১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নোবেল ও ফরহাদ তদন্তেপ্রাপ্ত আসামি, মামলায় কারো নাম নেই

শিমু হত্যাকাণ্ড
-

চিত্রনায়িকা রাহিমা আক্তার শিমু ওরফে রাইমা ইসলাম শিমু (৪১) হত্যা মামলায় নাম উল্লেখ করে কাউকেই আসামি করা হয়নি। আসামি সবাই অজ্ঞাত। এমনকি এই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়ায় শিমুর স্বামী খন্দকার সাখাওয়াত আলীম নোবেল ও তার বন্ধু এস এম আবদুল্লাহ ফরহাদও এই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি নন। তাদেরকে তদন্তেপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে উল্লেখ করে মামলার আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর নেয়া হয়েছে রিমান্ডে। তবে রিমান্ডে এখন পর্যন্ত কোনো কথা তারা স্বীকার করছে না বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। শিমুর লাশ উদ্ধারের পরপরই একটি সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা জেলা এসপি মারুফ হাসান সরদার সংবাদিকদের জানান, ‘এই হত্যাকাণ্ডে শিমুর স্বামী নোবেল ও তার বাল্যবন্ধু ফরহাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এ দিকে নিহত শিমুর বোন দাবি করেছেন, তার ভগ্নিপতি নোবেলের সাথে কথা না বলা পর্যন্ত তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না নোবেল তার বোনকে হত্যা করেছে। কারণ বিয়ের এত বছরেও আমার বোন কখনো বলেনি তার স্বামী তার গায়ে হাত তুলেছে। তাই আগে আমি দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলব তারপর বিশ্বাস করব।

গত মঙ্গলবার বিকেলে নিহত শিমুর ভাই হারুন অর রশীদ বাদি হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৩৭। পেনাল কোডের ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ করেন তিনি। তবে মামলায় নাম উল্লেখ করে কাউকেই আসামি করা হয়নি। আসামি ‘সব অজ্ঞাত’ বলা হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ থানায় এই মামলা করার আগেই শিমুর স্বামী নোবেল ও তার বাল্যবন্ধুকে গ্রেফতার করা হলেও তাদের এজাহার নামীয় আসামি করা হয়নি, তাদের ‘পুলিশ তদন্তে প্রাপ্ত’ আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জানা গেছে, ‘নিহতের পরিবারের আগ্রহ না থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে তাদের আসামি করা হয়নি। আদালতে পুলিশের করা রিমান্ড আবেদনেও তাদেরকে ‘তদন্তে প্রাপ্ত’ আসামি বলা হয়েছে।

মামলায় হারুন অর রশীদ উল্লেখ করেন, ‘আমার ছোটবোন রাহিমা আক্তার শিমু ওরফে রাইমা ইসলাম শিমু একজন চিত্রনায়িকা। খন্দকার সাখাওয়াত আলীম নোবেল তার স্বামী। তারা একসাথে কলাবাগান গ্রিন রোডের বাসায় সপরিবারে থাকতেন। ১৬ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৭টার দিকে অভিনেতা জহিরুল ইসলাম ওরফে আদর ফোন করে আমার ছোটবোন ফাতিমাকে জানায়, ‘শিমুকে সকাল থেকে মোবাইল ফোনে পাচ্ছি না’। তখন আমার ছোটবোন শিমুর বড় মেয়ে অজিহা আলীম রিদকে (১৭) ফোন দেয়, তার মায়ের খবর জানতে চায়। রিদ মোবাইল ফোনে ফাতিমাকে জানায়, সকাল সাড়ে ৭টা থেকে তার মা বাসায় নেই, কোথায় আছে সে-ও জানে না। এরপর ফাতিমা তার মোবাইল ফোন থেকে শিমুর স্বামী নোবেলকে ফোন দেয়। তখন নোবেল তাকে জানায়, শিমু কোথায় আছে তা তিনি জানেন না। আমার বোনকে রাতে খোঁজাখুঁজি অব্যাহত রাখি।’

হারুন অর রশীদ মামলায় আরো অভিযোগ করেন, ‘১৭ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ৯টায় পুলিশের মাধ্যমে সংবাদ পাই, কেরানীগঞ্জে এক নারীর লাশ পাওয়া গেছে, লাশটি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। পরিবারসহ মর্গে গিয়ে আমরা আমার বোন শিমুর লাশটি শনাক্ত করি। আমার বোন মিডিয়ায় কাজ করে বলে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার স্বামীর সাথে দাম্পত্য কলহ ছিল।’

তিনি আরো অভিযোগ করেন, ‘আমার বোন নিখোঁজ হওয়ার পরে তার বাসায় গিয়ে নোবেলের সাথে তার বাল্যবন্ধু ফরহাদকে দেখতে পাই। তারা এ সময় নিখোঁজ নিয়ে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেছে। মোবাইলেও তারা এলোমেলো কথা বলেছে। তাই আমাদের ধারণা আমার বোনের স্বামী নোবেল ও তার বন্দু এস এম ওয়াই আবদুল্লাহ ফরহাদসহ অজ্ঞাত ব্যক্তিরা শিমুকে ১৬ জানুয়ারি সকাল ৭টা থেকে ১৭ জানুয়ারি সকাল ১০টার মধ্যে খুন করে লাশ গুম করতে কেরানীগঞ্জে নিয়ে যায়।’
১৬ জানুয়ারি সকালে শিমু নিখোঁজ হন। ১৭ জানুয়ারি রাতে তার লাশ শনাক্ত হয়। ওইদিন রাতে তার স্বামী নোবেল ও নোবেলের বন্ধু ফরহাদকে পুলিশ তাদের হেফাজতে নেয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করে বলেও ১৮ জানুয়ারি দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার গণমাধ্যমকে সংবাদ সম্মেলন করে জানান। হত্যার রহস্য উদঘাটনের দাবিও করা হয়। সেখানে বলা হয় ‘দাম্পত্য কলহের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এই সংবাদ সম্মেলনের পর কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা হয়। তবে মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত।

১৮ জানুয়ারি হত্যা মামলার প্রথম আইও কলাতিয়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই চুন্নু মিয়া নোবেল ও ফরহাদকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘তদন্তে প্রাপ্ত আসামি খন্দকার সাখাওয়াত আলীম নোবেল ও এস এম ওয়াই আবদুল্লাহ ফরহাদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামলার ঘটনায় জড়িত বলে স্বীকার করেছে। তাদের ব্যাপক ও নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে মামলার রহস্য উদঘাটন হবে এবং অপর আসামিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।’ রিমান্ড আবেদনে তাদের এজাহার নামীয় আসামি বলা হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার বর্তমান আইও কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ইন্সপেক্টর শহিদুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। তাহলে রিমান্ডে থাকা আসামি নোবেল ও ফরহাদকে কিভাবে আসামি করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মামলার নতুন আইও। এসব উত্তর প্রথম আইও দিতে পারবেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসামিরা কি সহজে কোনো কিছু স্বীকার করে।


আরো সংবাদ



premium cement