২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ধুনটে যমুনা তীর প্রকল্পের ১০০ মিটার ধসে গেছে

৩৭৬ কোটি টাকার প্রতিরক্ষা বাঁধেও শেষ রক্ষা হলো না স্কুলটির

-

কংকিটের সিসি ব্লক দিয়ে রাজবাড়ী সদর পদ্মার ডান তীর বাঁধাই ও বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলও শষ রক্ষা হলো না চর সিলিমপির সরকারি প্রাথমিক স্কুলের পাকা ভবনটির।
অবশেষে নদীভাঙনের কবলে পড়ে পদ্মার পেটে গেল রাজবাড়ীর সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সেই চর সিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।
গত শুক্রবার চর সিলিমপুর স্কুল সংলগ্ন পদ্মা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ৬০ মিটার সিসি ব্লক ভেঙে বিদ্যালয়টি নদীতে ধসে পড়ে। এ সময় এলাকার শত শত মানুষ তাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানটি নিজের চোখে নদীতে চলে যেতে দেখে কাঁদতে থাকে। বিদ্যালয়টি ভেঙে যাওয়ায় পিছিয়ে পড়া চরাঞ্চলের মানুষের প্রায় দুই শতাধিক সন্তানের পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে গেল। এই স্কুলটিই ছিল তাদের একমাত্র পড়ালেখার স্থান।
তবে প্রশাসন বলছে, এই বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার যাতে কোনো ধরনের বিঘœ না ঘটে সে বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পানি উন্নয়ন সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীতে পদ্মানদীর ডান তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্পের জন্য ৩৭৬ কোটি টাকার কাজ হয়। এতে সাড়ে সাত কিলোমিটার এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ না হতেই কয়েক দফার ভাঙনে সাড়ে সাত কিলোমিটার এলাকার প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ মিটার কংক্রিটের সিসি ব্লক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
বিদ্যালয়সংলগ্ন একাধিক বাসিন্দা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার নদী ভাঙনরোধে এত টাকা ব্যয় করছে অথচ যারা ঠিকাদার তারা কাজ ভালো করছে না। ভালো মতো কাজ করলে আজ এই বিদ্যালয়টি ভাঙত না।
স্থানীয় বাসিন্দা নায়েব আলী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে আজ আমাদের একমাত্র স্কুলটি রক্ষা হলো না। সেই নদীর পেটেই চলে গেলো স্কুলটি। স্কুল ছাড়াও প্রায় আড়ই শ পরিবার এখন হুমকির মুখে রয়েছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবির বলেন, আমাদের পড়ালেখার একমাত্র স্কুলটি আজ নদীতে চলে গেল। আমরা এখন কোথায় পড়ব।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ইমান আলী ফকির বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার পর থেকে বিদ্যালয়ের মূল ভবনেই পাঠদান করাচ্ছিলাম। হঠাৎ ১৫ সেপ্টেম্বর ভোরে স্কুলের পাশেই সিসি ব্লক ভেঙে নদীতে চলে যাওয়ার পর থেকে আর ওখানে পাঠদান করাচ্ছিলাম না। কারণ তখন মূল ভবনটি চরম ঝুঁকিতে ছিল। শিশুদের নিরাপত্তার কথা ভেবে পাশের টিনশিডে ক্লাস নিচ্ছিলাম।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার ফাহমি মো: সায়েফ বলেন, বিদ্যালয়টি পদ্মা নদীতে ভেঙে গিয়েছে জেনেছি। কিন্তু বিদ্যালয়ের পাশেই একজনের মালিকানা জমি আছে, আমরা সেই মালিকানা জমি চেয়েছি। তিনি জমি দিতে চেয়েছেন। জমিতে বিদ্যালয়ের পড়াশোনার জন্য টিনশেড তৈরি করে সেখানেই বিদ্যালয়ের কাজগুলো পরিচালনা করা হবে। পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে ভবন তৈরি করা হবে।
ধুনটে যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ১০০ মিটার ধসে গেছে
ধুনট (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প এলাকার ১০০ মিটার নদীতে ধসে গেছে। গত শুক্রবার সকাল থেকে উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামে তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে ধস শুরু হয়। শনিবার দুপুর পর্যন্ত সেখানে ধস অব্যাহত ছিল। তবে ধস ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে পুকুরিয়া-ভুতবাড়ি এলাকায় ৬০০মিটার অংশ যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ করা হয়। নদীর তীর সেøাপ করে তার উপর জিও চট বিছিয়ে সিসি ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বর্তমানে যমুনা নদীতে পানি কমা অব্যাহত রয়েছে। তবে নদীর পানি তীর সংরক্ষণ প্রকল্প এলাকায় ঘূর্ণায়বর্তের সৃষ্টি করেছে। এ কারণে গত শুক্রবার সকাল থেকে পুকুরিয়া এলাকায় ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্প এলাকায় ধস দেখা দেয়। শনিবার দুপুর পর্যন্ত ওই এলাকায় তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রায় ১০০মিটার নদীতে ধসে গেছে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী নিবারন চক্রবর্তী বলেন পুকুরিয়া গ্রামে শুক্রবার থেকে তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে এলাকায় ধস দেখা দেয়। শনিবারও ধস অব্যাহত রয়েছে। তবে ধস ঠেকাতে ইতোমধ্যে বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement