২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
১১ আগস্ট খুলছে দোকানপাট চলবে গণপরিবহন

লকডাউন বাড়ল ৫ দিন

কম ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের হোটেলে রেখে চিকিৎসা দেয়ার চিন্তা ; স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আবেদন-নিবেদনে কাজ না হলে অর্ডিন্যান্স : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী; স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের শাস্তি দিতে পুলিশকে ক্ষমতা দেয়া প্রয়োজন : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
-

চলমান কঠোর বিধিনিষেধ আরো পাঁচ দিন বাড়িয়েছে সরকার। আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত চলমান বিধিনিষেধ কার্যকর থাকবে। তবে ১১ আগস্ট থেকে বিধিনিষেধে কিছুটা পরিবর্তন আসবে। এ দিন থেকে সব কিছুই খোলা থাকবে। তবে সীমিত পরিসরে।
করোনার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভা শেষে এসব তথ্য জানান বৈঠকের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
১১ আগস্ট থেকে গণপরিবহন, দোকানপাট, শপিং মল, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে খুলবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধই থাকছে। সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
৭ আগস্ট থেকে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৪ হাজার কেন্দ্রে এক যোগে গণটিকাদান শুরু হবে। সাত দিনে প্রায় এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়া হবে। এই টিকায় বয়স্ক মানুষ অগ্রাধিকার পাবেন। একই সঙ্গে শ্রমজীবী মানুষ, দোকানদার ও গণপরিবহন কর্মীদেরকে নিজ নিজ ওয়ার্ড থেকে টিকা নিতে হবে। টিকা না নিয়ে কেউ কোনো কর্মস্থলে আসতে পারবেন না। এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, টিকা না নিয়ে কেউ দোকান খুলতে পারবেন না বা বাইরে বেরোতে পারবেন না। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যারা বাইরে চলাফেরা করবেন, তারা টিকা না নিয়ে চললে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে বিধিনিষেধ চলছে, যা আগামীকাল বৃহস্পতিবার শেষ হওয়ার কথা ছিল। এবার সরকার থেকে ‘কঠোরতম’ বিধিনিষেধের কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সেটা আর রাখা যায়নি। গত শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে জানানো হয়, ১ আগস্ট থেকে রফতানিমুুখী সব শিল্প ও কলকারখানা চলমান বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের পর শ্রমিকরা গ্রামের বাড়ি থেকে দুর্ভোগ নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন কলকারখানা অভিমুখে রওনা হন। একপর্যায়ে গত রোববার দুপুর পর্যন্ত গণপরিবহন চালুর অনুমোদন দেয় সরকার। লঞ্চের সময় অবশ্য গত সোমবার ভোর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের এই বৈঠকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা ভার্চুুয়ালি যুক্ত ছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, যারা করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানবেন না, আবেদন-নিবেদনে কাজ না হলে, অর্ডিন্যান্স জারি করে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। টিকাও নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে খামখেয়ালির কোনো সুযোগ নেই। সরকার মনে করে, আইন দিয়ে সব কিছু হয় না। সচেতনতা দরকার। সরকার সেই চেষ্টাই করছে।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, এ ক্ষেত্রে নাগরিকদের মাস্ক ব্যবহার ও ১৮ বছরের ঊর্ধ্ব বয়স্কদের টিকা গ্রহণে উৎসাহ দিতে পাড়া-মহল্লায় সবার অংশগ্রহণে কমিটি করা হবে। যাদের কাজ হবে সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি মানানোর ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলেও কমিটি তা প্রতিহত করবে। কমিটিতে জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ছাত্র-শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, কৃষক, যুবক সবাই থাকবেন। এত কিছুর পরও, এত আবেদন-নিবেদনের পরেও যদি কেউ করোনা প্রতিরোধে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীনতা প্রদর্শন করে, তাহলে অর্ডিন্যান্স জারি করে, তাদের শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা হবে। যেহেতু সংসদ অধিবেশন চলছে না, সেহেতু রাষ্ট্রপতির অর্ডিন্যান্স জারি করে শাস্তির বিষয়টি আইনের আওতায় আনা হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘করোনার টিকা নিতে হাসপাতাল বা কেন্দ্রে দৌড়াতে হবে না। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতিটি ওয়ার্ডে ২-৫টি টিকা কেন্দ্র খোলা হবে। সংশ্লিষ্ট লোকজনই জনগণকে টিকা দিয়ে আসবে। রেজিস্ট্রেশন করে, এনআইডি কার্ড দেখিয়ে টিকা নেয়া যাবে। যাদের এনআইডি নেই, তাদেরকেও বিশেষ পদ্ধতিতে টিকা দেবে সরকার।’
রোগীদের হোটেলে রেখে চিকিৎসা দেয়ার চিন্তা : এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইতোমধ্যে হাসপাতালে ৯০ শতাংশ সিট ভর্তি হয়ে গেছে, রোগী আছে সিট ফাঁকা নেই। আইসিইউ অলরেডি ৯৫ শতাংশ অকুপাইড। এই চিন্তা করে আমরা ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করছি। সেটির কাজ চলমান। সেখানে ইমিডিয়েটলি আমরা হয়তো ৫০০-৬০০ বেড রেডি করতে পারব। পরে তা এক হাজার বেডে নেয়া যাবে।’ তিনি বলেন, ‘আরেকটি সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি, সেটি হলোÑ করোনা আক্রান্ত সবাইকে কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে না। যেগুলো হালকা, মাইল্ড কেস, সে সব রোগীর জন্য আমরা আলাদা হোটেল ভাড়া করার চিন্তা করেছি। যে হোটেলে আমাদের ডাক্তার থাকবেন, নার্স থাকবেন, ওষুধপত্র থাকবে, কিছু অক্সিজেনের ব্যবস্থাও আমরা রাখব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের হাসপাতাল করার আর জায়গা নেই। হাসপাতাল খালিও নেই। তাই আমরা এখন হোটেল খুঁজছি। যেখানে আমরা একটা ব্যবস্থা করতে পারি, মৃদু যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের রাখতে পারি। ওখানে চিকিৎসা নিয়ে যাতে ভালো হয়ে বাড়ি যেতে পারেন। সেই ব্যবস্থাটুকু আমরা হাতে নিয়েছি।’
আগামী ৭ আগস্ট থেকে সাত দিনের জন্য প্রত্যেকটি ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে টিকা দেয়ার কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এই সাত দিনে আমরা প্রায় এক কোটি টিকা দেবো। এটাই আমাদের উদ্দেশ্য।’ এ জন্য সভায় বিভিন্ন দফতরের সাহায্য চাওয়া হয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে গ্রামের বয়স্কদের আমরা অগ্রাধিকার দেবো। পঞ্চাশোর্ধ্ব যারা আছেন, তাদের আমরা অগ্রাধিকার দেবো, এই বয়সীদের মৃত্যু এখন ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে সোয়া কোটি টিকা আছে। আরো এক কোটি টিকা আমাদের হাতে এসে পৌঁছবে। অর্থাৎ টিকা কর্মসূচি বজায় থাকবে।’
সভায় স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদন করার বিষয়ে জোন করে দেয়া হয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা চীনের সিনোফার্মের সঙ্গে এবং বাংলাদেশের একটি কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করেছি। সেই টিকা উৎপাদন করার কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমতিও পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি আরেকটি জিনিসের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছেÑ ভ্যাকসিনের টিকা পাশাপাশি মাস্ক পরিধান করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি এটিকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে চাই, পুলিশকে ক্ষমতা দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে; যাতে যারা মাস্ক পরবে না তাদের কিছুটা হলেও শাস্তি দিতে পারেন, জরিমানা করতে পারেন। একটি অধ্যাদেশ লাগবে। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা হয়তোবা সে দিকে যাব।’
জাহিদ মালেক আরো বলেন, ইতোমধ্যে গার্মেন্ট খুলে দেয়া হয়েছে। আগামীতে ধীরে ধীরে অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানও খুলে দেয়া হবে। ট্রান্সপোর্ট, দোকানপাটও খুলবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা আপনারা পরে পেয়ে যাবেন।’


আরো সংবাদ



premium cement