২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য খুন ঢাবির শিক্ষক সাইদা গাফফার

গ্রেফতারকৃত আনারুল ৩ দিনের রিমান্ডে
-

নতুন বাড়িতে ওঠা হলো না ঢাবির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক সাইদা গাফফারের। মাত্র ১০ হাজার টাকার লোভ সামলাতে না পেরে তাকে খুন করেছে নিজ বাড়ির নির্মাণশ্রমিক আনারুল ইসলাম। এ খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আনারুল ইসলামকে (২৫) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শনিবার বিকেলে গাজীপুরের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী পাভেল সুইট রিমান্ড মঞ্জুরের এই আদেশ দেন।
গ্রেফতারকৃত আনারুল ইসলাম (২৫) গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর থানার বুর্জুগ জামালপুর গ্রামের আনসার আলীর ছেলে। সে গাজীপুরের কাশিমপুর থানাধীন দক্ষিণ পাইনশাইল এলাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবাসন প্রকল্পের অধ্যাপক সাইদা গাফফারের নির্মাণাধীন বাড়ির রাজমিস্ত্রির হেলপার হিসেবে কাজ করত।
জিএমপির সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) ফাহিম আসজাদ জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাইদা গাফফার (৭১) নিখোঁজের তিন দিন পর শুক্রবার তার লাশ গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন দক্ষিণ পাইনশাইল এলাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবাসন প্রকল্পের একটি ঝোপের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়। অধ্যাপক সাইদা গাফফারকে হত্যার অভিযোগে নিহতের ছেলে সাউদ ইফখার বিন জহির ওই থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় অধ্যাপক সাইদা গাফফারের নির্মাণাধীন বাড়ির রাজমিস্ত্রির হেলপার আনারুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে শনিবার আদালতে পাঠান তদন্ত কর্মকর্তা কাশিমপুর থানার এসআই দীপঙ্কর রায়।
শুনানি শেষে আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই রিমান্ড সাত কর্মদিবসের মধ্যে কার্যকর করার জন্য আদেশ দেন আদালতের বিচারক। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবারই পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
নিহতের ছেলে সাউদ ইফখার বিন জহির ও স্বজনরা জানান, শুক্রবার গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অধ্যাপক সাইদা গাফফারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। রাতে বাদ এশা রাজধানীর উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের বায়তুন নূর জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়।
তারা জানান, ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন অধ্যাপক সাইদা গাফফার। নিহত সাইদা গাফফার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মৃত কিবরিয়া উল খালেকের স্ত্রী। তার তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পানিশাইল এলাকার মোশারফ হোসেন মৃধার বাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকতেন সাইদা গাফফার। ভাড়া বাসায় থেকে তিনি একই এলাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আবাসন প্রকল্পের ভেতরে বাড়ি নির্মাণ করছিলেন। নির্মাণকাজ শেষে আগামী ৩০ জানুয়ারি ওই বাড়িতে ওঠার কথা ছিল তার।
জিএমপির কাশিমপুর থানার ওসি মাহবুবে খোদা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাইদা গাফফার (৭১) নিখোঁজের ঘটনায় তার নির্মাণাধীন বাড়ির শ্রমিক আনারুল ইসলামকে গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর থেকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে অধ্যাপক সাইদা গাফফারকে হত্যার কথা স্বীকার করে আনারুল।
তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিখোঁজের তিন দিন পর শুক্রবার ওই বাড়ির আনুমানিক ২০০ গজ দূরে একটি ঝোপের ভেতর থেকে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় অধ্যাপক সাইদার লাশ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতের কাছ থেকে নিহতের ব্যবহৃত দু’টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আনারুল জানায়, গত মঙ্গলবার নির্মাণাধীন বাড়ির কাজ পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যার পর ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন অধ্যাপক সাইদা গাফফার। কিছু দুর যাওয়ার পর তার কাছে কিছু টাকা চায় আনারুল। এ সময় অধ্যাপক সাইদা গাফফারের হাতে ১০ হাজার টাকা দেখতে পায় সে। ওই টাকার লোভ সামলাতে না পেরে তা ছিনিয়ে নেয়ার জন্য পেছন থেকে অধ্যাপক সাইদা গাফফারের মুখ চেপে ধরে আনারুল।
নিজেকে ছাড়ানোর জন্য উপায়ান্তর না পেয়ে আনারুলের ডান হাতে কামড় দেন সাইদা গাফফার। এ সময় আনারুল গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে সাইদা গাফফারকে হত্যা করে। পরে নিহতের হাত থেকে টাকাসহ মোবাইল দু’টি ছিনিয়ে নেয় সে। নিহতের লাশ পাশের ঝোপের ভেতর লুকিয়ে রেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় আনারুল।
এ দিকে ঘটনার রাতে নিহতের ছোট মেয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী মেয়ে হেমেল অধ্যাপক সাইদা গাফফারের ম্যাসেঞ্জারে মেসেজ দেন। ওই মেসেজ সিন না হওয়ায় পরদিন সকালে মায়ের মোবাইলে ফোন দিয়ে কোনো সাড়া পাননি হেমেল। অপর দিকে নির্মাণাধীন বাড়ির ঠিকাদার আনোয়ার অধ্যাপক সাইদা গাফফার নিখোঁজের বিষয়টি জানায় নিহতের ভাইকে। পরে তারা অধ্যাপক সাইদা গাফফারের ভাড়া বাসায় গিয়ে তার খোঁজ পাননি। এ সময় বাসার দরজা খোলা দেখতে পান তারা।
খবর পেয়ে অধ্যাপক সাইদার ছেলে ও মেয়ে সাহিদা আফরিন রাতেই কাশিমপুরে এসে মাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান না পেয়ে তার মেয়ে সাহিদা আফরিন বুধবার কাশিমপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন।
জিএমপির কাশিমপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শেখ মিজানুর রহমান জানান, সাধারণ ডায়রি করার পর নির্মাণাধীন বাড়ির প্লটে গিয়ে খোঁজখবর নেয়া হয়। তদন্তের নানা তথ্যের ভিত্তিতে ওই প্লটে কর্মরত রাজমিস্ত্রির জোগালি আনারুলকে গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর থেকে বৃহস্পতিবার রাতে আটক করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার অধ্যাপক সাইদা গাফফারের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সাউদ ইফখার বিন জহির থানায় মামলা দায়ের করেন।


আরো সংবাদ



premium cement
মধুখালীর ঘটনায় সঠিক তদন্ত দাবি হেফাজতের ফর্মে ফিরলেন শান্ত জামায়াতের ৫ নেতাকর্মীকে পুলিশে সোপর্দ যুবলীগ কর্মীদের, নিন্দা গোলাম পরওয়ারের চায়ের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে স্বর্ণালঙ্কার চুরি ঈশ্বরগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার ফারজানাকে সংবর্ধনা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন' তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের মোদির মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু নেতাকে বহিষ্কার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নতুন কনসাল জেনারেল সেহেলী সাবরীন চান্দিনায় পানিতে ডুবে একই পরিবারের দুই শিশু মৃত্যু কেএনএফ সম্পৃক্ততা : গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতা সম্পর্কে যা জানা গেছে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ

সকল