২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আর লজ্জা পেতে চাইবে না বাংলাদেশ

-

আত্মবিশ্বাস শব্দটি কেমন যেন ঠুনকো হয়ে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট শিবিরে। আগের মতো বুক চওড়া করে, কঠিন চেহারায়, বুদ্ধিদীপ্ত চাহনীতে, চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় বলতে পারছে না আমরা জিতব। অথচ স্কটল্যান্ডের অধিনায়ক অবলীলায় বলে দিলেন, বাংলাদেশকে পাপুয়া নিউগিনি কিংবা ওমানের কাতারেই দেখছি। টি-২০তে কোনো ফেবারিট দল নেই, নিজের দিনে সেরা খেলা দলটাই জিতে যেতে পারে। এমন সাহসী মন্তব্য কিংবা হুঙ্কার কোনোটিই ছিল না টাইগারদের গর্জনে। আত্মবিশ্বাসের পারদ তলােিত থাকায় শঙ্কা জেগেছে দ্বিতীয় ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে জিততে পারবে তো বাংলাদেশ। প্রশ্নটা জেগেছে কারণ শুরুর দিনে ওমান কোনো উইকেট না হারিয়ে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে জিতেছে ১০ উইকেটে। ঘুরে দাঁড়ানোর মিশনে পরের ম্যাচে আর লজ্জা পেতে চাইবে না বাংলাদেশ। আজ রাত ৮টায় মাসকাট আরব আমিরাত স্টেডিয়ামে হবে ম্যাচটি।
বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে গ্রুপÑ ‘বি’-তে ফেবারিট বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচেই কঠিন পরীক্ষা, তবু হাল ছাড়েননি বার্জার। বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় ছাড়া কিছুই ভাবেনি তার দল, এই প্রচ্ছন্ন হুমকি সত্যি করে দেখিয়েছে শিষ্যরা। ওমানের মাসকটে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। যে হার টাইগারদের মানসিকতায় চিড় ধরিয়েছে। ম্যাচের শুরুতেই সাইফউদ্দিনের ধাক্কা, মেহেদি ও সাকিবের ঘূর্ণিতে ৫৩ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারে চলে গিয়েছিল স্কটল্যান্ড। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষ করতে পারা আর টেনেটুনে ১০০ রান করাই মনে হচ্ছিল স্কটিশদের জন্য বহুদূরের কোনো লক্ষ্য। তখন দলের হাল ধরে ক্রিস গ্রিভস। মার্ক ওয়াটের সাথে ৫১ রানের জুটি গড়ে প্রথমে ১০০ রান পার করে দিয়েছেন। ২৮ বলে ৪৫ রানে দলকে এনে দেন ১৪০ রানের লড়াকু স্কোর। জবাবে শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ ওভার ফুরিয়ে যাওয়ার আগে ১৩৪ রান করতে পেরেছিল। এই অপ্রত্যাশিত হারে টি-২০ বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে ২০ ম্যাচে হারের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ২০০৭ সাল থেকে আগের ম্যাচ পর্যন্ত মোট ২৬টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এই ২৬ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে পাঁচটিতে, পরিত্যক্ত হয়েছে একটি। আর বাদবাকি ২০ ম্যাচেই বাংলাদেশের ভাগ্যে হার লেখা ছিল।
জয়-পরাজয়ের অনুপাতে বাংলাদেশের থেকে বাজে অবস্থায় আছে শুধু পাপুয়া নিউগিনি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও হংকং। পাপুয়া নিউগিনি ও আরব আমিরাত টি-২০ বিশ্বকাপে খেলা সব ক’টি ম্যাচেই হেরেছে। ওদিকে ছয় ম্যাচ খেলে হংকং হেরেছে পাঁচটিতেই। তাদের একমাত্র জয় ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি হারের রেকর্ড বাংলাদেশেরই। ২০০৭ সালে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে পরের চার ম্যাচেই হার। ২০০৯-২০১২ এই তিন বিশ্বকাপে দু’টি করে ম্যাচ খেলে সব ক’টিতেই হার। ২০১৪ সালে প্রথম পর্বে এক হারের পর দ্বিতীয় পর্বে চার ম্যাচেই পরাজয়। ২০১৬ বিশ্বকাপেও দ্বিতীয় পর্বের সব ম্যাচে পরাজয়। এবার তো বিশ্বকাপ শুরুই হলো হার দিয়ে।
হারের থেকে বাংলাদেশের ঠিক পরেই আছে ইংল্যান্ড। টি-২০ বিশ্বকাপে মোট ৩২ ম্যাচে জয় পেয়েছে ১৫টিতে, হেরেছে ১৬ ম্যাচে। বাংলাদেশ, ইংল্যান্ডের পরই আছে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপে পাকিস্তান হেরেছে ১৪ ম্যাচে (৩৪ ম্যাচে), ২৯ ম্যাচ খেলা অস্ট্রেলিয়ার হার ১৩ ম্যাচে। অস্ট্রেলিয়ার মতোই ১৩ ম্যাচে হারলেও নিউজিল্যান্ড ম্যাচ খেলেছে একটি বেশি।
অভিজ্ঞ অনেকেই এখন বাংলাদেশে সফর করা জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। নিজেদের মতো উইকেট বানিয়ে জয় এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। সাকিব আইপিএলে নিজের অনুশীলনের ধুয়া তুলে গেলেও বাস্তবে ফাকা। স্কটিশদের বিপক্ষে ২০ রান করলেও ছিলেন নড়বড়ে। শরীর বাঁচাবেন না পা বাঁচাবেন সেটিই যেন স্থির করতে পারছিলেন না। ২৩ বলের মধ্যে ১৬টি বলই ছিল তার আই কন্ট্রাকের বাইরে। মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটেছিল। মাহমুদুল্লাহ, সাকিব, মুশফিক সবাই যেন ছক্কা হাঁকাতে ব্যস্ত ছিলেন। তাদের আউটের ধরনগুলো উৎকৃষ্ট ব্যাটারের হতে পারে না। বাংলাদেশের ধরনই যেন হয়ে গেছে ধরাবাঁধা। ১০০ থেকে ১৩০ এর মধ্যেই যেন খুঁজে পেতে চান জয়ের ধারা। যেটি ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘটেছে। আজ ওমানের বিপক্ষে সে ধারা থেকে বেরিয়ে না আসতে পারলে দ্বিতীয়বারের মতো অঘটন ঘটতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement