২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিয়ানমারে গণহত্যার আশঙ্কা জাতিসঙ্ঘের

উত্তরাঞ্চলে বিশাল সৈন্য সমাবেশ
-

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে হাজার হাজার সেনা সমাবেশের রিপোর্টে দেশটিতে আরো বড় ধরনের গণহত্যাসহ মানবাধিকার বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে জাতিসঙ্ঘ। গত ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের পর থেকেই সেখানে বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ রেপোর্টিয়ার টম অ্যান্ডুস সাধারণ পরিষদের কাছে দেয়া এক প্রতিবেদনে বলেন, মিয়ানমারের এই অংশের লোকেরা আরো বেশি গণহত্যার মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপারে আমাদের সবার প্রস্তুত থাকা উচিত। আমি নিদারুণভাবে আশা করছি আমার এই আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হোক। খবর রয়টার্স ও এএফপির।
জাতিসঙ্ঘে বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্ট উপস্থাপনকালে অ্যান্ডুস বলেন, তিনি তথ্য পেয়েছেন যে, মিয়ানমার দেশটির দুর্গম উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে হাজার হাজার সৈন্য ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেছে।
তিনি বলেন, তথ্যগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, সামরিক জান্তা মানবতার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সামরিক জান্তার এ ধরনের কৌশলগুলো ২০১৬ ও ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী অভিযানের মুখে প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম ঘরবাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন, পিটিয়ে গুলি করে হত্যা, নারীদের ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। জাতিসঙ্ঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এমন নৃশংসতাকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’ বলে নিন্দা জানিয়েছে।
জাতিসঙ্ঘ বলছে, এই অভিযানে বিপুল মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে গণহত্যার আগে যেভাবে সামরিক সমাবেশ করা হয়েছে, এবার দেশটির উত্তরাঞ্চলে একইভাবে সামরিক সমাবেশ ঘটানো হচ্ছে।
অ্যান্ডুস মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে অর্থ, অস্ত্র দিয়ে সহায়তা এবং বৈধতা দেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। গত সপ্তাহে দেশটির বন্দীদের মুক্তির বিষয়টি ‘বৈশ্বিক চাপে হয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এর আগে, গত সোমবার মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লেইং অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় বিক্ষোভ করে কারাগারে যাওয়া ৫ হাজারের বেশি বন্দীকে মুক্তি দেয়ার ঘোষণা দেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০ দেশের জোট আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলন থেকে মিয়ানমারের জান্তাকে বাদ দেয়ার পর বন্দীদের মুক্তির ঘোষণা আসে। আসিয়ানের সম্মেলন থেকে জান্তাপ্রধানকে বাদ দেয়ার এই ঘটনা দেশটির সামরিক শাসকগোষ্ঠীর জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
অ্যান্ডুস বলেছেন, জান্তাকে আসন্ন সম্মেলনে স্বাগত জানানো হবে না বলে আসিয়ানের ঘোষণা মূলে আঘাত করেছে। তিনি বলেন, জান্তা-নিয়ন্ত্রিত বাহিনী দেশটির আড়াই লাখ মানুষকে বাস্ত্যুচুত করেছে। এ ছাড়া গ্রেফতারকৃতদের অনেককে নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি নির্যাতনের কারণে অনেকে মারাও গেছেন। শিশুদের ওপর নির্যাতন চালানোর বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের এই কর্মকর্তা।
বন্দীদের ফের আটক : আন্তর্জাতিক চাপ থাকলেও পিছু হটছে না মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার। দেশটিতে যখন গৃহযুদ্ধ অবস্থা তখন জান্তাবিরোধী বিক্ষোভের কারণে আটক ৫ হাজার ৬৩৬ জন বন্দীকে মুক্তি দেবে বলে ঘোষণা দেয় মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। সে অনুযায়ী শতাধিক বন্দীকে ছেড়ে দেয়ার খবরও পাওয়া যায়। তবে মুক্তির কয়েক দিন না যেতেই দেখা যাচ্ছে উল্টোচিত্র।
মুক্তি দেয়া ১১০ জনকে আবার আটক করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। বৌদ্ধদের তিন দিনব্যাপী ধর্মীয় উৎসব থাদিংইউত উপলক্ষে এদের মুক্তি দেয়া হয়েছিল। তবে তার ক’দিন পরেই ফের এ আটকের ঘটনা ঘটল। এ খবর জানিয়েছে মিয়ানমারের মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি)।
এক বিবৃতিতে এএপিপি জানিয়েছে, কয়েকজন বাড়িতে ফিরতে না ফিরতেই তাদের আবার কারাগারে ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়। অন্য কয়েকজনকে বলা হয়েছিল যে মুক্তিপ্রাপ্তদের তালিকায় তাদের নাম আছে। এ কথা বলে তাদের কারাগারের প্রবেশপথে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সেখান থেকেই আবার তাদের জেলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং কারণ হিসেবে নতুন কিছু অভিযোগ গঠনের কথা বলা হয়।
অরাজনৈতিক প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণে ক্ষুব্ধ জান্তা : দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের আসন্ন সম্মেলনে মিয়ানমারের অরাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দেশটির সামরিক সরকার। শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
আসিয়ান সম্মেলন থেকে মিয়ানমারের জান্তা প্রধান মিং অং হ্লাইংকে বাদ দিয়েছেন জোট নেতারা। এ বিষয়ে শুক্রবার এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আসিয়ানের অন্য সদস্যরা সম্মেলনে যোগ দেয়ার যেমন অধিকার রাখে, তেমনি মিয়ামনারের সরকার প্রধানেরও সমান অধিকার আছে।’ এ ছাড়া আসিয়ান সনদের নিয়ম, উদ্দেশ্য ও নীতির বিরুদ্ধে যেকোনো আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না বলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি মিয়ানমার সরকার জানায়, আসিয়ান সম্মেলনে থেকে দেশটির জান্তাপ্রধানকে বাদ দেয়া জোটের নীতির পরিপন্থী।


আরো সংবাদ



premium cement
বগুড়ায় গ্যাসের চুলার আগুনে বৃদ্ধা নিহত বগুড়ায় ধানের জমিতে পানি সেচ দেয়া নিয়ে খুন জিআই স্বীকৃতির সাথে গুণগত মানের দিকেও নজর দিতে হবে : শিল্পমন্ত্রী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চুয়েট, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ সখীপুরে সাবেক ও বর্তমান এমপির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ তীব্র গরমের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার অন্যতম দায়ী : মির্জা আব্বাস সৈয়দপুরে জামায়াতের উদ্যোগে সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরুতে না থাকার কারণ জানালেন সাকিব ঝালকাঠিতে গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিদর্শনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল চুয়াডাঙ্গায় বাতাসে আগুনের হল্কা : গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ বৃষ্টির নামাজ আদায়ের নিয়ম

সকল