২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ছয় মাসে প্রবৃদ্ধি ১৪.২২%

রাজস্ব আদায়ে তেজিভাব

-

রাজস্ব আদায়ের তেজিভাব অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ। গত অর্থবছরে একই সময়ে এই হার ছিল মাত্র চার দশমিক ৬৭ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে এনবিআরের শীর্ষ পর্যায় থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা শতকরা শতভাগ অর্জন করার জন্য সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ২৯০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার ২০৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৮৮ ভাগ। এ সময়ে কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে ৮৫ ভাগ, ভ্যাট বা মূসকে ৮৮ দশমিক ৭৭ ভাগ এবং আয়কর খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৯০ দশমিক ৬০ ভাগ।
উল্লেখ্য, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে এনবিআর এক সূত্র জানায়, ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে কাস্টমস খাতে। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ। এরপরই রয়েছে আয়কর খাত। প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। কাস্টমস খাতে প্রবৃদ্ধি হওয়ার মূল কারণ অর্থবছরের ছয় মাসে দেশে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়েছে। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫৪ শতাংশ। ফলে আমদানি খাত থেকে আমরা প্রচুর শুল্ক পেয়েছি। আশা করি অর্থবছরে বাকি ছয় মাসেও এ খাত থেকে ভালো রাজস্ব আদায় হবে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও এবার বছর শেষে মোট রাজস্ব আদায় তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
এ দিকে এনবিআরসহ বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে টার্গেট দেয়া হয় এই লক্ষ্যমাত্রা কোনো বছর আদায় করা সম্ভব হয় না। এমনকি রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও আদায় করা যায় না। যেমনÑ ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়, তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে তিন লাখ ৪৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু বছর শেষে তাও আদায় করা সম্ভব হয়নি। সে বছর রাজস্ব আদায় হয়েছিল মাত্র দুই লাখ ৬৫ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। একইভাবে ২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হলেও পরে তা সংশোধন করে তিন লাখ ৫১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। বছর শেষে সেটিও আদায় করা সম্ভব হয়নি।
একইভাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর কর্তৃক রাজস্ব আদায়ের টার্গেট দেয়া ছিল দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। কিন্তু বছরের মাঝামাঝি সময় এসে দেখা যায় কোনোভাবেই এই টার্গেট অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে না। ফলে টার্গেট থেকে ১৬ হাজার ২১০ কোটি টাকা কাটছাঁট করে সংশোধিত আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ধারে-কাছেও যাওয়া সম্ভব হয়নি।
অর্থবিভাগের এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এনবিআর খাতে রাজস্ব আদায়ের প্রকৃত পরিসংখ্যান হচ্ছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা; যা কি না সংশোধিত রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৪ হাজার ৮১ কোটি টাকা কম। এবং মূল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হাজার ২৮২ কোটি টাকা কম।
এর আগের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর অংশে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া ছিল দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে দুই লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু সেই বছরও এনবিআর সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রকৃত রাজস্ব আদায় করেছে এক লাখ ৯৬ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা; যা কি না সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা কম।


আরো সংবাদ



premium cement