১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কোভিড টিকার পর নারীদের মেন্সটুয়্যাল সমস্যা

- ছবি : সংগৃহীত

কোভিড-১৯ ভাইরাসের টিকা নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত হাজার হাজার নারীর মেন্সটুয়্যাল সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো গবেষণা এখন পর্যন্ত করা হয়নি তবে বাংলাদেশের গাইনোকোলজিস্টরা বলছেন, তাদের কাছে এখনো পর্যন্ত কোনো নারী এ ধরনের রিপোর্ট করেননি। এ ব্যাপারে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ টিকা শুরু হওয়ার পর থেকে ব্রিটেনে বিভিন্ন বয়সী ৩০ হাজার নারীর ম্যান্সট্রয়্যাল সাইকেল (পিরিয়ড বা মাসিক) বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কোভিড-১৯ টিকা নেয়ার পর কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই পিরিয়ড সাইকেলটি অনিয়মিত হয়ে গেছে।

ব্রিটেনের ইয়েলো কার্ড স্কিমে অনেক নারী তাদের ম্যান্সটুয়্যাশান সাইকেলে বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে রিপোর্ট করেছেন। উল্লেখ্য, ইউকে ইয়েলো কার্ডে যে কেউ স্বেচ্ছাভিত্তিতে তাদের যেকোনো শারীরিক সমস্যা নিয়ে রিপোর্ট করতে পারেন।

লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের রিপ্রোডাক্টিভ ইমিউনোলজিস্ট ড. ভিক্টোরিয়া মেল ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন যে, পিরিয়ড বাধাগ্রস্ত বা অনিয়মিত হওয়ার বিষয়টি যদিও এই নিরাপদ এবং স্বল্প সময়ের জন্য তবু এটা কেন ঘটছে এর একটি অনুসন্ধান করা উচিত। ব্রিটেন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ কোভিড-১৯ টিকার প্রভাব অনুসন্ধানে ১.৬৭ মিলিয়ন ডলার (১৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার) বিনিয়োগ করছে কোভিড টিকা নেয়ার পর নারীদের পিরিয়ডে কী প্রভাব পড়েছে দেখার জন্য। ইমিউনোলজিস্ট ড. ভিকোরিয়া বলেন, টিকায় করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে শরীর সাড়া দেয়ায় নারীদের পিরিয়ড ভারী হয়ে যেতে পারে অথবা বিলম্বিত হতে পারে কিন্তু এতে বিপজ্জনক কিছু ঘটবে না। ড. ভিক্টোরিয়া বলেন, টিকার নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে ভালো একটি গবেষণা টিকার সার্বিক সফলতার জন্য একটি সমস্যা রয়েই গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক কেট ক্লেন্সি এবং ক্যাথারিন লি এক লাখ ৪০ হাজার নারীর তথ্য সংগ্রহ করেছেন যেখানে নারীরা বলেছেন যে, কোভিড-১৯ টিকা নেয়ার পর তাদের পিরিয়ডে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। গার্ডিয়ান বলছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীদের এই অভিযোগকে পাত্তা দেয়া হয়নি টিকার ট্রায়ালের সময়।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের দু’জন গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে কথা বললে, তারা জানান যে কোভিড-১৯ টিকা নেয়ার পর থেকে টিকাপ্রাপ্ত অনেক নারীর গাইনিবিষয়ক চিকিৎসা তারা করেছেন কিন্তু এ পর্যন্ত পিরিয়ডবিষয়ক এমন কোনো অভিযোগ নিয়ে কোনো নারী তাদের কাছে আসেননি। এদের একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: রেজাউল করিম কাজল। অন্যজন নরসিংদী ১০০ শয্যা সরকারি হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা: নুর-ই শারমিন। এই দুই গাইনি বিশেষজ্ঞ বলেছেন, তারা রোগীদের কাছ থেকে এমন কোনো অভিযোগ এখনো পাননি।

ইনভিজিবল উইমেন বইয়ের লেখক কেরোলিন ক্রিয়্যাডো পেরেজ দি টেলিগ্রাফে লিখেছেন, কোভিড-১৯ টিকার বেশির ভাগ ক্লিনিকেল গবেষণায় নারীদের পিরিয়ডের বিষয়টিতে অনুসন্ধান চালানো হয়নি। তাদের পিরিয়ডের পর্যায়ক্রমের সমস্যাটিকে বাদ দেয়া হয়েছে। তবে ড. ভিক্টোরিয়া বলছেন, এটা নিয়ে অবশ্য উদ্বিগ্ন হওয়ার খুব বেশি কারণ নেই। এটা পিরিয়ডে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে না। ইতোমধ্যে অনেক গবেষণা ড্যাটা বিজ্ঞানীদের কাছে চলে এসেছে, গর্ভবতী হওয়া অথবা উর্বরা শক্তি (ফার্টিলিটি) কমে যাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব নেই।

করোনায় ভারতে ফের তিন শতাধিক মৃত্যু : মহামারী করোনাভাইরাসে ভয়াল থাবায় সংক্রমিত হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ দেশ ভারতে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল ফের ৩০০ ছাড়িয়েছে। যদিও আগের দিনের তুলনায় কমেছে প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এ ছাড়া গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে কোভিড শনাক্ত হওয়া মানুষের তুলনায় সুস্থ হয়েছেন বেশি লোক। ফলে গতকাল রোববার দেশটিতে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা আরো কমেছে, সাথে বেড়েছে সুস্থতার হারও।
এ দিন ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে কোভিড সংক্রমিত হয়েছেন ৩০ হাজার ৭৭৩ জন মানুষ। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় দেশটিতে নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমলো সাড়ে চার হাজারের বেশি। সর্বশেষ এই সংখ্যাসহ মহামারীর শুরু থেকে দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিতের মোট সংখ্যা তিন কোটি ৩৪ লাখ ৪৮ হাজার ১৬৩ জনে দাঁড়িয়েছে।

অপর দিকে শনিবারের তুলনায় রোববার ভারতে প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শেষ এক দিনে দেশটিতে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩০৯ জন। অর্থাৎ নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে ২৪ জন। মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রাণ হারিয়েছেন চার লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৮ জন।

এ দিকে দৈনিক সুস্থতা ও সংক্রমণের ক্ষেত্রে রোববারও ভারতে বজায় রয়েছে স্বাভাবিক চিত্র। অর্থাৎ নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে নতুন করে কোভিড আক্রান্ত হওয়া লোকজনের তুলনায় সুস্থ হয়েছেন বেশি মানুষ। ফলে এদিন ঘনবসতিপূর্ণ দেশটিতে আরো কমলো সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। শেষ এক দিনে ভারতে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন ৩৮ হাজার ৯৪৫ জন মানুষ। অপর দিকে দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি দাঁড়াল। ফলে দেশটিতে মোট সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা কমে তিন লাখ ৩২ হাজার ১৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে।

ভারতের মোট আক্রান্ত রোগীর শূন্য দশমিক ৯৯ শতাংশ (০.৯৯%) বর্তমানে সক্রিয়। শনিবারের তুলনায় গতকাল এই হার কমেছে। এ দিকে ভারতে সুস্থতার হার আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৬৮ শতাংশে পৌঁছেছে।

অন্য দিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে শনিবার দৈনিক সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেলেও গতকাল তা ফের ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে দৈনিক সংক্রমণের হার ১ দশমিক ৯৭ শতাংশে নেমেছে। গত ২০ দিন যাবৎ দেশটিতে এই হার তিন শতাংশের নিচেই রয়েছে।
টিকার তীব্র সঙ্কট আফ্রিকায় : বিশ্বজুড়ে গেল দুই মাসের মধ্যে গত সপ্তাহে মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রথমবারের মতো নিম্নমুখী হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। যদিও এখনো ব্যতিক্রম শুধু আফ্রিকা। সেখানে সংক্রমণের হার ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি দেখা দিয়েছে টিকার তীব্র সঙ্কটও। পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন না থাকায় আফ্রিকাজুড়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে জাতিসঙ্ঘের কোভ্যাক্স কর্মসূচিও।

আফ্রিকার দরিদ্রকবলিত অধিকাংশ দেশেই বর্তমানে টিকার সরবরাহ পাওয়ার বড় ভরসা জাতিসঙ্ঘের কোভ্যাক্স। যদিও চলতি বছর আফ্রিকা পাবে মাত্র ১৫ কোটি ডোজ। এতেও ঘাটতি থাকবে ৪৭ কোটির। আফ্রিকায় ডব্লিউএইচওর প্রধান মাতশিদিসো মোয়েতি বলেছেন, টিকাহীন আফ্রিকায় আগামীতে করোনাভাইরাস আরো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, চলতি বছরে তারা ৪০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, তা আফ্রিকায় সফল করা সম্ভব নয়। এর মাধ্যমে সব মিলেয়ে ১৭ শতাংশ লোককে টিকা দেয়া যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement