন আক্রমণ করে তাহলে আমরা ব্যাপক, আগে কখনো দেখা যায়নি এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত রয়েছি। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
রাশিয়ার সাথে তার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের সাম্প্রতিক উত্তেজনা এই ন্যাটোকে ঘিরেই। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করার পর থেকেই দিন দিন তিক্ত হচ্ছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। রাশিয়ার একমাত্র সামুদ্রিক নৌপথ কৃষ্ণ সাগর। এই সাগরের উপকূলবর্তী অপর দেশ ইউক্রেন যদি ন্যাটোর সদস্য হয়, সে ক্ষেত্রে কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলে ন্যাটোর তৎপরতা স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে এবং এটি কখনোই রাশিয়ার কাম্য নয়। বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়া ঐতিহাসিকভাবেই পাশ্চাত্য শক্তিগুলোর আধিপত্যের বিরোধী। ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের আবেদন ফিরিয়ে নিতে প্রথমে ইউক্রেনের ক্ষমতাসীন সরকারকে চাপ দিয়েছে দিয়েছে রাশিয়া। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্তে গত মাসে এক লাখেরও বেশি সেনাসদস্য মোতায়েন করেছিল দেশটি।
চলতি মাসে যদিও তাদের অধিকাংশকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে; কিন্তু এখনো সীমান্তে অবস্থান করছে ১০ হাজারেরও বেশি রুশ সেনা। এ দিকে সীমান্তে রুশ সেনা মোতায়েনের পর থেকেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি হুমকি দিয়ে বলেছে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায়Ñ সে ক্ষেত্রে এমন কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেশটির ওপর জারি করা হবে, যা ‘অতীতে কখনো দেখেনি’ মস্কো। রাশিয়া অবশ্য বলেছে, ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর কোনো পরিকল্পনা আপাতত মস্কোর নেই।
এ দিকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে অবস্থিত ব্রিটিশ দূতাবাস থেকে স্টাফ প্রত্যাহার শুরু করেছে ব্রিটেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র তার দূতাবাসের স্টাফদের পরিবারের সদস্যদেরকে ইউক্রেন ছাড়ার নির্দেশ দেয়। ইউক্রেনে রাশিয়া যেকোনো সময় আক্রমণ চালাতে পারে, এমন আশঙ্কায় এসব ব্যবস্থা নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনে অবস্থানরত ব্রিটিশ কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই। কিন্তু কিয়েভে যে পরিমাণ স্টাফ কাজ করছেন তার প্রায় অর্ধেককে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে ব্রিটেনে।
অত্যাবশ্যকÑ নয় এমন কর্মীদেরও ইউক্রেন ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। একইসাথে সে দেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদেরও সেখান থেকে বের হয়ে আসার বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে তারা। এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, ইউক্রেইনে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করছে রাশিয়া; এমন খবর তাদের কাছে আছে।
তবে ইউক্রেনে কোনো ধরনের হামলার পরিকল্পনার খবর ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাদের কথায় কোনো বিশ্বাস রাখতে পারছে না পশ্চিমারা। চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে এবং ‘যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সম্ভাব্য হয়রানির মুখে পড়ার’ আশঙ্কার কথা জানিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন ভ্রমণ না করতেও জনগণকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। পররাষ্ট্র দফতরের এক বার্তায় বলা হয়েছে, “খবর পাওয়া যাচ্ছে যে রাশিয়া ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সামরিক অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করছে।”
পররাত্র দফতরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইউক্রেনে মার্কিন দূতাবাস খোলা রাখা হবে, তবে ওয়াশিংটন থেকে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে, ‘যেকোনো সময়’ একটি আগ্রাসন শুরু হতে পারে। তারা বলছেন, ওই ধরনের একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বের করে আনার মতো অবস্থা সরকারের থাকবে না। সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান সতর্ক করেছেন, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া প্রায় এক লাখ সৈন্য সমাবেশ করায় ইউরোপে নতুন করে সঙ্ঘাত সৃষ্টির ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
সম্মুখ সারির সেনাদের রসদ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৯০ টনের মত গোলাবারুদ গত শনিবার ইউক্রেনে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের কৌশল মোকাবেলায়’ আরো বেশি সামরিক সহায়তা পাঠানোর মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মজবুত করাসহ ধারাবাহিক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে তার সরকার। এর আগেও ইউক্রেনের ভূমি দখল করেছে রাশিয়া।
সে দেশে মস্কোপন্থী প্রেসিডেন্টকে উৎখাত করার জেরে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া অঞ্চলটি রাশিয়া দখল করে নেয়। এরপর থেকে সেদেশের পূর্বাঞ্চলে রুশ-সমর্থক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে ইউক্রেনের বাহিনীর লড়াইয়ে প্রায় ১৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার অভিযোগ তোলে, ইউক্রেইন সরকারে একজন মস্কোপন্থী ব্যক্তিকে বসানোর পরিকল্পনা করছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। ব্রিটিশ মন্ত্রীরা হুঁশিয়ার করেছেন, ইউক্রেনে হামলা হলে রাশিয়াকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement