২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ওমিক্রন অতিসংক্রামক ভয়ঙ্কর নয়, থাকতে হবে সতর্ক

সাক্ষাৎকারে ডা: তৌহিদ হোসাইন
-

ডেল্টা, ডেল্টা প্লাসের পর করোনাভাইরাসের নতুন রূপ ওমিক্রন উদ্বেগ তৈরি করেছে বিশ্বজুড়ে। দেশে দেশে চলছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম চিহ্নিত এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে আলোচনা গবেষণা চলছে। প্রাথমিকভাবে এবং অনেকটা অসমর্থিতভাবে এটাকে অধিক সংক্রামক, অ্যান্টিবডি প্রতিরোধকারী এবং রি-ইনফেকশন সৃষ্টিকারী মনে করলেও অন্য অনেকে মারাত্মক রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা কম থাকার কারণে ভয়ঙ্কর নয় বলছেন। এমতাবস্থায় এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারে সতর্ক থেকে ভবিষ্যতে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে টিকাকার্যক্রম আরো জোরদারের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজির সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন।
প্রশ্ন : ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অনেকটাই দুর্বল হয়ে আসার পর কিভাবে নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের এসে গেল?
ডা: তৌহিদ হোসাইন : দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনের সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। মিউটেশন ভাইরাসের জীবনচক্রের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। টিকা প্রদানে ধীরগতিও এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের আবির্ভাবের একটি অন্যতম কারণ। সাউথ আফ্রিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং করোনা টিকা বিষয়ক সাউথ আফ্রিকান মিনিস্টারিয়াল কমিটির সদস্য ডা: অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি জানতে পারেন যে, সাতজন এমন করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন যাদের মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গ থেকে আলাদা। তাদের কারো মারাত্মক উপসর্গ নেই, স্বাদ নষ্ট হয়নি, অক্সিজেন সেচুরেশন কমেনি এবং এমনকি কোনো ধরনের শ্বাস কষ্টও হয়নি। তাদের ছিল মৃদু উপসর্গ, ক্লান্তি ভাব, সামান্য জ্বর, হালকা কাশি, গলাব্যথা এবং বয়স ছিল ৪০ এর নিচে। আক্রান্তদের অর্ধেকেরই টিকা নেয়া ছিল না। অল্প কিছুদিন হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে তারা বাড়ি চলে যাওয়ার মতো হয়ে যায়। কারো অবস্থাই খারাপ আকার ধারণ করেনি কিংবা মারা যায়নি। এরপর একই উপসর্গ নিয়ে আরো ৩-৪ জন ভর্তি হলো। কিন্তু এসব রোগীর উপসর্গ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে আলাদা হওয়ার কারণে তিনি জিনোম সিকুয়েন্স করলেন আর পেয়ে গেলেন নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন।
প্রশ্ন : আপনি আতঙ্ক না হয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন, কিভাবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ?
ডা: তৌহিদ হোসাইন : স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে টিকা-কার্যক্রম আরো জোরদার করা। করোনাভাইরাস হয়তো নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হয়ে আমাদের দীর্ঘদিন কষ্ট দেবে। সে জন্য আমাদেরও উচিত হবে নতুন ভ্যাকসিন আবিষ্কারে মনোযোগী হওয়া।
প্রশ্ন : ডেল্টা ও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এক সাথে চলবে?
ডা: তৌহিদ হোসাইন : সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক ও যুক্তি সঙ্গত কারণেই একটি থাকলে আরেকটি থাকারই কথা না। বিজ্ঞানীরা ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে যা জানতে পেরেছেন তা হলোÑ এর সংক্রমণক্ষমতা, রিইনফেকশন করার ক্ষমতা এবং অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দেয়ার ক্ষমতা ডেল্টার চেয়ে বেশি। কিন্তু রোগ মারাত্মক করার ক্ষমতা যে কারণে আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় কিংবা মৃত্যুর সংখা বেড়ে যায়, রোগনির্ণয়ে জটিলতা তৈরি করার ক্ষমতা এবং চিকিৎসায় অন্তরায় সৃষ্টি করার ক্ষমতা ওমিক্রনে ডেল্টা বা অন্য ভ্যারিয়েন্টর তুলনায় কম।
সংক্রমণ বেশি হলেও যদি মারাত্মক না হয়, শনাক্ত ও চিকিৎসা করতে যদি অসুবিধা না হয়, কেউ মারা না যায়, নতুন টিকা আবিষ্কার করে ভাইরাস মেরে ফেলার ব্যবস্থা করলে ঝুঁকি সামাল দেয়া গেল। তবে বারবার ইনফেকশনের ঝুঁকি ভাইরাসের বর্তমান রূপ বদল করে নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরির সুযোগ করে দেবে। মিউটেশন বেশি হলেই যে খারাপ হবে এমন কোনো কথা নেই। তবে এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা এর মধ্যে রিইনফেকশন ও দ্রুত নিজকে বদলে ফেলার মতো যোগ্যতা অর্জন করেছে বলে ধারণা করছেন। সাধারণত সিস্টেমে কোনো ব্যক্তি একটা নির্দিষ্ট ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন ওই ব্যক্তি আক্রান্ত অবস্থায় দ্বিতীয় আরেকটি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন না। ওমিক্রন যদি ডেল্টার চেয়ে বেশি মানুষকে আক্রান্ত করে, তাহলে অপেক্ষাকৃত বেশি ক্ষতিকর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখা কমে যাবে। ফলে মারাত্মক আক্রান্ত ও মৃত্যুহার কমে যাবে। আমাদের দেশে এখন শীতকাল। এই সময়ে আমাদের মতো দেশে অন্য ভাইরাস যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্বারা মৌসুমি ফ্লু হয় বেশি। সে জন্য দেখা যাবে ওই একই কারণে মৌসুমি ফ্লুতে আক্রান্ত ব্যক্তি করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার চান্স খুব কম। ঠিক এই কারণেই গত বছর শীতকালে সারা বিশ্ব যখন করোনাভাইরাসের আক্রমণে লণ্ডভণ্ড, তখনো আমাদের দেশে আক্রান্তের হার কম ছিল।
প্রশ্ন : করোনারভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা কিভাবে তৈরি করে ?
ডা: তৌহিদ হোসাইন : নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট ফরম্যাশনে টিকার ফর্মুলা নতুন করে সাজাতে হয়। যেমন ইতোমধ্যেই ফাইজার ও মডার্না জানিয়েছে, ওমিক্রনের বিরুদ্ধে তারা টিকার ফর্মুলা নতুন করে সাজানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা জানি যে, একটা করোনাভাইরাসে গড়ে ৭৮টি স্পাইক প্রোটিন থাকে। প্রতিটা স্পাইক প্রোটিন আবার গড়ে ১২৭৩টি এমাইনো এসিড দিয়ে তৈরি। প্রকৃতিতে আছে ২০ ধরনের এমাইনোএসিড। এই ২০টি এমাইনো এসিড স্পাইক প্রোটিনের ১২৭৩টি পয়েন্টে বসে করোনার আরএনএ এর মধ্যে থাকা জেনেটিক কোডের নির্দেশনা অনুযায়ী। এই এমাইনো এসিডগুলো অভিযোজন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যখন তাদের স্থান রদবদল করে তখনই হয় মিউটেশন।
টিকা প্রস্তুতকারকরা টিকা প্রস্তুত করার সময় তাদের লক্ষ্যই থাকে ওই ১২৭৩টি এমাইনো এসিড। অর্থাৎ স্পাইক প্রোটিনের এই ১২৭৩টি এমাইনো এসিডের যেকোনো পরিবর্তন যেন রুখে দিতে পারে সেভাবেই ভ্যাকসিন তৈরি করে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম সুবিধা হলো এর কোনো সেরোটাইপ নাই, আছে ভ্যারিয়েন্ট। ফলে একটা ভাইরাসের যতই ভ্যারিয়েন্টের জন্ম হোক এক ধরনের ভ্যাকসিনই সব ধরনের করোনা ভ্যারিয়েন্টের ওপর কিছু না কিছু কাজ করে। কারণ ভ্যাকসিন উৎপাদনের সময় বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য থাকে যেন স্পাইক প্রোটিনের যে এমাইনো এসিডেই মিউটেশন হোক তার বিরুদ্ধে যেন ভ্যাকসিন কার্যকর হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
শ্রমজীবি মানুষের মাঝে ক্যাপ, পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেছে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পশ্চিম নোয়াখালীতে হিট স্ট্রোকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় স্ত্রীর ২৭ স্থানে স্বামীর ধারালো অস্ত্রের আঘাত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ১২ উপজেলায় মানববন্ধন রোববারই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবার ক্লাসসহ ৪ নির্দেশনা ময়মনসিংহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ঈদ পুনর্মিলনী বাস্তবায়নের আহ্বান ৩ গণকবরে ৩৯২ লাশ, ২০ ফিলিস্তিনিকে জীবন্ত কবর দিয়েছে ইসরাইল! মৌলভীবাজারে বিএনপি ও যুবদল নেতাসহ ১৪ জন কারাগারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কারীদের চিহ্নিতকরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ১২ দলীয় জোটের কলিং ভিসায় প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরার সময় মারা গেল মালয়েশিয়া প্রবাসী নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিবকে আটকের অভিযোগ

সকল