১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাষ্ট্রপতির সাথে আজ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আ’লীগের সংলাপ

-

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে সংলাপে অংশ নিতে বঙ্গভবনে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আজ সোমবার বিকেল ৪টায় এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সংলাপে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেনÑ দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান। সূত্র বলছে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সংলাপে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আমলা, সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীসহ সরকার ও দলের আস্থাভাজন ৮-১০ জনের একটি তালিকা রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেয়া হতে পারে। এ ছাড়াও পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করার সম্ভাবনা রয়েছে।
কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। এর আগেই নতুন নির্বাচন গঠনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তারই অংশ হিসেবে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্য নিয়ে গত ২০ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি। শুরুর দিনেই সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) সংলাপে অংশগ্রহণ করে। এরপর ধারাবাহিকভাবে বেশ কিছু দল সংলাপে অংশ নিলেও মাঠের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবি, জেএসডিসহ ছয়টি রাজনৈতিক দল বর্জন করে। বর্জন করা দলগুলোর দাবি, এ সংলাপ অর্থহীন। সংলাপে সরকার ও সরকারি দলের ইচ্ছের প্রতিফলনই ঘটে। অন্যান্য দলের সাথে পরামর্শ নেয়া হলেও সেগুলো বাস্তবায়নে কোনো প্রতিফলন ঘটে না। ফলে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হলে স্থায়ীভাবে আগেই নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা জরুরি। তবে ইসি পুনর্গঠনে সংবিধানের ১১৮-এর (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির ইচ্ছার ওপরই আস্থা রাখছে ক্ষমতাসীনরা। সংবিধানের ৪৮(ত) অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, ইসি গঠনের জন্য যে সময় আছে, তা আইন প্রণয়ন ও নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য যথেষ্ট নয়। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির সংলাপের মাধ্যমে গঠিত সার্চ কমিটিই যথোপযুক্ত। যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আগে কোনো সরকারের আমলে আইন তৈরি হয়নি। তাই সংবিধানের আলোকে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এবার নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইনের বিষয়টি প্রস্তাব করা যেতে পারে মাত্র।
এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির ওই সংলাপে বিএনপিসহ আমন্ত্রিত সব রাজনৈতিক দলই অংশগ্রহণ করে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত সংলাপের মাধ্যমে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। যদিও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে বিরোধী দলগুলোর ঘোর আপত্তি রয়েছে। অবশ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সার্চ কমিটির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। ওই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ চলমান রয়েছে। স্টেকহোল্ডার হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংলাপে অংশ নেবে। একটি অর্থবহ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে শক্তিশালী কমিশন গঠনে আওয়ামী লীগের মতামত ও প্রস্তাবনা সংলাপে উপস্থাপন করা হবে। আমরা মনে করি, পারস্পরিক আলোচনা যেকোনো জটিল সমস্যা সমাধানের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। তিনি আরো বলেন, সঙ্ঘাত, সহিংসতা, জনমতবিরোধী তৎপরতা গণতন্ত্র এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অন্য দিকে আলাপ-আলোচনা, সংলাপ, পরমতসহিষ্ণুতা গণতন্ত্র বিকাশের পথকে কুসুমিত করে। যারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধারণ করে নাÑ তারা রাজনৈতিক সৌজন্যবোধ ও প্রচলিত গণতান্ত্রিক রীতিনীতিতে শ্রদ্ধাশীল নয়; তারা সংলাপে আস্থা রাখে না। বরং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নস্যাৎ করতে চায়।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য লে. কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান নয়া দিগন্তকে বলেন, অতীতে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে ২-৩টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি যে সংলাপের আয়োজন করেছেন তার ওপর আমাদের বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি যথোপযুক্ত। তিনি বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে আসা নাম থেকে ৮-১০টি নাম সিলেকশন করা হয়। এর মধ্যে থেকে পাঁচজনকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশনই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বলেন, সময় কম থাকার কারণে আইন প্রণয়ন করা এবার সম্ভব হবে না। তবে পরেরবার নির্বাচন কমিশন আইন গঠনের জন্য আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement