২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আলবেনিয়া বিমানবন্দর থেকেই ফেরত এসেছে শতাধিক বৈধ শ্রমিক

- ছবি : সংগৃহীত

ইউরোপের দেশ আলবেনিয়ার তিরানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই স্মার্ট কার্ড নিয়ে যাওয়া শতাধিক শ্রমিককে ফিরতি ফ্লাইটে ফেরত পাঠিয়েছে দেশটির ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। তবে কী কারণে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তা শ্রমিকদের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরাও বলতে পারছেন না। তবে এসব শ্রমিক ঢাকার জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বহির্গমন শাখা থেকে ছাড়পত্র নিয়ে দেশটির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। দেশটি থেকে শ্রমিকদের ফেরত আসার কারণে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রত্যেক কর্মীর দেশটিতে যেতে পাঁচ লাখেরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক শহীদুল আলমের সাথে যোগাযোগ করে এ প্রসঙ্গে বক্তব্য নিতে চাইলেও তাকে পাওয়া যায়নি। বহির্গমন পরিচালক হাসান মাহমুদের বক্তব্য নিতে চাইলে তিনিও টেলিফোন রিসিভ করেননি।

তবে গত রাতে ঢাকার হজরত শাহজালাল রহ: আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক মো: ফখরুল আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, ইউরোপের দেশ আলবেনিয়ায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বৈধ স্মার্ট কার্ড নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে কেউ কেউ ফেরত আসছেন এমনটা তিনি শুনছেন। কিন্তু যারা ফিরে আসছেন তাদের কারো সাথে তার কথা হয়নি। তিনি ওই শ্রমিকদের নাম এবং টেলিফোন নম্বর জোগাড় করার চেষ্টা করছেন জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ থেকে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে কেউ বিদেশে গেলে সেই তথ্য আমার প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে থাকে। কিন্তু যারা ফেরত আসে, তাদের কোনো তথ্যই আমার কাছে থাকে না। এটি বলতে পারবে এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন বিভাগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি কয়েক মাস হলো ইউরোপের দেশ আলবেনিয়ায় নতুন শ্রমবাজার শুরু হয়। ইতোমধ্যে নিজ উদ্যোগে ভিসা সংগ্রহ করে প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে দেশটিতে বাংলাদেশী কর্মী যাওয়া শুরু হয়। চীনের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ‘পাতা ভিসা’ ইস্যুর পর ব্যুরো থেকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয় আলবেনিয়ায়। সবকিছু ঠিক থাকলে কাতার এয়ারওয়েজ অথবা তার্কিশ এয়ারলাইন্সে শ্রমিকরা দেশটির উদ্দেশে পাড়ি জমান। ইতোমধ্যে এই প্রক্রিয়ায় অনেকে দেশটিতে যেতে সক্ষম হয়েছেন। আবার অনেকে আলবেনিয়ার তিরানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়ার পর কোনো কারণ ও সিল ছাড়াই ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ফিরতি ফ্লাইটে তাদের দেশে ফেরত পাঠায়। সর্বশেষ গত ২২ সেপ্টেম্বর এবং ২৮ আগস্ট দু’টি ফ্লাইটে বেশকিছু শ্রমিক দেশে ফেরত এসেছেন বলে জানা গেছে। আলবেনিয়ায় গার্মেন্ট, ফ্যাক্টরি ও এগ্রিকালচারাল সেক্টরে কাজের সুযোগ রয়েছে। বেতন সাড়ে ৩০০ ইউএস ডলার।

গতকাল কুইক রেয়ার সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের পরিচালক মো: আনিসুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান থেকে বৈধভাবে আলবেনিয়াতে চারজন কর্মীকে পাঠিয়েছি। তারা সেখানে গিয়ে কাজ করছে। বেশকিছু রিক্রুটিং এজেন্সির শতাধিক কর্মী দেশে ফেরত এসেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যতটুকু জানি বিভিন্ন এজেন্সির ৭০ থেকে ৮০ জন কর্মী ফেরত এসেছে। কি কারণে ফেরত এসেছে, তা তিনি বলতে পারবেন না বলে জানান। তবে তার কর্মী যাওয়ার আগে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলবেনিয়ায় যেসব রিক্রুটিং এজেন্সির নামে কর্মী পাঠানোর লক্ষ্য জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে ছাড়পত্র নেয়া হয়েছে তার মধ্যে টি কে এন্টারপ্রাইজ, নিরুপম ইন্টারন্যাশনাল ও জে এস এ ওভারসিস, আলী এভিয়েশন, এইচপি ইন্টারন্যাশনাল, ফাহিম ওভারসিস ও আইডিয়া ইন্টারন্যাশনালের নাম রয়েছে।

গতরাতে কাকরাইলের রাজমণি ঈশা খাঁ ভবনে থাকা একজন জনশক্তি ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, আলবেনিয়া থেকে মূলত ‘পাতা ভিসা’ আসে। সেটি সঠিক আছে কি না তা যাচাইয়ের জন্য জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরো থেকে মেইল পাঠানো হয় দেশটির ইমিগ্রেশন ও নিয়োগকারী কোম্পানিতে। ভিসা এককভাবে আনা হলেও ছাড়পত্র নিতে হয় কোনো না কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে। ভিসা নিশ্চিত হতে ফাইল পাঠানো হয় সেকশন থেকে পরিচালকের দফতরে। সেখান থেকে সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো হয় ডিজির কাছে। ডিজি ওই ফাইলে কখনো লিখেন ছাড়পত্র দেয়া হোক অথবা পুনঃযাচাই করে পেশ করুন।

সবকিছু সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করার পরও কি কারণে আলবেনিয়া বিমানবন্দর থেকে শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তার কোনো কারণ তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে তার ধারণা, হতে পারে আলবেনিয়া ইমিগ্রেশনের কোনো সরকারি ফি বা হেলথ ইন্স্যুরেন্স সম্পন্ন করায় এমনটি হয়ে থাকতে পারে। এক প্রশ্নের উত্তরে ওই মালিক বলেন, আলবেনিয়ার বহির্গমন ছাড়পত্র করানোর নামে জনশক্তি ব্যুরোতে গড়ে উঠা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট ডিজির দফতরের নাম ভাঙিয়ে টাকা আদায় করার চেষ্টা করছে। এই চক্রের সাথে ব্যুরোর কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ইন্ধন থাকতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। বর্তমানে আলবেনিয়াতে কর্মী যাওয়ার জন্য বহির্গমন ছাড়পত্র বন্ধ রয়েছে বলে ব্যুরোর একাধিক সূত্র জানিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement