১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তলানিতে ২৮ ব্যাংকের সুদহার : বঞ্চিত হচ্ছেন আমানতকারীরা

- নয়া দিগন্ত

ব্যাংকে আমানত রেখে গ্রাহকরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন এ জন্য আমানতের ন্যূনতম সুদহার বেঁধে দেয়া হয়। বলা হয়েছিল তিন মাস মেয়াদি ও তদূর্ধ্ব আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির নিচে নামবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সামগ্রিক আমানতের গড় সুদহার মূল্যস্ফীতি তো দূরের কথা, ব্যাংক রেটেরই নিচে নেমে গেছে। যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেঁধে দেয়া ন্যূনতম ব্যাংক রেট রয়েছে ৪ শতাংশ, সেখানে গড় সুদহার নেমে গেছে ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশে। এর মধ্যে ২৮ ব্যাংকের গড় সুদহার তলানিতে নেমে গেছে। অন্য দিকে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরে ব্যাংকে রাখা টাকার ক্রয়ক্ষমতা যতটুকু কমছে সে পরিমাণ সুদও পাচ্ছেন না আমানতকারী। এতে লোকসানে পড়ছেন তারা। এর উপরে এক্সসাইজ ডিউটি (আবগারি শুল্ক) ও অন্যান্য চার্জের খড়গ তো আছেই। এমনি পরিস্থিতিতে সাধারণ গ্রাহকের আমানত পুঁজিবাজারসহ ঝুঁকিপূর্ণ খাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, মূল্যস্ফীতির নিচে নেমে যাওয়ায় প্রকৃতপক্ষে আমানতকারীরা ব্যাংকে অর্থ রেখে মূলধন হারাচ্ছেন। তারা বাড়তি মুনাফার আশায় ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করলে অর্থনীতির জন্য মোটেও সুখকর হবে না।

ব্যাংকাররা জানান, করোনার প্রভাবে ব্যাংকগুলো নতুন কোনো বিনিয়োগে যাচ্ছে না। যেটুকু বিনিয়োগ করা হচ্ছে তা প্রণোদনা কর্মসূচির আওতার মধ্যেই সীমিত রাখছে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা শিথিলতার কারণে গত প্রায় দুই বছর ব্যাংকগুলো ঋণও আদায় করতে পারেনি। অপর দিকে বাড়তি মুনাফা অর্জনের চাপ রয়েছে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপর। বাধ্য হয়ে পরিচালন ব্যয় কমিয়ে বেশি মুনাফা অর্জনের জন্য আমানতকারীদের ওপরই হাত দিচ্ছে বেশির ভাগ ব্যাংক। নভেম্বর শেষে আমানতের গড় সুদের হার ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশে নেমে এসেছে। দেশে আর কখনো আমানতের সুদহার এত নিচে নামেনি। গত বছরের একই সময়ে সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। যেখানে মূল্যস্ফীতির হার (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) গত নভেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর গড়ে ছিল ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমাতেই মূলত আমানতের সুদহার কমিয়ে দেয়া হচ্ছে।

সামগ্রিক পরিস্থিতির বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমানতের সুদের হার শুধু নিচে নেমেছে তাই নয়, মূল্যস্ফীতি থেকেও নিচে নেমে গেছে, যা খুবই বিপজ্জনক। এতে আমানতকারীরা আমানত রাখার ক্ষেত্রে বিমুখ হবেন, যা ব্যাংকিং খাতের জন্য ভালো নয়। আর মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করে পুঁজি হারালে পুরো অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমানতের সুদের হার অনেক কম হলেও তাদের ওখানে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চলে। অর্থনীতি সচল রাখতে বিভিন্ন পথ (টুলস) তারা ব্যবহার করে। কিন্তু আমাদের এখানে সে ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে এখানে আমানতের সুদের হার কমে গেলে তাতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। এ পরিস্থিতির উন্নতি করা না গেলে মানুষ বাড়িঘর কেনার মতো জায়গায় বিনিয়োগ করবে কেউ ব্যাংকে আমানত রাখবে না। এ জন্য নতুন নতুন বিনিয়োগের জায়গা খুঁজে বের করার পরামর্শ তাদের।

প্রসঙ্গত, করোনার প্রভাবে গত প্রায় দুই বছর যাবৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা শিথিলের কারণে ব্যাংকগুলোতে ঋণ আদায়ে ভাটা পড়ে গেছে। নীতিমালায় বলা হয়েছিল, কোনো গ্রাহক ঋণ পরিশোধ না করলে তাকে খেলাপি করা যাবে না। এ সুযোগে ব্যাংকের ঋণ আদায়ে বড় ধরনের ভাটা পড়ে। নীতিমালার শিথিলতা চলতি জানুয়ারি থেকে উঠে গেলেও ঋণ আদায় পরিস্থিতি তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না। আবার করোনার প্রভাবে ব্যাংকগুলো নতুন কোনো বিনিয়োগে যাচ্ছে না। যেটুকু বিনিয়োগ করা হচ্ছে তার বেশির ভাগই বিদ্যমান উদ্যোক্তাদের মাঝে চলতি মূলধনের জোগান দেয়া। এতে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ সুযোগেই আমানতের সুদহার কমিয়ে দেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরের গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণশ্রমিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান

সকল