২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এক স্থানে ৪ মাসে তিন ভূমিকম্প

যেকোনো সময় বড় বিপদের আশঙ্কা
-

গত চার মাসে তৃতীয়বারের মতো পাঁচ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে গেল একই স্থান ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত অঞ্চলে। গত ২১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শহর থেকে সামান্য দূরে ৫.৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের ফালাম শহর এবং ভূমিকম্পটি হয়েছে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫৬ কিলোমিটার গভীরে। কানাডার সাসকাচুয়ান ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত বার্মিজ ফল্টে (চ্যুতি) চার মাসের ব্যবধানে যে তিনটি ভূমিকম্প হয়েছে এর প্রথমটি ২০২১ সালের ৮ অক্টোবর, দ্বিতীয়টি হয় একই বছরের ২৫ নভেম্বর। গত ২১ জানুয়ারি হয় তৃতীয়টি। তিনি জানান, ‘এই তিনটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ২০০ কিলোমিটারের মধ্যেই। এই স্থানের চারপাশের ভূ-অভ্যন্তরে খুবই অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা বলছেন, বার্মিজ ফল্টে ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার মতো পর্যাপ্ত শক্তি জমা হয়েছে। গত ৪ মাসে বার্মিজ ফল্টে যে তিনটি ভূমিকম্প হয়ে গেল সেগুলো চট্টগ্রাম শহর থেকে গড়ে ২৫০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে অবস্থিত। ফলে আগামীতে একই স্থানে যদি ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয় তবে চট্টগ্রাম শহরে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
বার্মিজ ফল্ট ছাড়াও বাংলাদেশের চারপাশে বেশ কিছু ভূমিকম্প অঞ্চল রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরেই মধুপুর নামে একটি ফল্ট রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে ডাউকি ফল্ট। ১৮৯৭ সালে ডাউকি ফল্টের পূর্বপ্রান্তে ৮.৭ মাত্রার একটি বড় ভূমিকম্প হয়; কিন্তু ডাউকি ফল্টের পশ্চিম প্রান্তে ৪০০ বছর ধরে বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি। ২০২১ সালে মে ও জুন মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ১০ দিনের ব্যবধানে সিলেটে ১০ দফা ভূমিকম্প হয়েছে। এর উৎপত্তিস্থলও ছিল ডাউকি ফল্টে। এই ডাউকি ফল্টও বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বড় ভূমিকম্পের আগে বা পরে দফায় দফায় মৃদু কম্পন হতে পারে। সে কারণে সিলেট অঞ্চল ভূমিকম্পের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। সিলেট, আসাম ও মেঘালয়ে ভূমিকম্প হলে বাংলাদেশের রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট অঞ্চলের অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। কারণ, এই শহরগুলোতে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি। রাজধানী ঢাকা আবার এই শহরগুলো থেকে খুব বেশি দূরে নয়। আবার মিয়ানমারের বার্মিজ ফল্টে ভূমিকম্প হলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বড় ধরনের ক্ষতি হবে। ভূমিকম্প ৫ থেকে ৬ মাত্রার হলে রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের মতো সীমান্তবর্তী এলাকা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সীমান্তবর্তী এলাকায় ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে তার প্রভাব ঢাকায় পড়বে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারি বলেন, দেশে ভূমিকম্প কয়েক বছর থেকে বেড়েছে। ছোট ছোট ভূমিকম্প হলেও গত ১০০ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলে বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি। বড় ভূমিকম্প না হওয়াটা প্রমাণ করছে, এই অঞ্চলের মাটির নিচে শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে। সে কারণেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনের যেকোনো সময় এই অঞ্চলে একটি বড় ভূমিকম্প হতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, গত চার বছরে বাংলাদেশ ও আশপাশের অঞ্চলে ৫০টির কাছাকাছি ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে ২০টির উৎপত্তিস্থল ছিল দেশের ভেতরে। এর মধ্যে ১১টিই সিলেটে হয়েছে। আটটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নাটোর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, পঞ্চগড়, নেত্রকোনা, খাগড়াছড়ি ও টেকনাফে। অবশিষ্ট একটি ভূমিকম্প হয়েছে বঙ্গোপসাগরের নিচে। সীমান্তবর্তী এলাকায় হয়েছে সাতটি ভূমিকম্প। এর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে একটি এবং ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে ছয়টি। এ ছাড়া ভারতের আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয়ে ১৮টি, মিয়ানমারে একটি এবং ভুটানে একটি ভূমিকম্প হয়েছে।
অধ্যাপক ড. মেহেদী আনসারি বলেন, ঢাকা থেকে উত্তর-পূর্ব, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বেল্ট ভূমিকম্পের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
এই দিক দিয়েই প্লেট বাউন্ডারি লাইনটি চলে গেছে। সাধারণত প্লেট বাউন্ডারি লাইনে ভূমিকম্পের বেশির ভাগ হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অবস্থান যেহেতু প্লেট বাউন্ডারির লাইনে সে কারণে ভূমিকম্পের ঝুঁকি থাকছেই এবং যেকোনো সময়। সেজন্য ভূমিকম্পের ব্যাপারে একটি প্রস্তুতি নিয়ে রাখা উচিত সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের।

 


আরো সংবাদ



premium cement