২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শিক্ষার্থীদের শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

গাড়ি ভাঙচুর করা ছাত্রদের কাজ নয়; করোনার বিস্তার হলে আবারো বন্ধ হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
-

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যানবাহন ভাঙচুর করা তাদের কাজ নয়। অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার সকালে বিজয়ের মাসের প্রথম দিন বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল এবং রাজধানীর ধানমন্ডিতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১২ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক ‘জয়িতা টাওয়ার’ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাঙা এটা ছাত্রদের কাজ নয়, এটা কেউ করবেন না। দয়া করে যার যার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যান, লেখাপড়া করুন। আর যারা দোষী তাদেরকে খুঁজে বের করে অবশ্যই শাস্তি দেয়া হবে, সেটা আমরা করবো। শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে এ গাড়ি ভাঙচুর এবং আগুন দেয়ার ঘটনা যারা ঘটাবে তাদেরকে খুঁজে বের করা হবে, শাস্তি দেয়া হবে। যে গাড়িতে আগুন দেয়া হচ্ছে সে গাড়িতে যদি কেউ মারা যায় বা আগুনে পোড়ে তার জন্য কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। এ কথাও মাথায় রাখতে হবে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িতে পরপর পথচারী নিহত হওয়ার ঘটনা তিনি যথাযথভাবে তদন্ত করে দেখারও নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আমি এটুকুই চাই আমাদের দেশের যে উন্নয়ন আমরা করে দিচ্ছি সেটাকে ধরে রেখে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আজকের শিশুরা আগামী দিনের সোনার বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক হবে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: সায়েদুল ইসলাম বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারপারসন লাকী ইনাম এবং জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খানও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে জাতির পিতার ম্যুরাল এবং ‘জয়িতা টাওয়ার’এর ওপর দু’টি ভিডিও চিত্রও পরিবেশিত হয়।
আজকের শিশুরাই হবে ‘৪১ এর উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের কর্ণধারÑ উল্লেখ করে তাদের লেখাপড়া করা এবং বাবা-মা-অভিভাবকদের আদেশ মান্য করার পাশাপাশি রাস্তাঘাটে চলাচল করতে ট্রাফিক আইন মেনে চলারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, রাস্তাঘাটে চলার সময় সতর্ক থাকতে হবে, ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। নির্দিষ্ট পারাপারের স্থান দিয়ে পার হতে হবে। হঠাৎ দৌড় দেবে আর দুর্ঘটনা ঘটবে, দুর্ঘটনা ঘটলেই রাস্তায় লোক নেমে গাড়ি ভাঙা, গাড়িতে আগুন দেয়া, গাড়ি পোড়ানো এটা কী ধরনের কথা! আমি বলবো, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আর গাড়ি চালকদেরকেও আমি বলবো তাদেরকেও সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে হবে। জনবহুল এই দেশে গাড়ি চালানোর জন্য এ সময় সঠিকভাবে প্রশিক্ষণের উপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন এবং তার সরকার উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশে করোনার বিস্তার বাড়লে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবারো বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেন। তাই বিষয়টি মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের সময়কে কাজে লাগানোর এবং আগামীতে নিজেদেরকে গড়ে তুলে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, এ করোনাভাইরাস কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আমরা ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করেছি, এখন শিক্ষার্থীদেরও দিচ্ছি। বর্তমানে আবার নতুন আরেকটা ঢেউ আসছে। কাজেই এটা মাথায় রাখতে হবে যদি করোনা বিস্তার লাভ করে, তা হলে যেকোনো সময় আবার কিন্তু সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।
সম্প্রতি রাজধানীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি চাপায় নটরডেম কলেজের ছাত্র মৃত্যুর পরদিনই উত্তর সিটি করপোরেশনের আরেকটি ময়লার গাড়ি চাপায় প্রেস কর্মী মারা যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর কী রহস্য? দক্ষিণে মারা গেল, পর দিন উত্তরে মারা গেল, এর কারণটা কী? এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে।’ ময়লার গাড়ি যারা চালায় তাদের গাড়ি চালানোর মতো দক্ষতা আছে কি-না সেটা খতিয়ে দেখতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সরকারের প্রথম মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) এবং ২০০৯ সাল থেকে এই সময় পর্যন্ত শিশু ও নারীদের উন্নয়নে যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন তা-ও সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেন। নিজেদের অধিকার আদায়ে নারীদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে ওঠার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নারীরা যেন সব সময় এটা মনে রাখেন, অধিকার আদায় করে নিতে হবে। নিজেদের কাজ নিজেদেরই করতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলেছে, টানা সপ্তমবারের মতো জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা পেয়েছে তা গর্ব করে বলা যায় উল্লেখ করে তিনি দেশ স্বাধীনের পর সংবিধানে নারীর অধিকার সমুন্নত করে মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দিয়ে যান বলেও জানান।


আরো সংবাদ



premium cement