শুরুটাই রাঙাতে চায় বাংলাদেশ

২০১৫ সালে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। নিরাপত্তা শঙ্কায় শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করে তারা। বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সে সময়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস দেয়ার পরও সিদ্ধান্ত বদলায়নি তারা। এমনকি ২০১৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় যুব বিশ্বকাপ খেলতে তাদের যুব দল পাঠায়নি। সবই ছিল নিরাপত্তার অজুহাতে। ২০১৫ সালে ফুটবল বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে না চেয়ে টালবাহানা করেছিল অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দলও। কিন্তু ফিফার কড়াকড়ি নির্দেশে শেষ পর্যন্ত সিঙ্গাপুর থেকে একটি চার্টার্ড বিমানে করে এসে কোনো রকম ম্যাচটি শেষ করে দেশে ফিরে যায় তারা।
অস্ট্রেলিয়াই একমাত্র টেস্ট খেলুড়ে দেশ, যাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ এই ফরম্যাটে সবচেয়ে কম চারটি ম্যাচ খেলেছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার সুযোগ খুব কম পাওয়ায় সিরিজ জিতে এটি স্মরণীয় করে রাখতে চায় বাংলাদেশ। আগে (২০০৭, ২০১০, ২০১৪ ও ২০১৬) এই ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চার ম্যাচ খেলে কোনো জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। হেরেছে যথাক্রমে ৯ উইকেট, ২৭ রান, ৭ ও ৩ উইকেটে। তবে এবার নিজেদের সম্ভাবনা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা। সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-২০ সিরিজ শুরুর ম্যাচটি জয় দিয়ে রাঙাতে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি সরাসরি দেখা যাবে গাজী টিভি ও টি স্পোর্টসে।
সাকিব আল হাসান টি-২০ ক্রিকেটে ১০০ উইকেট থেকে মাত্র ৫ উইকেট দূরে। শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে এই কীর্তি গড়ার সুযোগ থাকছে সাকিবের সামনে। বিশ্বের শীর্ষ অলরাউন্ডার হওয়া সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাকিবের জন্য এ সিরিজটি বাড়তি অনুপ্রেরণা। ব্যাট হাতে সাকিবের ফর্মে ফেরাটা ইতিবাচক দিক।
নিজেদের কন্ডিশন ও অস্ট্রেলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ তারকা ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও অ্যারন ফিঞ্চ এই সফরে না থাকায় আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে টাইগারদের। অস্ট্রেলিয়ার মতো বাংলাদেশও তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহীম ও লিটন দাসের মতো বেশ কিছু তারকা খেলোয়াড়কে সিরিজে পাচ্ছে না। হাঁটুর ইনজুরিতে নেই তামিম। শ্বশুরের অসুস্থার কারণে সিরিজ মিস করছেন লিটন দাস। জৈব-সুরক্ষা বলয় নিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) কঠোর অবস্থানের কারণে খেলতে পারছেন না মুশফিকুর রহীম। সিরিজের আগে সিএ’র কর্তৃক ১০ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন করতে প্রস্তুত ছিলেন তিনি। বিসিবি চেয়েছিল সিএ, এই কোয়ারেন্টিন শিথিল করবে। কিন্তু সফরকারীরা সেটি মানেনি।
মুশফিককে নিয়ে সিএ’র এমন অবস্থানে হতাশ বাংলাদেশ কোচ ডোমিঙ্গো, ‘মুশফিকের ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান হতাশাজনক।’ তার বিশ্বাস, দলে যারা তরুণ খেলোয়াড় আছে তারা নিজেদের উজাড় করে দেবে।
তামিম, লিটন, মুশফিক ও আমিনুলরা বিভিন্ন কারণে সিরিজ থেকে ছিটকে পড়ায় মিঠুন-রুবেল-মোসাদ্দেক ও তাইজুলদের অসিদের বিপক্ষে সিরিজের জন্য দলে রেখে দেয় বিসিবি। কারণ তারা জিম্বাবুয়ে সফর থেকেই জৈব সুরক্ষা বলয়েই ছিলেন।
দলের সেরা তারকাদের ছাড়া সদ্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে হারে অস্ট্রেলিয়া। সেরা তারকাদের ছাড়া অসিদের দুর্বলতা ফুটে উঠেছে। তাই অস্ট্রেলিয়ার আত্মবিশ্বাসে কিছুটা হলেও ঘাটতি রয়েছে। অন্য দিকে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে বাংলাদেশ শিবির। কারণ গেল মাসেই জিম্বাবুয়ের মাটিতে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজ জিতেছে টাইগাররা। ওই সফরে এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজ, তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে এবং তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে বাংলাদেশ। টি-২০ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য প্রস্তুতির মঞ্চও বটে।
জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করতে চায় অস্ট্রেলিয়াও। নিয়মিত অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের পরিবর্তে দলের নেতৃত্ব দেবেন ম্যাথু ওয়েড।
বাংলাদেশ দল : মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, নাঈম শেখ, সাকিব আল হাসান, নুরুল হাসান সোহান, আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন, সাইফ উদ্দিন, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, শেখ মাহেদি হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ মিঠুন, তাইজুল ইসলাম, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও রুবেল হোসেন।
অস্ট্রেলিয়া দল : ম্যাথু ওয়েড (অধিনায়ক), অ্যাস্টন আগার, ওয়েস আগার, জেসন বেহরেনডর্ফ, জশ হ্যাজলউড, মইসেস হেনরিক্স, মিচেল মার্শ, বেন ম্যাকডেরমট, অ্যালেক্স ক্যারি, ড্যান ক্রিশ্চিয়ান, রিলে মেরেডিথ, জশ ফিলিপ, মিচেল স্টার্ক, মিচেল সুয়েপসন, অ্যাশটন টার্নার, অ্যান্ড্র টাই ও এডাম জাম্পা।