২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
দাম্পত্য কলহ : স্বামী গ্রেফতার

নায়িকা শিমুকে হত্যা করে বস্তায় লাশ

-

চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমু (৪০) বস্তাবন্দী টুকরো করা লাশ উদ্ধারের পর তার স্বামী ও গাড়িচালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই বীভৎস হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন তার স্বামী খন্দকার সাখাওয়াত আলীম নোবেল। পুলিশ বলছে, দাম্পত্য ও পারিবারিক কলহের জেরে মাদকাসক্ত স্বামী নায়িকা শিমুকে হত্যার পর লাশ টুকরো করে দু’টি বস্তায় ভরে। এরপর রাতের আধারে গাড়ির ব্যাকডালায় ভরে ফেলে দিয়ে আসে। গত সোমবার দুপুরে ঢাকার কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশে ঝোপের ভেতর দু’টি বস্তা পড়ে থাকতে দেখে কেরানীগঞ্জ থানায় খবর দেয় প্রত্যক্ষদর্শীরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বস্তার ভেতরে নারীর টুকরো লাশ উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
পুলিশ জানায়, প্রথমে উদ্ধার হওয়া লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরে লাশের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করে প্রযুক্তির মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এর আগে রোববার রাতে কলাবাগান থানায় চিত্রনায়িকা শিমু নিখোঁজ হয়েছে বলে একটি জিডি করে তার পরিবার। পরে কেরানীগঞ্জ ও কলাবাগান থানা পুলিশের সমন্বয়ে নিশ্চিত হয় উদ্ধার হওয়া লাশটি শিমুর। এর কিছু সময় পর শিমুর ভাই শহিদুল ইসলাম খোকন মর্গে গিয়ে তার বোনের লাশ শনাক্ত করেন।
অভিনেত্রী শিমুর বোন ফাতেমা জানান, স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে কলাবাগান থানাধীন গ্রিনরোডের একটি বাসায় থাকতেন শিমু। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের মার্কেটিং বিভাগে চাকরির পাশাপাশি নাটকে কাজ করতেন তিনি। এ ছাড়া তার নিজেরও একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফাতেমা জানান, গত রোববার সকাল ১০টায় বাসা থেকে বের হয় শিমু। সন্ধ্যা ৭টায় শিমুর এক বন্ধু শিমুকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানায়। পরে তারা অনেক খুঁজেও শিমুকে পাচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে রাত ১১টায় কলাবাগান থানায় জিডি করা হয়। মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকা থেকেই শিমুর স্বামী নোবেল ও গাড়ি চালক আবদুল্লাহ ফরহাদকে আটক করে র্যাব। পরে তাদেরকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
এদিকে শিমুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন সরদার জানান, শিমুকে হত্যা করেছেন স্বামী নোবেল আর লাশ গুমে সহায়তা করেছেন ফরহাদ। পুলিশ এরই মধ্যে গাড়িটি জব্দ করেছে। ওই গাড়ির ব্যাকডালায় রক্তের আলামত পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, এই ঘটনার পর নোবেল ও ফরহাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে নোবেল হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। পুলিশ সুপার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহ থেকে নোবেলের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। হত্যার পর লাশ গুমে তিনি ফরহাদের সহযোগিতা নিয়েছেন। তবে কিভাবে এমন বিভৎস হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একই সাথে এই হত্যাকাণ্ডের অন্য কোনো কারণ বা কেউ জড়িত রয়েছে কি না সে ব্যাপারেও তদন্ত চালানো হচ্ছে। এই ঘটনায় নোবেলকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন শহিদুল ইসলাম খোকন। ওই মামলায় গাড়িচালক ফরহাদকেও আসামি করা হয়েছে।
চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা জানান ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৫টি সিনেমায় অভিনয় করেন শিমু। তিনি ৯৮ সালে কাজী হায়াতের ‘বর্তমান’ সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেন। দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, চাষি নজরুল ইসলাম, শরিফ উদ্দিন খান দিপুসহ নামী ও দেশের শীর্ষ পরিচালকদের নির্দেশনায় আরো কিছু সিনেমায় তিনি কাজ করেন। তিনি শিল্পী সমিতির একজন সদস্য ছিলেন। তবে সম্প্রতি শিল্পী সমিতি কর্তৃক ১৮৪ জন ভোটাধিকার হারানো শিল্পীর মধ্যে তার নাম ছিল। কেন তার নাম বাদ দেয়া হলো তা নিয়ে সমিতির বর্তমান কমিটির কাছে তিনি কৈফিয়ত চেয়েছিলেন। এই নিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদকের সাথে তার বাগি¦তণ্ডাও হয়। একপর্যায়ে ভোটাধিকার ফিরে পেতে অন্যদের সাথে আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement