২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্কুল-কলেজ ফের বন্ধ

বিভিন্ন মহলের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
বন্ধ থাকবে কোচিং সেন্টার : শিক্ষামন্ত্রী;  অর্ধেক লোক দিয়ে চলবে অফিস : স্বাস্থ্যমন্ত্রী -

করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে স্কুল-কলেজ। সেই সাথে বন্ধ থাকবে সব ধরনের কোচিং সেন্টার। এ ছাড়া অর্ধেক জনবল দিয়ে অফিস-আদালত চালু রাখার প্রজ্ঞাপন আসছে বলেও জানা গেছে। গতকাল শুক্রবার সরকারের ঘোষণায় আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও দেড় বছর বন্ধ থাকার পর মাত্র কয়েক মাস আগেই আবার চালু হয়েছে শ্রেণী শিক্ষাকার্যক্রম। কিন্তু গতকাল শুক্রবার হঠাৎ করেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এমন সিদ্ধান্ত জানানোর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন, সবকিছু খোলা রেখে শুধু স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হলেই করোনার বিস্তার কমবে না। বরং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় আবার ছেদ পড়বে।
এ দিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি গতকাল শুক্রবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আমরা চেষ্টা করেছি যেকোনো মূল্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে শিক্ষাকার্যক্রম চালু রাখতে। কিন্তু বর্তমানে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে আমরা বাধ্য হয়েছি স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সব ধরনের কোচিং সেন্টারও বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া এবং পাশাপাশি ক্লাস চালু রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও গত কয়েক দিনের সংক্রমণের হার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এই হার অনেক বেশি। তাই বাধ্য হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। স্কুল বন্ধের ঘোষণার পর একই সাথে আশার বাণীও শুনিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সংক্রমণের হার কমে গেলে আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। এখন অনলাইনে ক্লাসকার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল রয়েছে, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীরা চলাচল করবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবার ক্লাসে ফিরবে তারা। তবে শিক্ষকরা প্রশাসনিক কাজে যোগ দিতে পারবেন।
এর আগে গতকাল সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে আগামী ১৪ দিনের জন্য স্কুল-কলেজ এবং সমমনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। তবে প্রজ্ঞাপনে বাণিজ্যমেলা বন্ধের কোনো নির্দেশনা ছিল না।
মহাখালীতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিয়ে বলেন, করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেছে। স্কুল ও কলেজে সংক্রমণের হারও বেড়ে গেছে। অনেক শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে। এটা আশঙ্কাজনক। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলেছি। আগামী দুই সপ্তাহের জন্য (৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। অর্ধেক লোক দিয়ে অফিস-আদালত চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই সিদ্ধান্ত খুব শিগগিরই প্রজ্ঞাপন আকারে চলে আসবে।
গতকাল জারি করা প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, বাজার বা শপিংমল, মসজিদ, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশনসহ সব ধরনের জনসমাবেশে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহারসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে এবং বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনিটর করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাণিজ্যমেলা চলবে বলে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে মেলায় আসা লোকজনকে অবশ্যই টিকা সনদ নিয়ে আসতে হবে এবং মাস্ক পরিধান করতে হবে বলে জানিয়েছে মেলা কর্তৃপক্ষ।
গতকাল দুপুরের আগে থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণার বিষয়টি ব্যাপক প্রচার পায়। বিশেষ করে বাণিজ্যমেলা চালু রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই লেখেন, করোনা শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই হানা দিয়েছে। হাটে-বাজারে, মেলায় করোনা থাকে না। অন্য একজন লিখেছেন, করোনা কি বাছাই করে শিক্ষার্থীদের আক্রমণ করে? এই ধরনের বৈষম্যের অবসান চাই।
এ দিকে সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সশরীরে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। অনলাইনে তাদের শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালিত হবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। অন্য দিকে সরকারের ঘোষণার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষাও স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের পরিচালক মো: আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব পরীক্ষার সময়সূচি পরে জানানো হবে।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো: মিজানুর রহমান স্কুল বন্ধের বিষয়ে বলেন, দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকার পর সেপ্টেম্বরে আবার স্কুল চালু হওয়ায় এখন আমরাও নতুন করে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করেছি মাত্র। জানুয়ারি মাসেই মূলত আমাদের কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে ভর্তির একটি মওসুম চলে। কিন্তু এখন বন্ধ হওয়ার ঘোষণায় দেশের ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেন মালিকরা আবার একটি ঝুঁকির মুখে পড়বে।
অভিভাবকদের অনেকেই এই প্রতিবেদককে বলেন, করোনার সংক্রমণের কারণে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করার কারণে আসন্ন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ওপরেও বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা বিশেষ করে পরীক্ষার্থীদের যেভাবে ক্লাস চালু করা হয়েছিল সেখানে এখন বড় ধরনের ছেদ পড়বে। অভিভাবকরা আশঙ্কা করছেন, করোনার কারণে এবারে এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষা যেন বাতিল না হয়।


আরো সংবাদ



premium cement