১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কেন্দ্রে যায়নি ৩১ শতাংশ ভোটার

ইউপি চেয়ারম্যান পদে আ’লীগ-৭৭টি স্বতন্ত্র-৩৯টি
-

স্থানীয় সরকার পর্যায় নির্বাচনেও দেশের সাধারণ মানুষের আগ্রহটা হারিয়ে গেছে। দলীয় প্রতীক দিয়ে এই নির্বাচনের গায়ে রাজনৈতিক চাদর পরিয়ে ভোটারদের নির্বাচন বিমুখ করা হয়েছে। উৎসবমুখর এই নির্বাচনে আগে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়লেও সোমবার অনুষ্ঠেয় ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ৩০ দশমিক ৭০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রে যায়নি। ১১৭টি ইউপির নির্বাচনে চেয়ারম্যান পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৭৭টি, স্বতন্ত্র ৩৯টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি একটি। মাঠের প্রধান বিরোধী দলসহ নিবন্ধিত বেশির ভাগদল নির্বাচনে অংশ নেয়নি বলে ইসির তথ্যে জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপসচিব (চলতি দায়িত্ব) মো: মিজানুর রহমানের দেয়া তথ্যানুযায়ী, দশম ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) প্রথম ধাপে ২০ সেপ্টেম্বর সোমবার ১৬০টির মধ্যে ব্যালটে ১০৯টি এবং বাকিগুলোতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হয়েছে। ৪৩টি ইউপিতে ভোট ছাড়াই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। চেয়ারম্যান পদের ফলাফল চারটি স্থগিত রয়েছে, একটি করে কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিতের কারণে। গড়ে ভোট পড়েছে ৬৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। ভোট হওয়া ১১৭টি ইউপিতে মোট ভোটার ১৯ লাখ ৩০ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৭৫জন ভোটার। ভোটকেন্দ্রে যায়নি পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৫৬৩ জন ভোটার।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মোট ভোটের মধ্যে পেয়েছে সাত লাখ ৬৪ হাজার ১৯৫টি। প্রদত্ত ভোটের ৪২ দশমিক ১৮ শতাংশ। আর স্বতন্ত্রসহ অন্যরা পেয়েছেন তিন লাখ ৫৯ হাজার ৭০৬ ভোট, যা প্রদত্ত ভোটের ২৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে সন্দ্বীপের মুছাপুর ইউপিতে ৪৩.৭৬ শতাংশ। ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনীত প্রার্থী একটি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। তালা উপজেলার খলিযখালী ইউনিয়ন পরিষদে ২১ হাজার ৯৫ ভোট পেয়ে মোল্লা সাবির হোসেন বিজয়ী হয়েছেন। ইউপিতে তার নিকটবর্তী প্রার্থী আওয়ামী লীগের মোজাফফর রহমান পান ছয় হাজার ১৮৫ ভোট। জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনেরও প্রার্থী ছিল এই নির্বাচনে।
এ দিকে প্রথম ধাপে গত জুনে অনুষ্ঠিত ২০৪টির নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়েছিল ৬৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ২০৪ ইউপিতে ভোটার সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ৮৯ হাজার ৯২৩ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭১৪ জন। অর্থাৎ ভোট পড়ার হার ৬৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। আর ২০১৬ সালের ২২ মার্চ ৭১২টি ইউপিতে প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ হয়েছিল। সে সময় ভোট পড়েছিল ৭৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল।
প্রধান সমন্বয়কারী সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) দিলীপ কুমার সরকারের সাথে কথা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, এক সময় সমাজসেবা করার জন্য স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচনে অনেক পরিবার অংশ নিত; কিন্তু এখন দলভিত্তিক নির্বাচনের কারণে সেই সুযোগটা কমে গেছে। তিনি বলেন, এখন দলভিত্তিক নির্বাচন; কিন্তু দেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী একটি দল নির্বাচন করল না। ফলে মানুষের সেই আগ্রহ নির্বাচন সম্পর্কে থাকল না। মানুষের নির্বাচনে আগ্রহ হলো, দেখি কারা জেতে। এসব নির্বাচন থেকে মানুষ পূর্বাভাস নিতে চায়, যে আগামী দিনে কী হতে পারে।
তিনি বলেন, এক তো প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীহীন নির্বাচন, অন্য দিকে ভোটের আগেই বিনা ভোটে ৪৩ ইউপি, তিন পৌরতে নির্বাচিত। আবার নির্বাচন হচ্ছে আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগে। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ভার্সেস আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। তারা তারাই মারামারি, তারা তারাই সংঘর্ষ। ফলে বিভিন্ন কারণে সাধারণ মানুষের আগ্রহ কম থাকারই তো কথা।
উপস্থিতি এত কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সুজনের দিলীপ কুমার জানান, ইউপি নির্বাচন না হয়ে অন্য নির্বাচন হলে উপস্থিতির এই সংখ্যা আরো কম হতো। মানুষ জানেই তো এই নির্বাচনে কী হবে। যখন আগে থেকেই ভোটাররা জেনে ফেলে কী হবে, তখন ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ আর থাকে না।
ইসির ফল বিশ্লেষণে জানা গেছে, সোমবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এক-তৃতীয়াংশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। অবশ্য স্বতন্ত্র হলেও প্রার্থীদের বেশির ভাগই ছিলেন আওয়ামী লীগ ঘরানার। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তারা।
জানা গেছে, সোমবার প্রথম দফার স্থগিত ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও একক প্রার্থী থাকায় এসব ইউপির ৪৩টিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের প্রয়োজন পড়েনি। এসব ইউপিতে আওয়ামী মনোনীত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে সোমবারের ভোটে চেয়ারম্যান পদে ১১৭টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ছয়টি ইউপির মধ্যে পাঁচটিতে ব্যালট এবং একটিতে ইভিএম ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যালটে অনুষ্ঠিত পাঁচটি ইউপির সবগুলোতেই স্বতন্ত্ররা জয়ী হয়েছেন। অপর দিকে ব্যালটে অনুষ্ঠিত বারাকপুর ইউপিতে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী।
বাগেরহাট জেলার ২৭টি ইউপির মধ্যে ২৬টিতেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। এ জেলার কেবল মোরেলগঞ্জ উপজেলার দু’টি ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। বাগেরহাট জেলার ৩৯টি ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে চেয়ারম্যান পদে ভোট গ্রহণের প্রয়োজন পড়েনি।
পর্যালোচনা করে দেখা গেছেÑ সাতক্ষীরা জেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তুলনামূলকভাবে বেশি বিজয়ী হয়েছে। এ জেলার মোট ২১টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১১টি ইউপির চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা ৯টিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছে। এ জেলার একটি ইউপিতে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী জিতেছেন।
ইভিএমে ভোটের হার বেশি : ইউপি নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটের হার কাগজে ব্যালটের তুলনায় কিছুটা বেশি পড়েছে। সচরাচর নির্বাচনে কাগজের ব্যালটে ভোটের হার বেশি উপরে থাকলেও এবার কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেছে।
সোমবার ইউপি নির্বাচনে গড় ভোটের হার ৬৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। মোট ২০ লাখ ৯৩ হাজার ১১৭টি ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৩০০টি।
নির্বাচনে ব্যালটে ভোটের হার ছিল ৬৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে ১৯ লাখ ৩০ হাজার ১৩টি ভোটের মধ্যে পড়েছে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৭৫টি ভোট।
আটটি ইউপিতে ইভিএমে ভোট হয়। ইভিএম-এর ভোট ছিল ৬৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এক লাখ ৬২ হাজার ৯৭৯টি ভোটের মধ্যে ইভিএমে পড়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৭২৫টি।


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরে দুর্ঘটনায় মা-ছেলে নিহত, আহত বাবা-মেয়ে দিরাইয়ে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের পাঠ্যক্রম গ্রহণের আহ্বান রাষ্ট্রপতির বগুড়ায় পুলিশ পরিচয়ে ট্রাকভর্তি কলা ছিনতাই : গ্রেফতার ৪ ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থী নাটক প্রচার করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানকে আইনি নোটিশ, চুক্তি বাতিল স্নান করতে গিয়ে দূর্গাসাগর দীঘিতে ডুবে একজনের মৃত্যু ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে লালন করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে : শ্রিংলা মানবতার কল্যাণে জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে হবে : জামায়াত আমির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৭ ফিট তামিমকে যেকোনো ফরম্যাটের দলে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক বিকেবি ও রাকাব একীভূতকরণের প্রতিবাদে রাজশাহীতে মানববন্ধন

সকল