১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিশ্লেষকদের অভিমত

গণ অধিকার পরিষদ হালে পানি পাবে তো?

-

চলমান রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে গত মঙ্গলবার দেশে আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন রাজনৈতিক দল ‘গণ অধিকার পরিষদ’। যার নেতৃত্বে রয়েছেন গণফোরামের সাবেক নেতা অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তবে যেখানে অনেক পুরনো এবং প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল জনসমর্থন নিয়ে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে নতুন রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎ কী, এর পেছনে কার ইন্ধন রয়েছে কিংবা কিভাবেই তারা দল পরিচালনা করবে তা নিয়ে কথা বলেছেন বরেণ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে জনস্বার্থ ইস্যুতে আদর্শ নিয়ে মাঠে থাকলে ভবিষ্যৎ ভালো। কেননা প্রধান দুই রাজনৈতিক দল নির্বাচনের সময় জনগণের সাথে শুধুই প্রতারণা করে। ফলে রাজনীতিতে শূন্যতা দেখা দিলে কেউ না কেউ দায়িত্ব নিবে এটাই স্বাভাবিক। তবে দল পরিচালনা নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন নতুন রাজনৈতিক দল গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার গণ অধিকার পরিষদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। যার স্লোগান হচ্ছে- ‘জনতার অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার’। দলের চার দফা মূলনীতি (গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ) ও ২১ দফা কর্মসূচি তুলে ধরে ছয় মাসের জন্য দলটির ৮৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল জনগণের জন্য তেমন কিছু করতে পারেনি। বরং নির্বাচন এলে জনগণের সাথে প্রতারণা করে। দুই দলের সরকারের আমলেই দেশে বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যা কাম্য নয়। এমতাবস্থায় নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটল। নতুন এই দলের প্রতি দেশের মানুষ তথা তরুণ সমাজের নানা প্রত্যাশা থাকবে। নতুন দলের নেতারা জনস্বার্থে নতুন কিছু করে দেখাবে বলে আশা করি। যেখানে বিএনপিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠের কর্মসূচি করতে দেয় না, বা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিও সীমিত। সেখানে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণার পেছনে সরকারের কোনো যোগসাজশ আছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি সরাসরি দেননি তবে বলেন, পুলিশ পেশাকে এখন দলীয়করণ করা হয়েছে। অথচ পুলিশ হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। কিন্তু তাদের আচরণে মনে হয় তারা রাজনৈতিক দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে; যা অনাকাক্সিক্ষত। বরং পুলিশের উচিত জনকল্যাণে কাজ করা।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলকেই ক্ষমতাসীনরা ঠিকমতো কাজ করতে দিচ্ছে না। সেখানে তরুণদের সমন্বয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটল। যেখানে অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষিত ব্যক্তি ড. রেজা কিবরিয়াও যুক্ত হয়েছেন। তবে তাদের সাথে সরকারের আপাতত সম্পৃক্ততা নেই! নতুন এই দল তো এখনো প্রতিষ্ঠিত নয়। ফলে সরকারও তাদেরকে হুমকি মনে করছে না। কেননা নুরের দলকে বিএনপির মতো রাজনৈতিক দলের কাতারে যেতে হলে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। তবে সরকার নতুন দলকে কী হিসেবে নিচ্ছে সেটাই দেখার বিষয়। তিনি বলেন, অবশ্য দেশের তরুণ সমাজ তাদেরকে ভোট দেবে বা তাদের পক্ষে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এ জন্য নতুন দল সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকলে তাদের ভবিষ্যৎ আছে। কেননা রাজনীতিতে শূন্যতা তৈরি হলে কেউ না কেউ উঠে আসে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সরকারি দল যেখানে বিএনপির মতো প্রতিষ্ঠিত বিরোধী দলকে কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না, সেখানে ভিপি নুরের দল ঘোষণা করল। এর পেছনে সরকার কলকাঠি নাড়ছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে দিলারা চৌধুরী বলেন, আমিও শুনেছি যে, এর পেছনে সরকারের ইন্ধন থাকতে পারে। তবে তাদের কর্মকাণ্ডে সময়মতো তা পরিষ্কার হবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যারা বয়সে তরুণ এবং নতুন স্বপ্ন দেখতে পারে তাদেরকে মাঠে ময়দানে থাকা দরকার। যদি ছয় মাসে অর্ধ লাখ সদস্য জোগাড় করতে পারে এবং আদর্শ নিয়ে মাঠে থাকতে পারে তবে তাদের ভবিষ্যৎ ভালো। কর্মসংস্থান, কৃষক-শ্রমিকের স্বার্থ তুলে ধরতে হবে। তারা যেসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঘোষণা করেছে সেসব বাস্তবায়ন ও কার্যকর করতে হবে। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন দলের প্রতি আশা তো অবশ্যই আছে। কেননা তাদের সাহসও আছে লোকজন এবং জনসমর্থনও আছে। তারা যদি জনকল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে চায় তাহলে তারা সামনে এগিয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে মাঠে টিকে থাকতে হবে।
যেখানে পুরনো প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলো স্বাভাবিকভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারছে না, সেখানে নতুন দলের ভবিষ্যৎ কীÑ এই প্রশ্নের উত্তরে নতুন দল ‘গণ অধিকার পরিষদ’-এর সদস্যসচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমান সরকার হচ্ছে অনির্বাচিত এবং অবৈধ। তারা ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। তাদের সাথে আপস করে এবং তাদের আশীর্বাদ নিয়ে রাজনীতি করার প্রশ্নই আসে না। নিজেরা যতটুকু রাজনীতি করার সুযোগ পাই সেখান থেকেই চেষ্টা করব। বর্তমানে সব গণতান্ত্রিক শক্তির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে অনির্বাচিত এবং কর্তৃত্ববাদী সরকারকে হটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচিত করা। সে ক্ষেত্রে সরকারতো আমাদেরকে আন্দোলন সংগ্রামের জন্য একেবারে রাস্তা ছেড়ে দিয়ে মসৃণ করে দেবে না। এর মধ্য দিয়েই লড়াই সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, জীবন দিতে হবে, রক্ত দিতে হবে। এ যাবৎকালে আমরা তা দিয়ে আসছি। সামনের দিনগুলোতেও এভাবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিতে হবে। কেউ কাউকে জায়গা করে দিবে না। নিজেদেরকেই জায়গা ঠিক করে নিতে হবে।
নতুন দলের কোনো কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সভায় আলোচনার মাধ্যমে নতুন কর্মসূচি নির্ধারণ করব।

 


আরো সংবাদ



premium cement