২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল রাজধানী

যানজটে নাকাল নগরবাসী
-

বাসচাপায় সহপাঠীর মৃত্যুর জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার এবং নিরাপদ সড়কসহ ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গতকাল উত্তাল ছিল রাজধানী ঢাকা। ব্যস্ততম মতিঝিল, ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নীলক্ষেত রামপুরাসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তারা। এ সময় গোটা রাজধানী জুড়ে দেখা দেয় তীব্র যানজট। প্রায় অচল হয়ে পড়ে বেশির ভাগ সড়ক। পরে বিকেলে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে রাস্তা ছাড়ে শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন দাবিতে গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীতে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। দিন যত যাচ্ছে তাদের আন্দোলন তীব্র হচ্ছে। তারপরও সড়কে বেপরোয়া গাড়িচাপায় শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার ঘটনা থামছে না।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর বাসে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেয়া বন্ধ করে দেন পরিবহন মালিকরা। এরপরই মূলত শুরু হয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এর মধ্যে গত সপ্তাহে গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর আন্দোলন আরো তীব্র আকার ধারণ করে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে তাদের চলমান আন্দোলনের মধ্যেই সোমবার রাতে গ্রিন অনাবিল পরিবহনের একটি বাসের চাপায় রামপুরা বাজারের সামনে প্রাণ হারান আরেক শিক্ষার্থী দুর্জয়। ওই ঘটনার পর রাতে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেন।
আগের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সোমবার রাতের ঘটনা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরো বেগবান করে। যে কারণে মঙ্গলবার সকালেই রাস্তার বিভিন্ন এলাকার সড়কে নেমে পড়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। নানা ধরনের স্লোগান, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে তারা।
রামপুরা এলাকা একরামুন্নেসা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন দুর্জয়ের মৃত্যুর ঘটনায় সকাল ১০টা থেকে ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ইম্পিরিয়াল কলেজ, ন্যাশনাল আইডিয়াল ও রাজধানী আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রগতি সরণিতে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা রামপুরা ব্রিজ এলাকায় সড়কে বসে পড়েন। এতে সড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে সতর্ক অবস্থায় ছিল।
ইম্পিরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার বাপ্পি বলেন, কোনো শিক্ষার্থী মারা গেলেই আমাদের নতুন নতুন আশ্বাস দেয়া হয়। বলা হয় ফুটওভার ব্রিজ করবে। আমরা এখন আর ফুটওভার ব্রিজ চাই না। আমরা হত্যাকারীদের বিচার চাই। চালকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলেই রাস্তায় মৃত্যু কমবে। না হলে চালকরা আইনকে ভয় না পেয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
এ দিকে বেলা ১২টা ৫০ মিনিটের সময় মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে রাস্তায় বন্ধ করে দেয় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল সেন্ট্রাল হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা। এ সময় ওই এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে হয়ে যায়। একই দাবিতে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে সড়ক অবরোধ করেছেন মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর গভর্নমেন্ট কলেজ, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ধানমন্ডি-২৭ রাপা প্লাজার সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। এসময় পুলিশ ও ট্রাফিক সদস্যদের আশপাশে অবস্থান নেয় যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
লালমাটিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিন শামস বলেন, আমাদের জন্য ঢাকার সড়ক মোটেও নিরাপদ নয়। শিক্ষার্থীরা নিয়মিতই মারা যাচ্ছে এই সড়কে। নটর ডেমের শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর গতকাল আরেক এসএসসি শিক্ষার্থী মারা গেল। সুষ্ঠু বিচার ও ব্যবস্থাপনা না থাকায় এমনটি হচ্ছে। সড়ক নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।
একই দাবিতে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর গার্লস কলেজ, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ আশপাশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কে বসে বিক্ষোভ করছে। মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) দুলাল হোসেন বলেন, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আশপাশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করায় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিকেলে আন্দোলন চলবে ঘোষণা দিয়ে অবরোধ শেষ হয়।
রামপুরায় শিক্ষার্থীকে চাপা দেয়া বাসের হেলপার গ্রেফতার : রাজধানীর রামপুরায় অনাবিল বাসের চাপায় একরামুন্নেসা বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মাইনুদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত বাসের হেলপার চাঁন মিয়াকে গ্রেফতার করেছে রথ্যাব। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে র্যাব-৩ এর সদস্যরা রাজধানীর সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হেলপার চান মিয়া র্যাবকে জানায়, অতিরিক্ত গতির কারণে বাসটি তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। তাই প্রথমে মাইনুদ্দিনকে ধাক্কা দেয় বাসটি। ধাক্কার পর ছিটকে পড়ে বাসের নিচেই চাপা পড়ে মারা যায় মাইনুদ্দিন। দুর্ঘটনার পর সে দ্রুত দুর্ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। তার উদ্দেশ্য ছিল ঢাকার বাইরে কোথাও আত্মগোপন করবে।
রথ্যাবের মিডিয়া উইং জানায়, সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর রামপুরায় অনাবিল পরিবহনের একটি বাসের চাপায় একরামুন্নেসা বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মাইনুদ্দিনের নির্মম মৃত্যু হয়। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রথ্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে ও জড়িতদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ঘাতক বাসের হেলপার মো: চান মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়ি শরীয়তপুরের ডামুড্যায়।


আরো সংবাদ



premium cement