২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

বাজে বোলিং ফিল্ডিংয়ে হার বাংলাদেশের

-

শারজায় ২৬ বছর পর বাংলাদেশ মাঠে নেমেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত হওয়ার পর সারা দুনিয়ায় এত মাঠে বাংলাদেশ খেলেছে, কিন্তু শারজায় কেন যেন কখনোই খেলা হয়নি। শারজার কাছাকাছি শহর আবুধাবি, দুবাইয়েও খেলা হয়েছে, কিন্তু শারজা সব সময়ই বাংলাদেশ থেকে দূরে সরে থেকেছে। গতকাল সে বৃত্তটা পূরণ হয়েছে বাংলাদেশের। কিন্তু সুখকর হয়নি।
যে স্কুপ মারা নিয়ে মুশফিকুর রহীমের এত সমালোচনা, সেই স্কুপটি মেরেই দলের সংগ্রহ ১৭০ পার করেন তিনি। নিশ্চয়ই এই স্কুপ নিয়ে মুশফিকের সমালোচনা কেউ করবেন না। নাঈম শেখের ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনা থাকলেও হাফ সেঞ্চুরিতে জাত চিনিয়েছেন। মুশফিক ও নাঈমের ক্যামিওতে দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭১ রান। টি-২০ তে যা আদর্শ। ব্যাটাররা তাদের কাজটা ঠিকমতো করলেও বোলারদের বাজে বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে ডুবল বাংলাদেশ। শুরুতে নাসুমের উইকেট ও সাকিবের জোড়া আঘাতে প্রাণের সঞ্চার হলেও ক্যাচ মিসের মহড়ায় ম্যাচটি হারতে হয়েছে ৫ উইকেটে। শ্রীলঙ্কা ১৮.৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে সহজেই পৌঁছে যায় জয়ের বন্দরে। সাকিব ৪১ উইকেট নিয়ে টি-২০ বিশ্বকাপে সবার শীর্ষে। ৩৯ উইকেট নিয়ে ২য় অবস্থানে পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদী।
বাছাইপর্বের শেষ দুই ম্যাচে রানে ফেরা সাকিব আল হাসান গতকাল সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তাতে তেমন সমস্যা হয়নি। জ্বলে উঠেছেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ আর মুশফিকুর রহীম। নাঈমের আরো একটি ফিফটি এবং মুশফিকের ফর্মে ফেরা। দুইয়ে মিলে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিংটাও হলো দুর্দান্ত। শারজায় ২৬ বছর পর খেলতে নেমে ১৭১ রান করে লঙ্কানদের বড় চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু লিটন ও মাহমুদুল্লাহর মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের ক্যাচ মিসের মাশুল দিতে হয়েছে ৫ উইকেটে হেরে। বৃথা গেল নাঈম-মুশফিকের লড়াকু হাফসেঞ্চুরি।
শুরুতেই আঘাত নাসুম আহমেদের। কুশল পেরেরাকে দ্রুত ফেরানোয় মনে হচ্ছিল শ্রীলঙ্কার জন্য ১৭২ রানের লক্ষ্যমাত্রটা কঠিনই হয়ে গেল। কিন্তু তিন নম্বরে নেমে চারিথ আসালঙ্কা আশা দেখালেন দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে। বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে রীতিমতো খুনই করলেন বাংলাদেশের বোলিংকে। মাঝখানে সাকিব আল হাসানের জোড়া আঘাতে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ খেলায় ফিরল, কিন্তু আসালাঙ্কা-ভানুকা রাজাপক্ষের সাথে জুটি গড়ে বাংলাদেশের মুষ্টি থেকে ম্যাচটা বের করে নিয়ে গেলেন দুর্দান্তভাবেই।
বোলিংটা ভালো হয়নি। নাসুম আহমেদ, মাহমুদুল্লাহ, সাইফউদ্দিন তিনজনই ছিলেন ভীষণ খরুচে। মেহেদী কিছুটা সমীহ জাগালেও সেটি যথেষ্ট ছিল না। সাকিব আশা জাগিয়ে দুই উইকেট নিলেও সঙ্গীরা ছিঁটেফোটাও দেখাতে পারেননি। মোস্তাফিজও আশা অনুযায়ী বোলিং করতে পারেননি। লিটন দাসের দু’টি সহজ ক্যাচ মিসে স্কোর বোর্ডে ১৭১ রান তোলার পর বাকি দিনটা বাংলাদেশের হয়নি।
আসালাঙ্কা আর রাজাপক্ষে হেসে খেলেই বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচ বের করে নিয়েছেন। এর আগে পাওয়ার প্লেতে ৫৪ রান তুলে রান তাড়ায় অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ৭৯ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর আসালাঙ্কা আর রাজাপক্ষের কাঁধেই সওয়ার। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল এলোমেলো বোলিং। পঞ্চম উইকেট জুটিতে আসালাঙ্কা আর রাজাপক্ষে ৫২ বলে ৮৬ রানের জুটি গড়েন। আসালাঙ্কার ইনিংসটি ছিল ৪৯ বলে ৮০ রানের। রাজাপক্ষের উইকেটটি শেষ দিকে নাসুম নিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। আউট হওয়ার আগে ৩১ বলে ৫৩ করেছেন তিনি। ১৬তম ওভারে সাইফউদ্দিনের বলে ২২ রান তুলেই ম্যাচে যাবতীয় উত্তেজনাটা আসলে শেষ করে দিয়েছিল লঙ্কানরা।
টস হেরে ব্যাটিং পেয়ে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ মূলত খুশিই ছিলেন। কারণ তিনি টস জিতলেও ব্যাটিং নিতেন। শুরু থেকেই বল ব্যাটে এসেছে বলেই নাঈম কার্যকর এক ইনিংস খেলেছেন। টি-২০ বিশ্বকাপে তুলে নিলেন তার দ্বিতীয় ফিফটি। এক দিক ধরে রেখে বাংলাদেশের ইনিংসকে দিয়েছেন দারুণ এক নির্ভরতা। ওপেনিং জুটিতে এলো ৪১ রান। পাওয়ার প্লেতে উঠল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রান। ষষ্ঠ ওভারের পঞ্চম বলে কুমারার বলে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে লিটন ফিরেছেন ১৬ বলে ১৬ করে।
সাকিব এসেছিলেন বড় ভরসার নাম হয়ে। কিন্তু ৭ বলে ১০ রানের বেশি করতে পারেননি। আত্মবিশ্বাসী দু’টি চার মেরেছিলেন। কিন্তু করুনারতেœর বলে বোল্ড হয়েছেন অদ্ভুতভাবেই। নাঈম আর মুশফিকুর রহীমের চতুর্থ উইকেট-জুটিতে ৫১ বলে ৭৩ করে বড় সংগ্রহের দিকে অনেকটা এগিয়ে দেন তারা। টি-২০ বিশ্বকাপের শুরু থেকে একেবারেই ফর্মে ছিলেন না মুশফিকুর রহীম। কিন্তু তিনি গতকাল প্রমাণ করেছেন। নাঈম ৫২ বলে ৬২ রান করেছেন। তার ইনিংসে ছিল ছয়টি চারের মার। তবে তার আক্ষেপ থাকবে, ইনিংসের একেবারে শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে। বিনুরা ফার্নান্দোর বলে তুলে মারতে গিয়ে আকাশে উঠে যাওয়া বলটি সহজেই লুফে নিয়েছেন ফার্নান্দো।
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে মুশফিকের ব্যাটিং সমালোচিত হয়েছিল। ওমানের বিপক্ষে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হলো আট নম্বরে। শেষবার মুশফিক কবে এত নিচে ব্যাটিং করেছেন তা সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পাপুয়া নিউগিনির মতো দুর্বল দলের বিপক্ষেও তার ব্যাট হাসেনি। টি-২০ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অবশ্য প্রথম ফিফটি পেয়েছেন। ২৯ ম্যাচ পর তার ফিফটি পাওয়াটাও বেশ বিস্ময়কর। মুশফিকের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৭ বলে ৫৭। মেরেছেন পাঁচটি বাউন্ডারি ও দু’টি ছক্কা। শারজা স্টেডিয়ামে উইকেটের দুই দিকের পরিধি কিছুটা ছোট। অভিজ্ঞ মুশফিক হোমওয়ার্কটা ভালোই সেরেছেন। ইনিংসের শুরুতে দু’টি স্লগ সুইপে ছক্কা মেরেই বুঝিয়ে দিয়েছেন ভালো কিছু করতেই মাঠে নেমেছেন তিনি। শেষ অবধি উইকেটে টিকে থেকে দলকে একটা পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন।
নাঈমের বিদায়ের পর আফিফ হোসেন নেমে চাহিদা মেটাতে পারেননি। তবে মাহমুদুল্লাহ শেষ দিকে মুশফিকুর রহীমকে ভালোই সঙ্গ দিয়েছেন। ৫ বলে ১০ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি। চামিকা, ফার্নান্দো ও চামারা একটি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ ইনিংস : ১৭১/৪ (নাঈম ৬২, মুশফিক ৫৭*, লিটন ১৬, সাকিব ১০, মাহমুদুল্লাহ ১০*, চামিকা ১/১২)।
শ্রীলঙ্কা ইনিংস : ১৭২/৫ (১৮.৫ ওভার) (আসালাঙ্কা ৮০*, ভানুকা রাজাপাকসে ৫৩, নিশাঙ্কা ২৪, নাসুম ২/২৯, সাকিব ২/১৭, সাইফুদ্দিন ১/৩৮)।
ফল : শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেটে জয়ী।
টস : শ্রীলঙ্কা
ম্যাচ সেরা : আসালাঙ্কা (শ্রীলঙ্কা)।


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল