২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টানা ২ মাস হাসপাতাল বেডে খালেদা জিয়া

-

হাসপাতালের বেডে টানা দুই মাস পার করলেন লিভার সিরোসিসসহ বহুমুখী রোগে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার শারীরিক অবস্থার বিশেষ কোনো উন্নতি না হলেও চিকিৎসকদের কাছে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, লিভারে রক্তক্ষরণ সপ্তাহখানেকেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। আগে যেখানে তিনি শুধুই তরল খাবার নিতে পারতেন, সেখানে এখন তাকে নরম খাবার দেয়া হচ্ছে।

১ মাস ২৭ দিন পর গত ৯ জানুয়ারি বেগম জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউ থেকে কেবিনে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তিনি। তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও যেকোনো সময় লিভারে নতুন উৎস দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যদের। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা: এ জে এম জাহিদ হোসেন বলেন, সিসিইউ থেকে কেবিনে নেয়া হলেও মেডিক্যাল বোর্ড সার্বক্ষণিক তাকে মনিটরিংয়ে রেখেছে। যেকোনো সময় অবস্থার পরিবর্তনও হতে পারে। তার প্রয়োজন বিদেশে উন্নত চিকিৎসা।

হাসপাতালে ভর্তির দুই দিন আগে গত ১১ নভেম্বর বোনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার। এই আবেদনে আইনি মতামতের জন্য পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে। ২৩ নভেম্বর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দেখা করেন আইনমন্ত্রীর সঙ্গে। এরপর মন্ত্রী বলেন, আইন এবং নজির খুঁজছেন তিনি। অবশেষে ২৮ ডিসেম্বর তিনি আইনি মতামত পাঠান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ওই দিন বিকেলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বরাত দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার একটি চিঠি দিয়েছেন। আমরা দেখেছি এবং আইনমন্ত্রী একটি মতামত দিয়েছেন, সেটা আমরা পর্যালোচনা করছি। বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার তার আইনতগত কোনো সুযোগ নেই।

এ ছাড়া সরকার খালেদা জিয়ার জীবননাশের ষড়যন্ত্র করছে বলে শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছে বিএনপি।

গত ১৩ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর লিভারে কয়েক দফা রক্তক্ষরণে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়েন খালেদা জিয়া। রক্তক্ষরণের লক্ষণ দেখলেই ইনজেকশন আর ওষুধপত্র দিয়ে তাৎক্ষণিক তা বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন চিকিৎসকরা। তবে পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে ২৪ নভেম্বর চিকিৎসকরা তার অ্যান্ডোস্কপি ও কোলনোস্কোপি করেন। ২৮ নভেম্বর রাতে সংবাদ সম্মেলনে মেডিক্যাল বোর্ড জানায়, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। এরপর ২৭ ডিসেম্বর ক্যাপসুল অ্যান্ডোস্কপি পরীক্ষায় তার ক্ষুদ্রান্তের নিচে রক্তক্ষরণের উৎস দেখতে পান চিকিৎসকরা। পরে ক্ষুদ্রান্তের নিচে রক্তক্ষরণের উৎস বন্ধ করতে ব্যান্ড লাইগেশন করা হয়। ফলে সাময়িকভাবে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় খালেদার।

মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা জানান, স্বাস্থ্যের প্যারামিটারগুলো এখনো ওঠানামা করছে। মাঝে মাঝে হিমোগ্লোবিন কমে যাচ্ছে। এ কারণে খালেদা জিয়ার শরীরে খনিজে অসমতা দেখা দিচ্ছে। ফলে কথাবার্তায় তিনি সাবলীল নন। এভাবে স্বাস্থ্যের প্যারামিটারগুলো নিচে নামা অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যাবে।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, গত ৯ জানুয়ারি কেবিনে আনার পর অনেকটা নিরিবিলি সময় কাটছে খালেদা জিয়ার। ডাক্তার-নার্সদের সঙ্গে তেমন একটা কথা বলেন না তিনি। দিনে দুইবার খাবার নিয়ে শাশুড়িকে দেখতে আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। এ সময় সিঁথি শাশুড়ির যতœ নেন, নিজ হাতে খাবার খাওয়ান। প্রথমে তরল খাবার ছাড়া মুখে কিছুই খেতে না পারলেও এখন নরম খাবার খেতে পারছেন তিনি। তবে তার শরীর অত্যন্ত দুর্বল।

লিভারে রক্তক্ষরণ হওয়ায় গত ১৩ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে। এরপর তার লিভার সিরোসিস শনাক্ত হয়। বেগম জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানি এই তিনটি দেশের যেকোনো একটিতে নেয়ার পরামর্শ রয়েছে মেডিক্যাল বোর্ডের।


আরো সংবাদ



premium cement