১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টেকেরঘাট চুনাপাথর প্রকল্পে ৬০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে

-

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের কার্যক্রম ২৫ বছর বন্ধ। দীর্ঘদিন এই প্রকল্প বন্ধ থাকার কারণে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় অযতœ অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে এই প্রকল্পের প্রায় ৬০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন বিসিআইসির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হলেও, প্রকল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি পড়ে আছে আগের মতোই। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এসব যন্ত্রাংশের বেশির ভাগই অকেজো হয়ে পড়েছে। লোকমুখে শোনা গেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ২০ কেটি টাকার মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। এই প্রকল্পের বেশ কিছু জমি স্থানীয় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট চক্র দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চুনাপাথর খনিজ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দেশের সিমেন্টের চাহিদা পূরণ করতে ১৯৪০ সালে সুরমা নদীর তীরে ছাতকে প্রতিষ্ঠা করা হয় আসাম বেঙ্গল সিমেন্ট ফ্যাক্টরি। বর্তমানে এটি ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি নামে সমধিক পরিচিত। এই প্রকল্পটি চালুর সময় ভারত থেকে চুনাপাথর আমদানি করা হতো। পরবর্তীতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চুনাপাথর উত্তোলনের জন্য ১৯৬১ সালে ভূ-তত্ত্ব জরিপ চালিয়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের ভাঙ্গারঘাট ও সীমান্তবর্তী টেকেরঘাটে পাঁচটি কূপ খনিতে প্রায় ১৩ কোটি ২৬ লাখ মেট্রিক টন চুনাপাথর মজুদ থাকার বিষয় নিশ্চিত করা হয়। ১৯৬৫ থেকে ৬৬ সাল পর্যন্ত টেকেরঘাট খনিজ প্রকল্পের তিনশ’ ২৬ একর জায়গার মধ্যে চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে। এতে ৭০ দশমিক ৬৯ একর এবং ৯২ দশমিক ২৫ একর এলাকায় দু’টি কোয়ারিতে প্রথম চুনাপাথর উত্তোলন কাজ শুরু হয়। আর এতে লাভের মুখ দেখে এই প্রকল্প।
পরবর্তীতে একাধারে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৬ লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন চুনাপাথর উত্তোলন করা হয়। অভিযোগ উঠে, বিসিআইসির কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক সংগঠনের কিছু স্বার্থান্বেষী লোকজনের কারণে লাভের এ প্রকল্পটি হঠাৎ করে লোকসানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়। পরে এটি বিসিআইসির প্রতিষ্ঠান ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরির অধীনে স্থানান্তরিত হয়।
এরপর ১৯৯৬ সালের দিকে খনিজ প্রকল্পটিকে বন্ধ করে দিলে প্রায় চার শ’ শ্রমিক-কর্মচারীকে বিসিআইসির অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বদলি করা হয়। সর্বশেষ ২০০৭ সালের ২ অক্টোবরে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে ৩১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করা হলে প্রকল্পটির কার্যক্রম একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এখানে ৬০ কোটিরও বেশি টাকার যন্ত্রপাতি ছিল বলে চুনাপাথর খনিজ প্রকল্প এলাকার একাধিক সূত্র জানিয়েছে। বন্ধ থাকা চুনাপাথর খনিজ প্রকল্প এলাকায় অরক্ষিত অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের তিনটি ক্রেন, সাড়ে তিন কিলোমিটার ন্যারোগ্যাজ রেললাইন, ২০ লাখ টাকার স্লিপার, ৫ কোটি টাকার মূল্যের দুটি জেনারেটর, ২ কোটি টাকা মূল্যের লোকাল ট্রলি ইঞ্জিন ও পাঁচটি টিপিং টাব, বেকু।
এ ব্যাপারে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল বারি বলেন, তাহিরপুরের ‘টেকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পে আপাতত কোনো কিছু করার পরিকল্পনা নেই। এখানে কী পরিমাণ মালামাল আছে তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। এসব মালামাল দেখাশোনা করার জন্য আনসার সদস্য আছেন। তবে এখানে সিমেন্ট ফ্যাক্টরি করার আলোচনা চলছে। প্রকল্পের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।


আরো সংবাদ



premium cement