২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ

পূজামণ্ডপে হামলার বিচার চেয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

-

দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির এবং পূজামণ্ডপে হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন হলের কয়েক শ’ শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং ইসকন এ বিক্ষোভ করে। এ সময় হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিতের দাবিসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি কোথাও আর এ ধরনের হামলা-ভাঙচুর বা সহিংসতার ঘটনা ঘটলে আন্দোলনকারীরাই তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
এ দিকে টানা পৌনে ৪ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলায় শাহবাগ মোড় দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে রাজধানীর পল্টন, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, বাংলা মোটর, ফার্মগেট ও টিএসসিমুখী সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। এ সময় সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। অনেকে রিকশায় ও হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান। যানজটের প্রভাব পড়েছে গাবতলীসহ পুরো রাজধানীতে। বেলা ২টার দিকে বিক্ষোভকারীরা শাহবাগ মোড় ত্যাগ করলে ধীরে ধীরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, ঢাবি জগন্নাথ হলসহ অন্যান্য হলের শিক্ষার্থী শাহবাগ মোড়ে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তাদের সাথে ঢাবির কিছু শিক্ষকও যোগ দেন। আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেনÑ ঢাবি জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহা, সাবেক প্রাধ্যক্ষ অসীম কুমার সরকার ও আইন বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল। দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেয় ইসকন বাংলাদেশ। কর্মসূচির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ‘সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা, দিতে হবে দিতে হবে’, ‘৪৬-এর চেতনায়, বাংলাদেশ চলবে না’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, উগ্রবাদের ঠাঁই নাই’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘আমার ভাইয়ের খুনি কে, ফাঁসি দাও দিতে হবে’ প্রভৃতি স্লোগান দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তারা। আন্দোলনের সমন্বয়ক জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়দেব দত্ত জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের দাবি মেনে না নেন তাহলে আবার আন্দোলনে যাবো। আর এর মধ্যে যদি আবার কোনো মন্দিরে হামলা চালানো হয় তাহলে আমরা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেব। জয়দেব দত্ত আরো বলেন, আশা করেছিলাম আমাদের সাত দফা দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহল থেকে কোনো একটা আশ্বাস আসবে; কিন্তু সে রকম কোনো আশ্বাস আমরা পাইনি। ইসকন বাংলাদেশ আমাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করেছে এবং তাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা এ ব্যাপারে আশাবাদী।
এ সময় তিনি সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলোÑ হামলার শিকার মন্দিরগুলো সংস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ড ও লুটপাটের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, জাতীয় সংসদে আইন করে মন্দির ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে হবে, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও কমিশন গঠন করতে হব, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের আধুনিকায়ন করে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে, জাতীয় বাজেটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হবে।
অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, আমরা সবাই বাংলাদেশের মানুষ। সবার শরীরে একই রক্ত প্রবাহিত হয়। তাহলে এ ধর্মীয় উন্মাদনা কেন? সরকারের প্রতি আমাদের দাবি, এই সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ করতে হবে। দ্রুত হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আমরা রোহিঙ্গা নই, আমরা বাংলাদেশী। আমরা আমাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের অধিকার রাখি। আমাদের এই অধিকারে যারা হাত দিয়েছে, তাদের হাত আমরা ভেঙে দেবো।
গাজীপুর জেলা হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক রঘুনাথ বলেন, এ পর্যন্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অনেক হামলার ঘটনা ঘটেছে। কোনো ঘটনার বিচার হয়নি। আগে যদি বিচার হতো তাহলে নতুন এসব ঘটনা ঘটত না। তবে যত হামলাই হোক না কেন, আমরা বাংলাদেশ ছাড়ব না। এ দেশেই থাকব। তবে সরকারকে সাম্প্রতিক সব হামলার বিচার করতে হবে।
প্রসঙ্গত, দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের একটি মন্দিরে পবিত্র কুরআন শরিফ অবমাননার কারণে কয়েকটি মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনীসহ কয়েকটি জেলায় মন্দিরে হামলা হয়, তাতে নিহত হয় অন্তত ছয়জন। এ পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement