১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নির্বাচন কমিশনারদের বিচার চাইলেন বিএনপির হারুন এমপি

ইসি নিয়োগের বিল সংসদে আগের সার্চ কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না

শাবিপ্রবির ভিসির অপসারণ ও যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে জাপা এমপিদের প্রশ্ন ; মেয়াদ শেষে জেলা পরিষদে বসবেন প্রশাসক; সংশোধনের প্রস্তাব পৌরসভা আইনও
-

জাতীয় সংসদে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ উত্থাপন করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল রোববার বিলটি উত্থাপনের পর তা সাত দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। প্রস্তাবিত এই আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে যোগ্যতা-অযোগ্যতাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ২০১২ এবং ২০১৭ সালে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রাষ্ট্রপতি ইসি নিয়োগ করেছিলেন, সে প্রক্রিয়াই আইনের অধীনে আনা হচ্ছে এই বিলের মাধ্যমে। এই আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটির মাধ্যমে এর আগে গঠিত সব নির্বাচন কমিশনের বৈধতা দেয়ার পাশাপাশি কমিটির কাজ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকবে না।
এ আইন করার উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বিলে বলেছেন, ‘প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদান স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, গণতন্ত্র সুসংহত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে এবং জনস্বার্থ সমুন্নত হবে মর্মে আশা করা যায়।’
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গতকালের অধিবেশনে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ নামে খসড়া আইন উত্থাপনের বিরোধিতা করেন বিএনপির সংসদ সদস্য মো: হারুনুর রশীদ।
সংসদে আনা বিলে বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ইতঃপূর্বে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি ও তৎকর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলি এবং ওই অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ বৈধ ছিল বলিয়া গণ্য হইবে এবং ওই বিষয়ে কোনো আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।’ আগের সার্চ কমিটির ‘বৈধতা’ দেয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী সংসদে বলেন, দুবার যে সার্চ কমিটি করা হয়েছিল, তা ঐকমত্যের ভিত্তিতে। সেটাকে আইনসিদ্ধ করা হচ্ছে।
বিলটি ওঠানোর জন্য আইনমন্ত্রী স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর অনুমতি চাইলে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ খসড়া আইনটিকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে এর বিরোধিতা করেন। যদিও হারুনের আপত্তি সংসদের ভোটে টেকেনি। হারুনের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অন্যকিছু না পেয়ে উনারা এইটা নাই, ওইটা নাই বলে নাচ-গান শুরু করেছেন’।
এমপি হারুন বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের (বর্তমান নির্বাচন কমিশন) মেয়াদ শেষ হবে। তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার এবং দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সেগুলোর ব্যাপারে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা খুবই জরুরি। তিনি বলেন, বিগত রকিব কমিশন এবং হুদা কমিশন নির্বাচন ব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমি আইনমন্ত্রীকে স্পষ্টভাবে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ২০০৬ সালে যখন কে এম হাসানকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়া, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়েছিল-তখন প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছিলেন নির্বাচন কমিশন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংস্কার ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাবো না। ১৯৯৫-৯৬ সালে দীর্ঘ ১৭২ দিন হরতালের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে যাবো না। বিএনপির এই যুগ্ম মহাসিচব বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য সার্চ কমিটি বিষয়ে যে আইন করা হচ্ছে। সারা দেশের লোকজনের দাবি ছিল অন্তত এই আইনটির বিষয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সে জায়গা থেকে যেন আমরা বেরিয়ে আসতে পারি। এই আইনে নতুন কিছু নাই দাবি করে তিনি বলেন, শুধু অতীতে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে তাদের বৈধতা দেয়া হয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ এই আইন দিয়ে বর্তমান সঙ্কট কখনো নিরসন হবে না। এই সঙ্কট থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো না। সুতরাং আমি দাবি করবো অবশ্যই এই আইনটি প্রত্যাহার করুন। আইনমন্ত্রী কিছুদিন আগেই বলেছিলেন এ ধরনের একটি আইন করার জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল এবং সমাজের সাথে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এই কথাটি বলার পর আজকে তিনি কিভাবে এ ধরনের আইন আনতে পারলেন?
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ হয়েছে কি না, হয়ে থাকলে এর পেছনে কোন দল কতো টাকা খরচ করেছে, এই টাকা কোথা থেকে খরচ হয়েছেÑ এসব বিষয়ে জাতীয় সংসদে সুনির্দিষ্ট তথ্য উপস্থাপনের দাবি তুলেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো: মুজিবুল হক চুন্নু। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-এই দুই দলের কাছেই এ তথ্য জানতে চান।
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সংসদকে জানান, আগামীকাল (আজ সোমবার) তিনি এ বিষয়ে সংসদে বিবৃতি দেবেন। অবশ্য সংসদের বৈঠক বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
অন্য দিকে, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ভিসিকে অপসারণের দাবি জাতীয় সংসদে তুলেছেন জাতীয় পার্টির অপর দুই এমপি। রোববারের মধ্যেই (গতকাল) ভিসিকে প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি জানান সংসদে বিরোধী দলের এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ ও পীর ফজলুর রহমান। শিক্ষামন্ত্রীকে ডাবল মাস্ক পরে সিলেট যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে কাজী ফিরোজ বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী আছেন, উনি বলেছিলেন যে তোমাদের দাবিদাওয়া রেখে ঢাকা আসো আমার সাথে আলোচনা করতে। আমরা সবাই ছাত্র আন্দোলন করে এসেছি। আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে কখনো ছাত্ররা কারো সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা আসবে না, আমরা জানি। মন্ত্রীর উচিত ছিল ওখানে ডাবল মাস্ক পরে যাওয়া।
মেয়াদ শেষে জেলা পরিষদে বসবেন প্রশাসক : জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনায় সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবেন। এমন একটি বিধান রেখে গতকাল জাতীয় সংসদে একটি বিল উত্থাপিত হয়েছে। জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন ২০২২ নামে বিলটিতে বিদ্যমান আইনের মতো প্রতি জেলায় ১৫ জন সাধারণ সদস্য এবং ৫ জন সংরক্ষিত নারী সদস্যের পরিবর্তে জেলার অন্তর্গত উপজেলার সমানসংখ্যক সদস্য এবং এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষিত সদস্য নিয়ে পরিষদ গঠন হবে।
এদিকে বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশনকে ভোটার তালিকা তৈরির কথা বলা হলেও প্রস্তাবিত আইনে নির্বাচন কমিশনকে বাদ দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে উপজেলা পরিষদগুলোর চেয়ারম্যান, নির্বাহী অফিসার ও মেয়র পরিষদের সভায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তবে তাদের ভোটাধিকার থাকবে না।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম আইনটি সংসদে তুললে ৭ দিনের মধ্যে তার রিপোর্ট সংসদে উত্থাপনের সময় নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, চলতি সংসদেই এই বিলটি পাস হতে পারে। আর এটা সম্ভব হলে দেশের বর্তমান জেলা পরিষদগুলোতে প্রশাসক বসানো হবে। চলতি মাসের মধ্যে দেশের প্রায় সবগুলো জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হতে চলছে।
পৌরসভা আইন সংশোধনের প্রস্তাব : কোনো পল্লী এলাকাকে ‘শহর’ ঘোষণার ক্ষেত্রে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্বের শর্ত বাড়িয়ে পৌরসভা আইন সংশোধনের প্রস্তাবও গতকাল সংসদে তোলেন স্থ’ানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি স্থানীয় সরকার (পৌরসভা)(সংশোধন) বিল ২০২২ সংসদে উত্থাপন করেন। পরে বিলটি সাত দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
বিদ্যমান আইনে বলা আছে, পৌরসভা ঘোষণা করতে হলে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে দেড় হাজার হতে হবে। এর কম হলে হবে না। সংশোধনে তা বাড়িয়ে দুই হাজার করা হয়েছে। বিল পৌরসভার সচিবের পদের নাম বদলে ‘পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা’ করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement