২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ

সাকিবের চৌকস নৈপুণ্যে ওমানের বিপক্ষে ২৬ রানে জয়
চার মারার পর মোহাম্মদ নাঈম শেখকে অভিনন্দন সাকিব আল হাসানের। নাঈম ৪৯ বলে ৬৪ রান করেন : এএফপি -

আশানুরূপ পারফরম্যান্স এ ম্যাচেও দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। এলোমেলো ব্যাটিং, ক্যাচ মিস আর অতিরিক্ত রানের মহড়ায় টাইগারদের দেখা যায়নি আপন চেহারায়। তবুও ব্যাট হাতে নাঈম-সাকিবের দু’টি নান্দনিক ইনিংস, বল হাতে মোস্তাফিজ-মাহেদিদের ঘুরে দাঁড়ানো বোলিংয়ে গত রাতে ওমানকে ২৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাতে টি-২০ বিশ^কাপের সুপার টুয়েলভের স্বপ্নও বাঁচিয়ে রাখল লাল-সবুজের দল।
ব্যাটিং ব্যর্থতায় শুরু। মাঝে মোহাম্মদ নাঈম শেখ আর সাকিব আল হাসানের দায়িত্বশীল ইনিংস। শেষে আবার ব্যাটিং ব্যর্থতা। গতকাল আল আমিরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাঁচা-মরা লড়াইয়ের ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করে ২০ ওভারে সব কয়টি উইকেট হারিয়ে ১৫৩ রান করে বাংলাদেশ। সৌম্য সরকারের বদলে এই ম্যাচে একাদশে জায়গা পান নাঈম শেখ। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দারুণ এক হাফসেঞ্চুরিতে দলের সম্মানজনক স্কোরের পথে বড় ভূমিকা রাখেন এই ওপেনার। বল-ব্যাটে অবদান রেখে ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাকিব। দিনের প্রথম ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে স্কটল্যান্ডের জয়ের পর সমীকরণ কঠিন হয়ে যায় বাংলাদেশের। সুপার টুয়েলভের আশা বাঁচিয়ে রাখতে ওমানের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না মাহমুদুল্লাহ, মুশফিকদের।
১৫৪ রানের লক্ষ্য। আগের ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনির ছুড়ে দেয়া ১৩০ রানের লক্ষ্য কোনো উইকেট না হারিয়েই ছুঁয়ে ফেলেছিল ওমান। গতকাল প্রথম ওভারে তাসকিন যেভাবে উদারহস্তে ওয়াইড, লেগবাই রান দেয়া শুরু করেছিলেন, তাতে শঙ্কা জেগেছিল বৈকি। কিন্তু না, সেই শঙ্কা নিমেষে দূর করে দেয়ার চেষ্টা করলেন মোস্তাফিজুর রহমান। বোলিংয়ে অবশ্য প্রথম বলটাই দিয়েছিলেন ওয়াইড। পরের বলেই এলবিডব্লিউর জোরালো আবেদন। আম্পায়ার আঙুল তুলে দিলেন। রিভিউ নিলেন ওমানের ব্যাটার আকিব ইলিয়াস। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারলেন না। পরে মোস্তাফিজও ওই ওভারে দিলেন পাঁচটি ওয়াইড। শুরুতে তাসকিন দিয়েছিল চারটি অতিরিক্ত রান। এরপর মোস্তাফিজ বোলিংয়ে এসে পাঁচ ওয়াইডসহ দিলেন মোট ১২ রান।
সাকিব আর সাইফউদ্দিনকে দিয়ে এই ওয়াইডের বন্যা কিছুটা থামিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ষষ্ঠ ওভারে আবারো মোস্তাফিজকে ফিরিয়ে আনেন অধিনায়ক রিয়াদ। ওভারের প্রথম বলেই ক্যাচ তুলে দেন জতিন্দর সিং। বল উপরে উঠে যায়। বোলারসহ তিন-চারজন সেটা ধরার অবস্থানে ছিলেন। মাহমুদউল্লাহ এক্সট্রা কভার থেকে দৌড়ে এসে তা ধরতে গেলেন। কিন্তু বল পড়ে গেল হাতের ফাঁক গলে। এক বল পরেই ছক্কা। এরপর মোস্তাফিজের বল থেকে আর বাঁচতে পারলেন না কাস্যপ প্রজাপতি। নুরুল হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তিনি। ১৮ বলে করলেন ২১ রান।
৪৭ রানে দুই উইকেট হারানো ওমান তৃতীয় উইকেট হারায় ৮১ রানে। অধিনায়ক জিশান মাকসুদকে ১২ রানে ফেরান মাহেদি। ডিপ কাভারে মোস্তাফিজ দুর্দান্ত ক্যাচটি তালুবন্দী করেন। স্কোরে ৯ রান যোগ হতেই ফেরেন ওপেনার জতিন্দর সিং। পাপুয়া নিউগিনির সাথে ৭৩ রান করা জতিন্দের এ ম্যাচেও করেন ৩২ বলে ৪০ রান। নিজের তৃতীয় ওভারে গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি নেন সাকিব। ৯০ রানে ৪ উইকেট হারানো ওমান পরবর্তী ২১ রান যোগ করতেই হারায় আরো ৫ উইকেট। ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৭ রানে থামে স্বাগতিকদের ইনিংস। এতে বাংলাদেশী বোলাররা অতিরিক্ত দিয়েছেন ১২ রান। সাকিব ৪ ওভারে ২৮ রানের বিনিময়ে নেন ৩টি উইকেট। ৩৬ রান দিয়ে মোস্তাফিজের শিকার ৪টি উইকেট।
কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর দেয়া ধারণা অনুযায়ীই একাদশে কেবল একটি পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। ফর্ম নিয়ে ভুগতে থাকা সৌম্যের জায়গায় ফেরানো হয় আরেক বাঁহাতি ওপেনার নাঈম শেখকে। প্রথম ম্যাচে টস জিতে আগে বোলিং বেছে নিলেও, হিসেবি ম্যাচে আগেই ছক কষে রেখেছে বাংলাদেশ দল। টস জিতে এবার ব্যাটিংই বেছে নেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
টি-২০ ক্রিকেটে খুবই সাধারণ বিষয় হলো, পাওয়ার প্লের ফিল্ডিংয়ের বিধিনিষেধ কাজে লাগিয়ে যত বেশি রান করে নেয়া যায়। চলতি টি-২০ বিশ্বকাপে এ কাজটি একদমই করতে পারছে না বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। অবশ্য বরাবরই বাংলাদেশের সাথে এ অভিযোগটি সেঁটে আছে।
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ২৫ রান। আজ ওমানের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে বাংলাদেশ করতে পেরেছে ২ উইকেটে ২৯ রান। ক্রিকেটাঙ্গনে প্রচলিত কথা আছে, নতুন জীবন পাওয়া মানেই ব্যাটারের নামের পাশে বড় ইনিংস লেখা। কিন্তু ওমানের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে সেই কাজটি করতে পারলেন না বাংলাদেশ দলের ডানহাতি ওপেনার লিটন দাস। খেলার দ্বিতীয় ওভারেই কালিমুল্লাহর বল লিটনের ব্যাট ঘেঁষে উইকেটকিপার নাসিম খুশির গ্লাভসে পৌঁছলে সরাসরি আঙুল তুলে দেন নিউজিল্যান্ডের আম্পায়ার ক্রিস গাফানে। ভাগ্যবান লিটন এ দফায় রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান। পরের ওভারের তৃতীয় বলে বিলালের বলে লিটনের সহজ ক্যাচ ছাড়েন ওমানের এক ফিল্ডার। কিন্তু নতুন জীবন পাওয়া বাংলাদেশ ওপেনার পরের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন। নতুন জীবন পাওয়া মানে সবার ভাগ্য ফেরা নয়। আগের ম্যাচে রান করা লিটন এবার করলেন এক রান বেশি (৬)।
আগের ম্যাচের পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে আজ তিন নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হয়েছিল শেখ মাহেদি হাসানকে। পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে বোলার ফয়েজ বাটের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ওয়ান-ডাউনে নামা মাহেদি। ৪ বল মোকাবেলায় রানের খাতাই খুলতে পারেননি তিনি। দলীয় রান যখন ২১, তখন দুই উইকেট নেই বাংলাদেশের।
তৃতীয় উইকেটে ধীরে ধীরে দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন ওপেনার নাইম শেখ ও সাকিব আল হাসান। ১০১ রানের মাথায় সাকিব রান-আউট হলে ভাঙে ৮০ রানের জুটি। ২৯ বলে ৬টি চারে ৪২ রান আসে সাকিবের উইলো থেকে। তবে ৪৩ বলে ফিফটি তুলে নেন, সৌম্যর জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া নাঈম ১৩.১ ওভারে দলীয় শতরান করে বাংলাদেশ। পাঁচে ব্যাট করতে নামা নুরুল হাসান সোহান এ ম্যাচেও ব্যর্থতার ছোবলে গায়েল হন। দলের যখন দ্রুত রান তোল প্রয়োজন, তখন ৪ বলে ৩ রান করে ফেরেন তিনি। ৫ বলে ৪ রান করে ফেরেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। তার পর পরই ফেরেন নাঈম শেখ। ৫০ বলে ৬৪ রান করেন বাংলাদেশ ওপেনার। ৪টি ছক্কা ও ৩টি চারে নান্দনিক ইনিংসটি সাজান তিনি। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহীম ফেরেন ৬ রানে। রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ১০ বলে ১৭ রান করেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। শেষ ওভারের শেষ বলে ব্যাটার মোস্তাফিজুর রহমান ২ রানে আউট হলে বাংলাদেশ ইনিংসের সমাপ্তি হয়। ওমানের হয়ে ফয়েজ বাট ও বিলাল খান ৩টি ও কালিমুল্লাহ ২টি উইকেট নেন। আগামীকাল পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : বাংলাদেশ : ২০ ওভার- ১৫৩/১০ (নাঈম ৬৪, লিটন ৬, মাহেদি ০, সাকিব ৪২, সোহান ৩, আফিফ ১, মাহমুদুল্লাহ ১৭, মুশফিক ৬, সাইফউদ্দিন ০, তাসকিন ১*, মোস্তাফিজ ২; বিলাল ৪-০-১৮-৩, কালিমুল্লাহ ৪-০-৩০-২, ফয়েজ ৪-০৩০-৩)
ওমান : ২০ ওভার- ১২৭/৯ (জতিন্দর ৪০, প্রজাপতি ২১, জিশান ১২; তাসকিন ৪-০-৩১-০, মোস্তাফিজ ৪-০৩৬-৪, সাইফউদ্দিন ৪-০-১৬-১, সাকিব ৪-০-২৮-৩, মাহেদি ৪-০-১৪-১)
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : সাকিব আল হাসান।


আরো সংবাদ



premium cement