২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
এক কেজি ধান উৎপাদনে ৬৫০ লিটার পানির প্রয়োজন- ব্রি’র গবেষণা

দশ বছরে বাড়েনি বোরো চাষাবাদ এলাকা, তবে বেড়েছে ফলন

-

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গবেষকরা বলছেন, দেশের নিয়ন্ত্রিত সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ১০০০-১৬০০ লিটার সেচের পানি দিয়ে কৃষকরা সফলভাবে এক কেজি ধান উৎপাদন করছেন। তাদের মতে শুধু সেচ বিবেচনায় এই পানির প্রয়োজন আরো কম, যার মধ্যে আনুমানিক ৪০ শতাংশ (৪০০-৬৫০ লিটার) অপচয়সহ সিপেজ ও পারকুলেশনের মাধ্যমে ভূগর্ভের পানির সাথে মিশে যায়। সুতরাং এক কেজি ধান উৎপাদনে প্রকৃত পানির প্রয়োজন হয় ৫৫০-৬৫০ লিটার। ব্রি’র গবেষকরা আরো বলছেন, এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে প্রায় ৩০০০-৫০০০ লিটার সেচের পানি লাগে, এটা ধারণা (মিথ)। বোরো ধান চাষে ভূগর্ভের পানিস্তরের অবনমন হয় না। বিগত ১০ বছরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বোরো’র এলাকা বাড়েনি। উন্নত জাতসহ অন্যান্য কারণে বোরোর ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন গবেষকরা।
গতকাল রোববার বোরো চাষে সেচের পানির ব্যবহার নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসনে ব্রি’র গবেষণা ফলাফল উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানানো হয়। জুম প্লাটফরমে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, বোরো ধানে পানির অপচয় নিয়ে যে বিভ্রান্তি সমাজে প্রচলিত ছিল ব্রি ও সহযোগী সংস্থাগুলোর এই গবেষণা ফলাফলের মাধ্যমে সে বিভ্রান্তির অবসান হবে। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের উচিত এই ধরনের বিভ্রান্তি নিরসনে একযোগে গবেষণাকাজ পরিচালনা করা।
ব্রি’র উদ্যোগে এবং অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েল্থ সাইন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসআইআরও), ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড (ইউএসকিউ), এসিএআইআর ও অস্ট্রেলিয়ান এইডের সহযোগিতায় ওয়েবিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের আলোচনায় প্রফেসর ইমিরেটাস ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার জন্য বোরো ধানের আবাদই একমাত্র দায়ী নয়। শুষ্ক মৌসুমে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদীনালা, খালবিলে পানির প্রবাহ কম থাকায় বেজ ফ্লো হিসেবে ভূগর্ভের পানির একটি অংশ নদীতে চলে যাচ্ছে। ভূগর্ভের পানি উত্তোলনের ফলে বন্যার পানি প্রথমে ভূগর্ভের পানির সেই খালি জায়গা পূরণ করার ফলে বন্যার তীব্রতা হ্র্রাস পাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ড. হামিদুর রহমান বলেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে টেকসই ভূগর্ভের পানি ব্যবস্থাপনা করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগসহ ভৃপৃষ্ঠস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। নদীনালা, খালবিলে পানির সংরক্ষণের পরিমাণ ব্যবহার বৃদ্ধি করতে পারলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সাফল্যজনকভাবে ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেনÑ কৃষি সচিব মো: সায়েদুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মো: বখতিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: বেনজীর আলম এবং বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মো: আব্দুর রশীদ।
ওয়েবিনারে দু’টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: মনিরুজ্জামান এবং কমনওয়েল্থ সাইন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসআইআরও), অস্ট্রেলিয়ার প্রিন্সিপাল রিসার্চ সায়েন্টিস্ট ড. মো: মাঈন উদ্দিন। কর্মশালার দুই প্রবন্ধকার জানান, কৃষিকাজে ভূগর্ভের পানির অধিক ব্যবহারের ফলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কোনো কোনো জায়গায় ভূগর্ভের পানির স্তর কিছুটা নিচে নেমে যাচ্ছে। এ সমস্যাকে সামনে রেখে ভূগর্ভের পানির সুষ্ঠু ব্যবহার, ধান উৎপাদনে প্রকৃত পানির পরিমাণ ও স্বল্প খরচে ধান উৎপাদনের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষে ব্রি ও অস্ট্রেলিয়ার সিএসআইআরও, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড এবং এসিআইএআর-অস্ট্রেলিয়া গত পাঁচ বছর ধরে কয়েকটি গবেষণাকাজ সম্পন্ন করেছে। এসব গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, বিগত ১০ বছরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বোরো’র এলাকা বাড়েনি তবে উন্নত জাতসহ অন্যান্য কারণে বোরোর ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা ছাড়াও বোরো ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্যবহার ও ক্রপিং প্যাটার্ন বেজড ফসল চাষাবাদের মাধ্যমে জমির উৎপাদনশীল ও ফসলের পানি ব্যবহার দক্ষতা আরো বাড়ানো সম্ভব।
সভাপতির বক্তব্যে ব্রি মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর বলেন, সারা দেশে বোরো ধান চাষে সেচের পানির ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে, এ রকম নেতিবাচক প্রচারণা ঠিক নয়। শুধু বরেন্দ্র অঞ্চলে কিছু এলাকায় এটি হতে পারে। ভূগর্ভের অ্যাকুয়াফায়ারগুলো পানির রিজার্ভার হিসেবে কাজ করে। সুতরাং এসব নেতিবাচক প্রচারণায় বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।


আরো সংবাদ



premium cement