২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

স্বাধীনতা রক্ষা ও গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে কাজ করতে হবে

-

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি স্বাধীনতা রক্ষা এবং গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে কাজ করার জন্য পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, মনে রাখবেন জাতির পিতার দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, যা আমাদেরকে এই স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আপনাদের পূর্বসূরিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সব আঘাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২২’ উদ্বোধনকালে দেয়া প্রধান অতিথির ভাষণে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের প্রতি এ আহ্বান জানান। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিশ^াস জনবান্ধব পুলিশিংয়ের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করবেন। সর্বোপরি পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠান বাংলাদেশ পুলিশকে শান্তির সংস্কৃতি বিকাশের লক্ষ্যে নবোদ্যমে কাজ করতে প্রেরণা জোগাবে, এটাই আমার প্রত্যাশা।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ভাষণের উদ্ধৃতি তুলে ধরে পূর্বসূরিদের ঐতিহ্য ধরে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহবান জানান। ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগে প্রথম পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠানের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এই রাজারবাগে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের কথা মনে রাখতে হবে। তারা আপনাদেরই ভাই, তাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জোট অগ্নিসন্ত্রাস, বৃক্ষ কর্তন, রাস্তা কেটে ফেলাÑ নানান ধরনের কাজ তারা করেছে, এমনকি পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে। যেভাবে পুলিশের সদস্যদের তারা নির্মমভাবে মেরেছে সেটা সত্যিই ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। এই ধরনের ঘৃণ্য কাজ করে তারা দেশে একটা অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিল। কত মানুষকে তারা হত্যা করেছে তার কোনো সীমা নেই। তিনি বলেন, সেই সময় পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে মানুষের জীবনে শান্তি নিরাপত্তা নিয়ে এসেছে। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তারা কাজ করেছেন। এ জন্য সবাইকে তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিবেশন করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে একটি খোলা জিপে প্যারেড পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কৃতী পুলিশ সদস্যদের মধ্যে পুলিশপদকও বিতরণ করেন তিনি।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ২০২০ সালে ১১৫ এবং ২০২১ সালে ১১৫ জনসহ মোট ২৩০ পুলিশ সদস্যকে পদক প্রদান করা হয়। তাদের মধ্যে ৯ জনকে মরণোত্তর পদক প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে র্যাবের মহাপরিচালক ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও রয়েছেন।
পদকের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)- সেবা, রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম), রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)। পদকপ্রাপ্তদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অন্যরাও ভালো কাজ করে যাবেন বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে গত ১৩ বছরে পুলিশের উন্নয়নে নানাবিধ কর্মকাণ্ড গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে মোট ৮২ হাজার ৫৮৩টি নতুন পদ সৃজন করা হয়েছে। পুলিশের নতুন ইউনিট যেমন ইন্ডাস্ট্রিয়াল-ট্যুরিস্ট-নৌ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, এন্টি টেরোরিজম ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট, রংপুর ও ময়মনসিংহে রেঞ্জ, রংপুর এবং গাজীপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিট, রংপুরে আরআরএফ এবং সিআইডিতে সাইবার পুলিশ সেন্টার গঠন করা হয়েছে। দু’টি সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন, এয়ারপোর্টে একটি ও কক্সবাজারে দু’টি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং র্যাবের জন্য তিনটি ব্যাটালিয়ন, ৩০টি ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, ৬২টি থানা, ৯৫টি তদন্ত কেন্দ্র এবং একটি ফাঁড়ি এবং জাতীয় জরুরি সেবায় ৯৯৯ ইউনিট গঠন করা হয়েছে। জরাজীর্ণ থানাগুলো পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, এখন পুলিশ বাহিনী প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন পুলিশ বাহিনীতে উন্নীত হয়েছে। সব র্যাংকের পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা উন্নয়নে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি বছর ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন যুগোপযোগী ট্রেনিং মডিউল প্রণয়ন, ট্রেনিং মডিউলের মধ্যে মানবাধিকার সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বৈদেশিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তার সরকার এই অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে চায় উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই তার সরকারের লক্ষ্য।


আরো সংবাদ



premium cement