ভারতের ওমিক্রন ঝুঁকির তালিকায় বাংলাদেশ
টানা তিন সপ্তাহ শনাক্ত ঊর্ধ্বমুখী!- বিশেষ সংবাদদাতা
- ৩০ নভেম্বর ২০২১, ০২:২৯
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ঘোষিত করোনার উদ্বেগজনক ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ মোকাবেলায় বাংলাদেশসহ ১২টি দেশকে উচ্চ ঝুঁকির তালিকায় রেখেছে ভারত। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো থেকে ভারতে যাওয়া ব্যক্তিদের বিমানবন্দরে করোনার আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এদিকে দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়ছে। এ মারণ ভাইরাসটির নমুনা পরীক্ষায় টানা তিন সপ্তাহ শনাক্ত রোগীর হার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। গত ৮ নভেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত (মহামারীকালীন ৪৫, ৪৬ ও ৪৭তম সপ্তাহ) নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ, ৬ দশমিক ৭ শতাংশ ও ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। এ তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রথম সপ্তাহে করোনার নমুনা পরীক্ষা কিছুটা কম হলেও পরের দুই সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা পরিস্থিতি সংক্রান্ত গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
দেখা গেছে, ৪৬তম সপ্তাহে (৮-১৪ নভেম্বর) এক লাখ ২২ হাজার ১৯০টি নমুনা পরীক্ষা করে এক হাজার ৪৮৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সময় এক হাজার ৬৯০ জন সুস্থ এবং ২৭ জনের মৃত্যু হয়।
৪৭তম সপ্তাহে (১৫-২১ নভেম্বর) এক লাখ ২৮ হাজার সাতটি নমুনা পরীক্ষা করে এক হাজার ৫৮৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সময় এক হাজার ৬৮৩ জন সুস্থ এবং ৩১ জনের মৃত্যু হয়।
সবশেষ ৪৭তম সপ্তাহে (২২-২৮ নভেম্বর) এক লাখ ২৮ হাজার ২৬১টি নমুনা পরীক্ষা করে এক হাজার ৬৯৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সময় দ্ইু হাজার ১১৯ জন সুস্থ এবং ২৫ জনের মৃত্যু হয়।
সারা দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত এক সপ্তাহে আরো ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২২ থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত মারা যাওয়া এই ২৫ জনের মধ্যে পুরুষ ১০ জন (৪০ শতাংশ) এবং নারী ১৫ জন (৬০ শতাংশ)। তাদের মধ্যে একজন ও অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
এ দিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। দুইজনই পুরুষ এবং তারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৭ হাজার ৯৮০ জনে। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ২২৭ জন। এ নিয়ে দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১১ জনে।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় এবং ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
ভারতের ওমিক্রন ঝুঁকির তালিকায় বাংলাদেশ
কূটনৈতিক প্রতিবেদক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ঘোষিত করোনার উদ্বেগজনক ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ মোকাবেলায় বাংলাদেশসহ ১২টি দেশকে উচ্চ ঝুঁকির তালিকায় রেখেছে ভারত। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো থেকে ভারতে যাওয়া ব্যক্তিদের বিমানবন্দরে করোনার আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হচ্ছে।
নতুন নিয়মে ওমিক্রন সংক্রমণের ‘হটস্পট’ দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও হংকং থেকে ভারতে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল আসা ব্যক্তিরাই কেবল বিমানবন্দর থেকে গন্তব্যে যাওয়ার অনুমতি পাবেন। এ ছাড়া বাকি ৯ দেশ থেকে আসা ব্যক্তিরা করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে বিমানবন্দর ত্যাগ করার অনুমতি পাবেন। পরে তাদের ফলাফল জানিয়ে দেয়া হবে। ফলাফল পজিটিভ বা নেগেটিভ হলে তাদের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ভারত ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ওমিক্রন সংক্রমণ ঠেকাতে বিমানবন্দরে নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ওমিক্রন মোকাবেলায় ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা জারি না করে বিজ্ঞানসম্মত উপায় মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে ডব্লিউএইচও। সংস্থার আঞ্চলিক মহাপরিচালক মাতশিদিসো মোয়েতি বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনার ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হওয়ার পর আফ্রিকাকে লক্ষ্য করে ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক সংহতির ওপর আঘাত।
স্বাস্থ্য খাতের ১৫ নির্দেশনা
করোনার নতুন ধরন আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে বিশ্বব্যাপী সতর্ক অবস্থা চলছে। বাংলাদেশেও ওমিক্রন ঠেকাতে স্বাস্থ্য খাত ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছে। রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা: মো: নাজমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ১৫টি নির্দেশনা হচ্ছেÑ
১. দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি, লেসোথো এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক সময় সময় ঘোষিত অন্যান্য আক্রান্ত দেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে। ২. সব ধরনের (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে। ৩. প্রয়োজনে বাইরে গেলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। ৪. রেস্তোরাঁতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম করতে হবে। ৫. সব ধরনের জনসমাবেশ, পর্যটন স্থান, বিনোদনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হল/থিয়েটার হল ও সামাজিক অনুষ্ঠানে (বিয়ে, বৌভাত, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কমসংখ্যক লোক অংশগ্রহণ করতে পারবে। ৬. মসজিদসহ সব উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি পালন নিশ্চিত করতে হবে। ৭. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। ৮. আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। ৯. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (সব মাদরাসা, প্রাক প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। ১০. সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সেবাগ্রহীতা, সেবা প্রদানকারী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। ১১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। ১২. করোনা উপসর্গ/লক্ষণযুক্ত সন্দেহজনক ও নিশ্চিত করোনা রোগীর আইসোলেশন ও করোনা পজিটিভ রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ১৩. কোভিড-১৯-এর লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা এবং তার নমুনা পরীক্ষার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে সহায়তা করা যেতে পারে। ১৪. অফিসে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন বাধ্যতামূলকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দাফতরিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। ১৫. কোভিড-১৯ রোগ নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাস করার নিমিত্তে কমিউনিটি পর্যায়ে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সচেতনতা সৃষ্টির জন্য মাইকিং ও প্রচারণা চালানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মসজিদ/মন্দির/গির্জা/প্যাগোডার মাইক ব্যবহার করা যেতে পারে এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর/ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। নির্দেশনাগুলো দেশব্যাপী কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা