২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনা বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারিতে ঋণপ্রবাহ কমার শঙ্কা

-

দীর্ঘ প্রায় দুই বছর পর বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ দুই অঙ্কের ঘর অতিক্রম করেছে। কিন্তু বিনিয়োগের পালে হাওয়া লাগতে না লাগতেই আবারো করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। এক দিনে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে আজ থেকে দুই সপ্তাহের জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অফিস আদালত অর্ধেক লোক দিয়ে চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তৈরী পোশাক খাতের রফতানির আদেশ এখন পর্যন্ত ঠিক থাকলেও সামনে এটি হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সব মিলেই বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আবারো কমে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত অর্থবছরেও (২০২০-২১) বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রবাহ আরো কমে হয় ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। দুই অর্থবছরের বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘর অতিক্রম করতে পারেনি। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই বেসরকারি বিনিয়োগের পালে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। প্রতি মাসেই আস্তে আস্তে বিনিয়োগ বাড়ছিল। সর্বশেষ নভেম্বর শেষে বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘর অতিক্রম করে ১০ দশমিক ১১ শতাংশে পৌঁছে। কিন্তু আবারো নতুন করে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের গতি থেমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে ব্যাক টু ব্যাক পণ্য আমদানির ঋণপত্র স্থাপন কমে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় এমনিতেই বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহ কমে গেছে। এতে প্রতিটি ব্যাংকেরই ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানির দায় পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে মুদ্রাবাজারে বড় ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া থেকে রক্ষা করছে। এর পরও ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাচ্ছে। গত বছরের ১৯ জুন যেখানে এক ডলার পেতে ব্যয় করতে হতো ৮৪ টাকা, সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি সত্ত্বেও চলতি ১৯ জানুয়ারিতে তা বেড়ে হয়েছে ৮৬ টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি না করলে ডলারের মান আরো বেড়ে যেত। এতে আমদানি ব্যয় আরো বেড়ে যেত। এরই মধ্যে আমদানি দায় ব্যাপকভিত্তিতে বেড়ে গেছে। শুধু নভেম্বরে পণ্য আমদানিতে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৬৩ শতাংশ, আর ৫ মাসের হিসাবে (জুলাই-নভেম্বর) আমদানি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৪ শতাংশ। রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার পাশাপাশি আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে যেখানে চলতি হিসাবের উদ্বৃত্ত ছিল ৩৫৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার, সেখানে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা ঋণাত্মক হয়েছে ৬১৮ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করোনার প্রাদুর্ভাবে এরই মধ্যে ব্যাক টু ব্যাংক এলসি কমে গেলেও রফতানি আয় এখন ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২১) রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল ঋণাত্মক শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর একক মাস হিসেবে ডিসেম্বরে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৮ দশমিক ২৭ শতাংশ, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল ঋণাত্মক ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। এ থেকে দেখা যায় রফতানি আয়ের অবস্থান এখনো ভালো রয়েছে। সামনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার ওপর নির্ভর করছে সামগ্রিক রফতানি আয়ের অবস্থা।
তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চলমান করোনা পরিস্থিতির প্রভাব রফতানি আয়ের ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। এ বিষয়ে বিকেএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ইউরোপে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট আগে থেকেই বেড়ে গেছে। কিন্তু এখনো তারা তৈরী পোশাকের রফতানি আদেশ বন্ধ বা স্থগিত করেনি। বরং তাদের রফতানি আদেশ আগের অবস্থায়ই বজায় রেখেছে। আমাদের দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলেও এর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে তিনি মনে করেন, করোনার প্রাদুর্ভাব কমানোর জন্য জনসচেতনতা আরো বাড়াতে হবে। মানুষের অহেতুক সন্ধ্যার পর ঘোরাঘুরি না করে ঘরে অবস্থান করার ব্যবস্থা নিতে হবে। সব ক্ষেত্রেই আমাদের সচেতন হতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement