২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ বাস্তবায়নে সেনা সদস্যরা হবেন অগ্রবাহিনী : প্রধানমন্ত্রী

-

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ‘অগ্রসেনা’ হিসেবে কাজ করে যাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ’৪১-এর প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসেনা হিসেবে কাজ করে যাবেন।’
গতকাল সকালে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২১ (এনডিসি)’ এবং ‘আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স-২০২১ (এএফডব্লিউসি )’ এর গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনিতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিরপুর ক্যান্টনমেন্টের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে সংযুক্ত হয়ে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। তিন বাহিনী প্রধান এবং এনডিসি কমানড্যান্ট অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগে সদা প্রস্তুত থাকেন। তারা বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের এইটুকু বলবÑ আমাদের ’৪১-এর যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন তারই অগ্রসেনা হিসেবে আপনারা কাজ করে যাবেন, আমি এটা আশা করি। আর ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তি হবে, সেটাও আমাদের মাথায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আমাদের সরকারের উদ্দেশ্য ছিল দেশ-বিদেশের উচ্চপর্যায়ের সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাদের জন্য একটি শীর্ষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা। আজ আমি সন্তুষ্টির সাথে বলতে পারি যে, ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। দেশ-বিদেশের উচ্চপদের সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত করে তোলার পাশাপাশি বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোর সশস্ত্র বাহিনীর সাথে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত ২৪টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ৩৮৩ জন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এনডিসিতে উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। আমি এনডিসির কমান্ড্যান্ট এবং তার টিমকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। নিকট ভবিষ্যতে বিরাজিত সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠার জন্য তার সরকার একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি, এই কোর্স দু’টিতে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সামরিক সদস্যগণের সাথে আমাদের সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তা সর্বোপরি আমাদের প্রকৃতি ও মানুষের সাথে যে নিবিড় মিথস্ক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে তা ভবিষ্যতে অটুট থাকবে। তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথাও আবার স্মরণ করিয়ে দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাসহ শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করেছে। এ ছাড়াও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার যেসব প্রতিষ্ঠান, যেখানে বারবার ক্যু হয়েছেÑ সেখানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং যুগের সাথে তাল মেলাতে এর আধুনিকায়ন তার লক্ষ্য ছিল। তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং’ এবং ‘আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করি। আমরাই প্রথম ২০০০ সালে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীতে নারী অফিসার নিয়োগ করি। পরপর তিনবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ায় একটু সময়ও পেয়েছি, দেশের সেবা করার। প্রশিক্ষিত ও যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করছি। ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি। তিনি বলেন, আমরা অর্থনৈতিক অগ্রগতির মানদণ্ডে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছি। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছি এবং মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি। আর্থসামাজিক সব সূচকে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছি। করোনা না এলে আমরা আরো এগিয়ে যেতে পারতাম। ’৭৫-এর পর দেশে সামরিক জান্তার হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির গোড়াপত্তনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯ বার সামরিক বাহিনীতে ক্যু হয়েছে। বহু সামরিক অফিসার জোয়ান, সৈনিক, সাধারণ মানুষকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। অনেক পরিবার নিহত আপনজনের লাশের সন্ধান পায়নি। এমনই একটা অস্থিরতার মধ্যদিয়ে ২১টি বছর কেটেছে। এরপর ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুণপ্রতিষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, এ বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩১ জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ছয়জন কমোডর এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ছয়জন এয়ার কমোডর, সিভিল সার্ভিসের একজন অতিরিক্ত সচিব, ১৪ জন যুগ্ম সচিব, বাংলাদেশ পুলিশের দু’জন ডিআইডি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ডিজিসহ বাংলাদেশের সর্বমোট ৬১ জন প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তা ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স-২০১১ এ অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়াও আমাদের বন্ধুপ্রতিম ১৩টি দেশের ২৭ জন বিদেশী প্রশিক্ষণার্থী এই ফোর্সে অংশগ্রহণ করেন। আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স-২০২১ এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিনজন কর্নেল, ৩৪ জন লেফটেন্যান্ট কর্নেল, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তিনজন ক্যাপ্টেন ও ছয়জন কমান্ডার, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাতজন গ্রুপ ক্যাপ্টেন ও একজন উইং কমান্ডার অংশগ্রহণ করেন।
এনডিসি-ডিএসসিএসসি-যৌথসভা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ন্যাশনাল ডিফে›স কলেজ (এনডিসি) এবং ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) পরিচালনা পর্ষদের ১৮তম যৌথ সভায় অংশগ্রহণ করেছেন। গণভবনে অনুষ্ঠিত এই সভায় এনডিসি ও ডিএসসিএসসির চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারেক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং এনডিসি কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল আকবর হোসেইন সভায় যোগ দেন।
বৈঠকে অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন প্রতিরক্ষা সচিব (সিনিয়র) ড. মো: আবু হেনা মোস্তফা কামাল, জনপ্রশাসন সচিব (সিনিয়র) কে এম আলী আজম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সচিব (সিনিয়র) মাহবুব হোসেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব (সিনিয়র) আবদুর রউফ তালুকদার, পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র) মো: মাসুদ বিন মোমেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের (বিইউপি) ভিসি মেজর জেনারেল মো: মোশফিকুর রহমান এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান।
মালদ্বীপ যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী : মালদ্বীপ যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২২ থেকে ২৪ ডিসেম্বর তিনি মালদ্বীপ সফর করবেন। এ বছরের মার্চে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মেদ সলিহ ঢাকা সফর করেন। আবার নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের সাইডলাইনে দুই নেতার বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরটি হচ্ছে ফিরতি সফর। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোকে সব সময় বাংলাদেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সেজন্য মার্চে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে পাঁচটি প্রতিবেশী দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বাংলাদেশ।


আরো সংবাদ



premium cement