২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তা বাড়াতে জাতিসঙ্ঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান

উখিয়ায় ৭ রোহিঙ্গা হত্যায় ৮ জন আটক
-

সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনায় প্রাণহানির পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা বাড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ দিকে সর্বশেষ উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি মাদরাসায় সাতজনকে হত্যার ঘটনায় আটজনকে আটক করেছে পুলিশ।
এক টুইট বার্তায় ইউএনএইচসিআর বলেছে, বাংলাদেশের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে আরেক দফা সহিংস আক্রমণে ইউএনএইচসিআর খুবই উদ্বিগ্ন। গত শুক্রবার ভোরে সংঘটিত এই ঘটনায় অন্তত সাতজন শরণার্থী মারা গেছেন। এ ছাড়া শিশুসহ অজ্ঞাতসংখ্যক রোহিঙ্গা আহত হয়েছে, যারা এখন চিকিৎসাধীন। শরণার্থী ক্যাম্পের নিরাপত্তা বাড়ানোর দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আমরা আবারো সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এই সহিংস আক্রমণের সাথে জড়িত ও উসকানিদাতাদের আটক ও আইনের আওতায় এনে বিচার করা প্রয়োজন।
ইউএনএইচসিআরের টুইট বিবৃতিতে আরো বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সহিংসতার হাত থেকে বাঁচতে নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেয়া এ সব শরণার্থীর মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু।
এ দিকে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার এক টুইট বার্তায় কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শরণার্থী সঙ্কটের এই জটিল সময়ে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়, তাদের আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগোষ্ঠী, ক্যাম্পের নিরাপত্তা দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এবং বাংলাদেশের পাশে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
সম্প্রতি একটি পরিকল্পিত হামলায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ড দেশে ও দেশের বাইরে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। এর কিছুদিনের মধ্যেই গত শুক্রবার ক্যাম্পের ভেতরে রোহিঙ্গাদের জন্য পরিচালিত একটি মাদরাসায় সশস্র হামলা চালিয়ে সাতজনকে হত্যা করা হয়। এ সব হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রত্যাবাসনবিরোধী হিসেবে পরিচিত আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মিকে (আরসা) দায়ী করা হচ্ছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে সঙ্ঘাতে মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাও ভূমিকা রাখছে বলে বাংলাদেশ সরকার মনে করছে।
অন্য দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে আরো কঠোর হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন। গত শুক্রবার সিলেটে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন ক্যাম্পে মাদক ও অস্ত্র বাণিজ্য বন্ধে প্রয়োজনে গুলি চালাতে হবে।
উখিয়ায় ৭ রোহিঙ্গা হত্যায় ৮ জন আটক
কক্সবাজার অফিস জানায়, উখিয়া উপজেলার বালুখালী ক্যাম্পের একটি মাদরাসায় হামলায় সাত রোহিঙ্গাকে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত আটজনকে আটক করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। গত শুক্রবার রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের পরিচয় জানানো হয়নি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, এর আগে শুক্রবার ভোরে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলিসহ এক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। শুক্রবার রাতভর ক্যাম্পে অভিযান চালানো হয়।
এ দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাতজন নিহতের ঘটনায় উখিয়া থানায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। নিহতরা হলেনÑ মাদরাসার শিক্ষক ও হাফেজ মো: ইদ্রীস (৩২), ইব্রাহীম হোসেন (২২), ছাত্র আজিজুল হক (২৬), ক্যাম্পের স্বেচ্ছাসেবক মো: আমীন (৩২), শিক্ষক নুর আলম ওরফে হালিম (৪৫) ও শিক্ষক হামিদুল্লাহ (৫৫)। এ ছাড়া এক সূত্রে নুর কায়সার (১৫) নামে আহত এক ছাত্রের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এ দিকে প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার ভোরে বালুখালী ১৮ নম্বর ক্যাম্পের এইচ ব্লকে অবস্থিত দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল ইসলামিয়াহ মাদরাসায় রোহিঙ্গা দুষ্কৃতকারীরা হামলা চালালে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পাশের মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নেন। হামলাকারীদের হাত থেকে মসজিদে আশ্রয় নিয়েও রেহাই পাননি তারা। হামলাকারীরা মসজিদে আশ্রয় নেয়া দুইজনকে হত্যা করে।
এর আগে পুলিশ জানিয়েছিল, রোহিঙ্গাদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। পরে ক্যাম্পে দায়িত্বরত এপিবিএন পুলিশ মাদরাসায় হামলার কথা নিশ্চিত করেন।
৮ এপিবিএনের অধিনায়ক এসপি শিহাব কায়সার জানান, বৃহস্পতিবার রাতে বালুখালী ১৮ নম্বর ক্যাম্পের ওই মাদরাসায় হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় গোলাগুলি এবং ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ঘটনাস্থলে চার রোহিঙ্গা নিহত হন। আহত হন আরো ১০ থেকে ১২ জন। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে আরো দুইজনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ময়নারঘোনা পুলিশ ক্যাম্প-১২ এর সদস্যরা ওই মাদরাসা ও আশপাশের এলাকাসহ অন্যান্য ক্যাম্প এলাকায় ব্লক রেইড করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এসপি।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোহাম্মদ কামরান হোসেন জানান, গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ মাদরাসায় রোহিঙ্গা দুষ্কৃতকারীরা হামলা চালায়। ওই হামলায় মাদরাসায় অবস্থানরত চারজন রোহিঙ্গা সদস্য নিহত হন। এ ঘটনার খবর পেয়ে ময়নারঘোনা এপিবিএন সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। পরে হাসপাতালে আরো দুই রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। কামরান হোসেন আরো জানান, নিহতদের সবাই মাদরাসার শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী। তারা গুলিবিদ্ধ এবং ধারাল অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ একটি দেশীয় লোডেড ওয়ান শুটারগান, ছয়টি গুলি ও একটি ছুরিসহ একজনকে হাতেনাতে আটক করতে সক্ষম হয়। তার নাম মুজিব বলে জানা গেছে।v


আরো সংবাদ



premium cement