১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ধনাঢ্যদের ব্ল্যাকমেইল করতেন পিয়াসা-মৌ

-

শুরুতে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করতেন পিয়াসা ও মৌ। পরে পার্টির নামে বাসায় ডেকে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণের পর ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা। এসব অভিযোগে আলোচিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় তাদের বাসা থেকে মদ ইয়াবাসহ বিপুল পরিমাণ নেশাজাতীয় দ্রব্য জব্দ করা হয়। গতকাল সোমবার গুলশান ও মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিন করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মডেল পিয়াসা ও মৌ সঙ্ঘবদ্ধ একটি চক্রের সদস্য। তারা পার্টির নামে উচ্চবিত্তদের বাসায় ডেকে মদ ও ইয়াবা খাইয়ে আপত্তিকর ছবি তুলে রাখতেন। পরে সেই ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতেন। এ ক্ষেত্রে তারা বড় বড় ব্যবসায়ী ও উচ্চবিত্তদের বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া সন্তানদের টার্গেট করতেন। ব্যবসায়ীদের ফাঁদে ফেলে নানাভাবে হয়রানি করে আসছিলেন। মোহাম্মদপুরে অভিযানের সময় মৌয়ের বাসার ভেতরে মিনি বারের সন্ধান পাওয়া গেছে বলেও দাবি করেছে গোয়েন্দারা।
গত রোববার রাতে কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর বারিধারার ৯ নম্বর রোডের ৩ নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্যসহ পিয়াসাকে আটক করে গোয়েন্দারা। এ সময় পিয়াসার ঘরের টেবিল থেকে চার প্যাকেট ইয়াবা (কত পিস জানা যায়নি), রান্নাঘরের ক্যাবিনেট থেকে ৯ বোতল বিদেশী মদ, ফ্রিজে একটি আইসক্রিমের বাক্স থেকে সিসা তৈরির কাঁচামাল এবং বেশ কয়েকটি ই-সিগারেট পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পিয়াসার কাছ থেকে চারটি স্মার্টফোন জব্দ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে রাত পৌনে ১২টায় তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। পরে পিয়াসার দেয়া তথ্যে আরেক মডেল মরিয়ম আক্তার মৌয়ের রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। তার বাসা থেকেও বিপুল পরিমাণ মদ উদ্ধার করা হয়। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, মৌয়ের বাসার ভেতরে ড্রয়িং রুমের পাশেই একটি মিনি বার দেখা গেছে। বাসার ভেতরের বেডরুমের একটি ড্রয়ার থেকে পাঁচ প্যাকেট ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ওই বেডরুমের ভেতরে আরেকটি ড্রেসিং রুম থেকে অন্তত এক ডজন বিদেশী মদ উদ্ধার করা হয়। পরে রাত ১টায় মৌকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকেও ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, মডেল পিয়াসা ও মৌ একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তারা বাসায় বিভিন্ন নামে পার্টি করে মদের আসর বসায়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজপড়ুয়া উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের এনে ইয়াবাসেবী বানায় মদের আসরের আড়ালে। এ ছাড়া বিত্তবানদের বাসায় ডেকে এনে অশ্লীল ছবি তুলে তারা নিয়মিত ব্ল্যাকমেইল করতেন। এই চক্রে আরো কেউ আছে কি না সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আমরা অনেক ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ পেয়েছি। সেসব ঘটনা তদন্ত করতে গিয়েই তাদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। দু’জনের বাসায় বিদেশী মদ, ইয়াবা ও সিসা পাওয়া গেছে। মৌয়ের বাড়িতে মদের বারও ছিল।
হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেফতার দুই মডেল হচ্ছেন রাতের রানী। তারা দিনের বেলায় ঘুমান আর রাতে এসব কর্মকাণ্ড করেন। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পার্টির নামে বাসায় ডেকে আনতেন তারা। বাসায় এলে তারা তাদের সাথে আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ধারণ করে রাখতেন। পরে তারা সেসব ভিডিও ও ছবি ভিক্টিমদের পরিবারকে পাঠাবে বলে ব্ল্যাকমেইল করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিতেন। তিনি আরো বলেন, বাসায় মাদক পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর ও গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক মামলা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ থাকায় এ সংক্রান্ত মামলাও হবে। জানা গেছে, পিয়াসা ২০১৭ সালে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদের সাবেক স্ত্রী। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারেও নাম ছিল পিয়াসার। প্রথমে মামলা করতে ভুক্তভোগীদের সহযোগিতা করেছিলেন পিয়াসা। কিন্তু পরে সেই পিয়াসার বিরুদ্ধেই আবার মামলা তুলে নেয়ার হুমকির অভিযোগে জিডি করেছিলেন ভুক্তভোগীদের একজন। রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের ঘটনার কিছুদিন আগেই সাফাতের সাথে বিবাহবিচ্ছেদ হয় পিয়াসার। ওই সময় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের অভিযোগ ছিল, পিয়াসা ওই দুই শিক্ষার্থীকে দিয়ে ধর্ষণ মামলা করিয়েছিলেন তার ছেলের বিরুদ্ধে।
পৃথক মাদক মামলা : পিয়াসা ও মৌ আক্তারের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে। গতকাল মোহাম্মদপুর ও গুলশান থানায় মামলা দু’টি করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ এই দুই মডেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি মো: আবদুল লতিফ বলেন, মৌ আক্তারের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছে ডিবির পরিদর্শক শিশির কুমার। মামলার অভিযোগে বলা হয়, মৌয়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে। পিয়াসার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, ডিবির পক্ষ থেকে পিয়াসার বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, তার বাড়িতে অভিযান চালালে মদসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে।
রিমান্ডে দুই মডেল : মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলামের আদালত মডেল পিয়াসার তিন দিন এবং ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমামের আদালত মৌয়ের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গুলশান থানায় মাদক মামলায় পিয়াসাকে ১০ দিন ও মোহাম্মদপুর থানায় মাদক আইনের মামলায় মৌকে ১০ দিন রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ।


আরো সংবাদ



premium cement
শিবপুরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর নিহত চকরিয়ায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩ গাজা মানবিক নরকে পরিণত হয়েছে : জাতিসঙ্ঘ প্রধান রাফা হামলার পরিকল্পনা ইসরাইলের ত্যাগ করা উচিত : চীন গাজা যুদ্ধে নতুন যে কৌশল অবলম্বন করল ইসরাইল হাসপাতালের শৌচাগারে মিলল নবজাতক শিশু ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিসিডিপি গঠন করা হবে : পরিবেশমন্ত্রী অননুমোদিত জমি ভরাট কার্যক্রমের সন্ধান পেলে দ্রুত ব্যবস্থার নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা ইসরাইলকে পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাতের ব্যাপারে সতর্ক করলো আইআরজিসি

সকল