২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আসছে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ

বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের আধিক্যে অসময়েও ঝড়
-

গ্রিনহাউজ গ্যাসের আধিক্যের কারণে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়ছে। আর এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ঘটনা ঘটছে। ফলে বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলো কয়েক বছর থেকে বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে। এ কারণে শত শত বছর ধরে ঘটে চলা ঘূর্ণিঝড়ের প্যাটার্নেও পরিবর্তন এসেছে। ঝড় আগের মতো একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা মেনে চলছে না। শত বছর ধরে ডিসেম্বর মাস ঝড়হীন শান্ত মাস হিসেবে পরিচিত থাকলেও চলতি বছর এর ব্যত্যয় ঘটতে যাচ্ছে। আগামী চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে একটি ঝড় বাংলাদেশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
ইতোমধ্যে মধ্য আন্দামান সাগর ও সংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। এই লঘুচাপটি শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদশে নভেম্বর মাসটি লঘুচাপ, নি¤œচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের মাস হিসেবে পরিচিত। চলতি বছর নভেম্বর কমপক্ষে ছয়টি লঘুচাপ সৃষ্টি হলেও তা থেকে একটি ঘূর্ণিঝড়ও সৃষ্টি হয়নি। এর মধ্যে দু’টি লঘুচাপ শক্তিশালী হয়ে নি¤œচাপ আকারেই ভারতীয় উপকূলে উঠে গেছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। ইতিহাসে ভয়াল ভোলা ঝড়, সিডর নভেম্বর মাসেই সংঘটিত হয়। কিন্তু ডিসেম্বর মাস আসার পর কোনো ঝড় হওয়ার অতীত কোনো রেকর্ড নেই বললেই চলে। চলতি মাসে যে ঝড়টি হতে যাচ্ছে এর নাম দেয়া হয়েছে ‘জাওয়াদ’। এটি বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ু সরে যাওয়ার পর প্রথম ঝড়। জাওয়াদ উপকূলে উঠে এলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সুন্দরবন উপকূলের কাছাকাছি দিয়ে স্থলভাগে উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ কানাডার সাসকাচোয়াল ইউনিভার্সিটির গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, গ্রিন হাউজ গ্যাস বৃদ্ধির ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে খুবই দ্রুত গতিতে। এ কারণে বিশ্বব্যাপী জলবায়ুতে পরিবর্তনের প্রমাণ আছে। উল্লেখ্য, জলবায়ুর পরিবর্তনে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়, প্রশান্ত মহাসাগরে টাইফুন আটলান্টিক মহাসাগর ও মেক্সিকো উপসাগরীয় অঞ্চলে হ্যারিকেনের সৃষ্টি হচ্ছে এবং বিজ্ঞানীদের কাছে এর প্রমাণ রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনেই ঝড় হচ্ছে এটা আগের চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট প্রমাণ রেখে যাচ্ছে প্রকৃতিতে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আগে শুধু ওমানের পূর্ব উপকূলেই আঘাত করত। এ বছরই প্রথম আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড় ওমানের উত্তর উপকূলে আঘাত হেনেছে। এ ছাড়া ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে শক্তিশালী কোনো ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরে সংঘটিত হয়নি। অধিকন্তু ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার নজির নেই বললেই চলে কিন্তু সে ঘটনাই ঘটতে যাচ্ছে।’
মোস্তফা কামাল বলেন, ডিসেম্বরের সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি যদি আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল নির্দেশিত পথেই চলে তাহলে এটা ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করতে পারে। সম্ভাব্য এই ঘূর্ণিঝড়টি নজির হয়ে থাকবে আবহাওয়া বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাছে ঘূর্ণিঝড়টির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে।’
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, বঙ্গোপসাগরে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়টির সৃষ্টি নিশ্চিত করেছে আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি যে দশায় রয়েছে তাকে আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হচ্ছে ইনভেস্ট। ভারত মহাসাগরীয় এলাকার দেশগুলো এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়েছে জাওয়াদ। এর নম্বর দেয়া হয়েছে ৯৪ ডব্লিউ। এটি গতকাল বুধবার দুপুর নাগাদ ১২ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৯২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছিল। দুপুর পর্যন্ত সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস অবশ্য বলেছে, মধ্য আন্দামান ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। এটি আরো ঘনীভূত হতে পারে। ৪৮ ঘণ্টা পর বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।’
মোস্তফা কামাল নয়া দিগন্তকে বলেন, সমুদ্রের যে স্থানে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি অবস্থান করছে সেখানে পানির তাপমাত্রা ২৯ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বঙ্গোপসাগরে পানির তাপমাত্রা সাড়ে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকলে তা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য আদর্শ পরিবেশ হিসেবে গণ্য করা হয়। আন্দামান সাগরে সে স্থানে বায়ুর গতিবেগও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আদর্শ অবস্থায় রয়েছে। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জাওয়াদ পূর্ণ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার আশঙ্কা খুবই প্রবল। এই ঘূর্ণিঝড়টি ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ ও উড়িষ্যা রাজ্যের মাঝামাঝি স্থানের উপকূলে পৌঁছার পর উত্তর-পূর্ব দিকে ঘুরে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে যাত্রা করতে পারে এবং বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কার কথাই বলছে আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার।


আরো সংবাদ



premium cement