২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তালেবান মন্ত্রিসভায় সংখ্যালঘু প্রতিনিধি আসছে নারী সদস্য

আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তার আহ্বান ; স্বীকৃতিতে তাড়াহুড়া নয় : পাকিস্তান
-

আফগানিস্তানে তালেবান মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়িয়ে তাতে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মন্ত্রিসভায় নারী সদস্য নেয়ারও আভাস দেয়া হয়েছে। অন্য দিকে ত্রাণ সহায়তা দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তালেবান। সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আডানোম গেব্রিয়াসিসের সাথে তালেবান নেতাদের এক বৈঠকে এই আহ্বান জানানো হয় বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের ট্রিবিউন পত্রিকা।
কাবুল সফরের সময় ডব্লিউএইচও প্রধান আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোল্লা হাসান আখুন্দের সাথে বৈঠক করেন। আফগান প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি স্বাস্থ্য খাত এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ত্রাণ সহায়তা না দেয়, তাহলে আফগানিস্তান মানবিক সঙ্কটে পড়বে।
বেশ কয়েকটি দেশ ও প্রতিষ্ঠানে আফগান সরকারের জব্দ হয়ে থাকা সম্পদ ছাড় করারও আহ্বান জানান আফগান প্রধানমন্ত্রী। ডব্লিউএইচও প্রতিনিধিদলকে তিনি বলেন, ‘চাপে সমস্যার সমাধান হবে না, আলোচনার মাধ্যমে তা হতে পারে। এখনো যেসব নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার হওয়া উচিত।’ তালেবান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডব্লিউএইচও প্রতিনিধিদল জানিয়েছে তারা আফগানিস্তানে মানবিক সঙ্কট এড়ানোর চেষ্টা চালাবে। এ ছাড়া সহায়তা বাড়ানোরও চেষ্টা করা হবে।
সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভায় সংখ্যালঘু : আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করেছে তালেবান। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সম্প্রসারণের ব্যাপারে গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকদের জায়গা দেয়া হয়েছে। নারীদেরও পরে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।’
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রসঙ্গে জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আমাদের সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের দায়িত্ব জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যসব দেশের।’ নতুন করে যাদের মন্ত্রিসভায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে পাঞ্জশির এবং বাঘলান প্রদেশের বাসিন্দাও রয়েছেন। পাঞ্জশির হচ্ছে ন্যাশনাল রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্টের ঘাঁটি। তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির খবর অনুসারে, নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেনÑ উত্তর-পূর্ব পাঞ্জশির প্রদেশের বিশিষ্ট বিনিয়োগকারী নূরউদ্দিন আজিজি, যিনি ব্যবসা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। উত্তর সার-ই-পুল এবং বাঘলান প্রদেশের দুই ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আজিম সুলতানজাদা এবং মোহাম্মদ বশির এই মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
ডা: কালন্দর ইবাদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। অন্য দিকে ডা: আবদুল বারী ওমর এবং ডা: মোহাম্মদ হাসান গিয়াসী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। শীর্ষ দুই তালেবান কমান্ডার সদর মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং আবদুল কাইয়ুম জাকির যথাক্রমে স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপমন্ত্রী হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মুজিব-উর-রেহমান ওমর। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে হাজী গোলাম গাউস, সীমান্তবিষয়ক উপমন্ত্রী হাজী গুল মোহাম্মদ এবং শরণার্থীবিষয়ক উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আরসালা খারোটি ।কাবুল থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক হাশেম আহেলবারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালেবানের কাছে এটি নিশ্চিত হতে চায় যে, যখন তারা নতুন সংবিধান তৈরি করবে এবং নতুন নির্বাচন আইন করবে, যেখানে নারী এবং সংখ্যালঘুদের অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হবে।
স্বীকৃতির বিষয়ে তাড়াহুড়া নয় : পাকিস্তান
এ দিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি বলেছেন, আফগানিস্তানের নতুন তালেবান শাসকদের বুঝতে হবে যে, স্বীকৃতি ও দেশ পুনর্গঠনে সহায়তা চাইলে তাদের আরো দায়িত্বশীল এবং আন্তর্জাতিক মতামত ও নিয়মের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হবে। আরব নিউজের খবরে বলা হয়, জাতিসঙ্ঘের ৭৬তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গতকাল তিনি বলেন, স্বীকৃতি দেয়ার আগে দেশগুলো আফগানিস্তানের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। শাহ মাহমুদ কোরেশি বলেন, ‘আমার মনে হয় না এই মুহূর্তে স্বীকৃতি দিতে কারো তাড়া আছে, আর তালেবানের উচিত এগুলোর প্রতি নজর রাখা।’ তিনি বলেন, তালেবান সরকার বিশ্বের স্বীকৃতি চাইলে তাদের আরো বেশি স্পর্শকাতর এবং আন্তর্জাতিক মতামত গ্রহণে আগ্রহী হতে হবে। পাকিস্তানের লক্ষ্য হলো আফগানিস্তানের শান্তি ও স্থিতিশীলতা। আর সেটি অর্জনে আফগানিস্তানে একটি অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠনের পরামর্শ দেন তিনি। শাহ মাহমুদ কোরেশি বলেন, তাদের প্রাথমিক বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, তারা এগুলোর বিরোধী নয়, ‘পরেরটা দেখা যাক।’ তালেবান সরকার আফগান নারীদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কাজে যোগ দিতে দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশ ও প্রতিষ্ঠান আফগান সরকারের সম্পদ জব্দ রেখেছে সেগুলো দ্রুত ছাড় করে দেয়ার আহ্বান জানান শাহ মাহমুদ কোরেশি।
ছাত্রীদের দ্রুত স্কুলে ফেরাতে কাজ চলছে : তালেবান জানিয়েছে, শিগগিরই স্কুলে ফিরবে ছাত্রীরা। এ-সংক্রান্ত বিষয়াদি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব এর অনুমতি দেয়া হবে। গতকাল কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের এমন অবস্থান তুলে ধরেন তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ। শনিবার থেকে আফগানিস্তানের মাধ্যমিক বিদ্যালয় পুনরায় চালু হয়েছে। তবে শুধু ছেলে শিক্ষার্থী ও পুরুষ শিক্ষকদের ক্লাস রুমে ফিরতে বলা হয়েছে। তালেবান জানিয়েছে, নারীদের স্কুল পুনরায় চালু করার বিষয়ে কাজ করছে তারা।
জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আগে নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা দরকার।’ কাবুলে তালেবানের নিযুক্ত নতুন মেয়র পৌরসভার নারী কর্মীদের ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। মেয়রের তথ্য অনুসারে, পৌরসভার প্রায় তিন হাজার কর্মীই হলেন নারী। যেসব পদ পুরুষদের দিয়ে পূরণ করা যাবে সেগুলোতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কর্মরত নারীদের ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, যেমনÑ শহরের নারী টয়লেটে পুরুষরা কাজ করতে পারবে না। তাই এসব স্থানে নারীরা কাজ করবে। তালেবান কর্মকর্তারা বলছেন, নারীদের নিরাপত্তার জন্যই তাদের বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা প্রবর্তন হওয়ার পর তাদের কাজে ফিরতে বলা হবে।
আড়াই শ’র বেশি আফগান দোভাষীর তথ্য ফাঁস : আফগানিস্তানে ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে কাজ করা আড়াই শ’র বেশি দোভাষীর ই-মেইল ঠিকানাসহ অন্যান্য তথ্য ফাঁস হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস ফাঁসের ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ব্রিটেনে আশ্রয় নিতে চাওয়া এই আফগান দোভাষীদের অনেকেই এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক ই-মেইলে ‘ভুলবশত’ তাদের সবার ই-মেইল ঠিকানা কপি করে বসানো হয়েছিল। এর ফলে পাঠানো ই-মেইলটির সব প্রাপকই দোভাষীদের সবার ই-মেইল ঠিকানা, সেখানে থাকা নাম এবং কারো কারো ছবিও দেখতে পাবেন। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পরে এক বিবৃতিতে এই ‘ভুলের’ জন্য ক্ষমা চেয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ই-মেইলটি পাঠানো হয়েছে সেসব দোভাষীকে, যারা হয় এখনো আফগানিস্তানে আছেন বা অন্য কোনো দেশে চলে যেতে সক্ষম হয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement