২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাকায় পৌঁছেও শেষ নেই ভোগান্তির

গণপরিবহন না পেয়ে হেঁটেছেন অনেকে; ৫-৬ গুণ বেশি ভাড়া আদায় ; মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি
-

পথে পথে দুর্ভোগ, বাড়তি ভাড়া আর নানা ঝক্কিঝামেলা পেরিয়ে ঢাকায় পা রাখতেই নতুন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন কর্মস্থলে আসা মানুষজন। প্রয়োজনের চেয়ে গণপরিবহনের সংখ্যা অনেক কম থাকায় তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাদের। কেউ কেউ পাঁচ-ছয় গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। আবার যানবাহনে উঠতে না পেরে অনেক যাত্রী হেঁটে গন্তব্যস্থলে পৌঁছেছেন। প্রয়োজনের চেয়ে গণপরিবহনের সংখ্যা কম থাকায় বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ১০০ টাকা। ৪০০ টাকার নিচে সিএনজি অটোরিকশা কোনো যাত্রী তুলতে চায়নি। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলগুলো ২০০ টাকার নিচে কোথায় যায়নি। আর রিকশা যেন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছিল। রিকশায় উঠলেই গুনতে হয়েছে ১০০ টাকা। জায়গাভেদে তাদের দিতে হয়েছে ২০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।
যাত্রীরা বলছেন, ভেবেছিলেন ঢাকায় পৌঁছালে মহাসড়কের ভোগান্তির ক্লান্তি কাটিয়ে উঠবেন। কিন্তু এখানে যে আরো বড় বিপদ অপেক্ষা করছে, সেটি ভাবতে পারেননি। এ দিকে বাসচালকরা বলছেন, মাত্র এক দিন চালানোর জন্য মালিকরা রাস্তায় বাস নামাতে চাননি। তাই কয়েকজন চালক ও হেলপার মালিকদের কিছু টাকা (জমার টাকা) দিয়ে বাস নামিয়েছে। তারা চার্ট অনুযায়ী ভাড়া নিচ্ছে না। দূরত্ব অনুযায়ী যেভাবে পারছে সেভাবেই ভাড়া আদায় করছে। তবে কিছু কিছু মালিক বাস নামালেও তার সংখ্যা খুবই কম। গতকাল রোববার রাজধানীর অন্যতম গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে বিভিন্ন জেলা থেকে যে শুধু শ্রমিকরাই ঢাকায় পৌঁছেছেন, তা নয়; এ সুযোগে লকডাউনে আটকে থাকা অনেকেই ঢাকায় পৌঁছেছেন বলে জানা গেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে বন্ধ ঘোষণা করা হয় শিল্পকারখানাও। কিন্তু চলমান লকডাউনের ১২ দিনের মাথায় শিল্পকারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এ দিকে কারখানা বন্ধ থাকায় ঈদের সময় বেশির ভাগ শ্রমিকই গ্রামের চলে যান। তাদের ধারণা ছিল লকডাউন শেষ হলে কারখানা খুলে দেয়া হবে। এর পরই তারা গ্রাম থেকে ফিরে কাজে যোগ দেবেন। কিন্তু তার আগে চলমান লকডাউনের মধ্যেই খুলে দেয়া হয় কারখানা। তাই চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়ে চরম ভোগান্তি মাথায় নিয়ে ছুটতে শুরু করেন কর্মস্থলের দিকে।
শনিবার বিকেলে নেত্রকোনা থেকে ১০-১২ জন নারীশ্রমিক একসাথে রওনা হন ঢাকার উদ্দেশে। তাদের মধ্যে ছিলেন দুই বোন রেহানা ও খাদিজা। তারা বলেন, ‘শনিবার বিকেল বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশে বের হয়েছি। প্রথমে এলাকার অটোতে করে শহরের দিকে রওনা করেন। এরপর ভটভটিসহ কয়েকটি যানবাহনে করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ময়মনসিংহ পৌঁছান। সেখানে অনেক সময় অপেক্ষা করার পর রাত ১২টার দিকে একটি বাস পান। তাতে ঠাসাঠাসি করে রওনা হন ঢাকার উদ্দেশে। রাত আড়াইটা বা ৩টার দিকে মহাখালী পৌঁছান। কিন্তু এখানে পৌঁছে পড়েন অন্য বিপদে। যাওয়ার মতো কোনো যানবাহনই সেখানে ছিল না। অনেক সময় অপেক্ষা করে ভোরে একটি সিএনজিতে বেগুনবাড়ির বাসায় যান। তারা বলেন, হেঁটে, রিকশা, অটোরিকশা, ভটভটি, ট্রাকে আর বাসে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় ফিরতে হয়েছে। কারখানা থেকে ফোন দিয়ে বলা হয়েছে, ‘রোববার কারখানা খোলা। প্রথম দিনে উপস্থিত না হতে পারলে চাকরি থাকবে না। তাই এক হাজার টাকার ভাড়ার জায়গায় তিন হাজার টাকা খরচ করে ঢাকায় পৌঁছাতে হয়েছে।
যশোর থেকে আসা তেজগাঁওয়ের নাসা গার্মেন্টেকর্মী বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ঈদের পর ২৭ তারিখ পর্যন্ত আমার ছুটি ছিল। সরকার ঘোষণা দিলো ৫ আগস্ট পর্যন্ত লকডাউনে কারখানা বন্ধ। হঠাৎ ৩০ তারিখ শুনলাম ১ তারিখ থেকে কারখানা খোলা। আবার কারখানা থেকেও ফোন করা হয়েছে। এ দিকে ‘বাস চলে না। বাধ্য হয়ে ট্রাক, প্রাইভেট কার ও বাসে করে সকাল ৬টায় গাবতলী নামছি। এখানে এসে আরেক বিপদ। গুলিস্তান যাওয়ার জন্য কোনো গাড়ি পাওয়া যাচ্ছিল না। দু-একটি লোকাল বাস এলেও তাতে ওঠা যাচ্ছিল না। বাস দাঁড়ানোর সাথে সাথে মানুষ তাতে ওঠার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল। কিসের করোনা, কিসের সামাজিক দূরত্ব তার যেন কোনো বালাই নেই। তিনি বলেন, খাাওয়া-দাওয়া ঘুম কিছুই নেই। টাকাও গেছে ডাবল। এ কষ্টের কথা কাকে বলব। আবদুর রহমান নামে অপর একজন বলেন, বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত মানুষ ভোরে এসে পৌঁছাতে শুরু করে ঢাকার টার্মিনালগুলোতে। অথচ এখানে পৌঁছে কোনো যানবাহন পাওয়া যাচ্ছিল না। গুলিস্তানের বাসে ভাড়া নির্ধারণ করেছে ১০০ টাকা করে। তাতে আপনি যেখানেই নামবেন ওই ১০০ টাকাই দিতে হবে। তাও আবার সামাজিক দূরত্ব না মেনে ঠাসাঠাসি করে ভরা হচ্ছে। উত্তরাগামী বাসগুলোতেও ১০০ থেকে ১২০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। তাতে আপনি যদি মিরপুর ১০ নম্বরও নামেন ১০০ টাকাই দিতে হবে। রিকশায় উঠলেই ১০০ টাকা। সিএনজি অটোরিকশা ৪০০ টাকার নিচে কোনো জায়গায় যাচ্ছে না। মিলন জানান, বাস না পেয়ে ফার্মগেট যাবেন বলে ৩০০ টাকা দিয়ে রিকশা ভাড়া করেছেন।
গাবতলী কয়েকজন রিকশা চালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা আসলেই ১০০ টাকার নিচে কোনো যাত্রী তুলছেন না। উত্তরা যাওয়ার জন্য আলম নামে একজন রিকশাচালক এক যাত্রীর কাছে ৮০০ টাকা দাবি করেছেন। পরে অবশ্য তিনি ১০০ টাকা কমে ৭০০ টাকা করেন।
গাবতলী যাত্রাবাড়ী রুটের ৮ নম্বর পরিবহনের চালক আবু কাওসার বলেন, মাত্র এক দিনের জন্য বাস চালানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই কয়েক ঘণ্টার জন্য মালিকরা বাস নামাতে চাননি। কারণ লকডাউনের দীর্ঘ বন্ধের জন্য অনেক চালক ও হেলপার গ্রামে চলে গেছেন। আবার কয়েক দিন ধরে বসে থাকা বাস রাস্তায় নামাতে প্রস্তুতি নেয়া লাগে; যে কারণে আমরা কয়েকজন চালক ও হেলপার মিলে মালিকদের কিছু টাকা দিয়ে দু-তিনটি বাস নামিয়েছি। এখানে আসলে চার্ট অনুযায়ী ভাড়া নেয়া হচ্ছে না। আবার সিটিতে চালিত কয়েকটি কোম্পানির মালিকরাও বাস নামিয়েছেন। তবে কেউ দু-তিনটির বেশি নামাননি। এ কারণে গণপরিবহনের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
অব্যাহত ঢাকামুখী স্রোত : ফেরির সংখ্যা বৃদ্ধি এবং লঞ্চ চালু হওয়ার কারণে গতকাল ঢাকামুখী যাত্রীদের ভোগান্তি কিছুটা কমলেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমেনি। এ দিকে প্রথমে গতকাল দুপুর পর্যন্ত লঞ্চ ও দূরপাল্লার বাস চলাচলের অনুমতি দিলেও পরে সোমবার ভোর পর্যন্ত লঞ্চ চলাচলের সময় বাড়ানো হয়। এভাবে ঘণ্টায় ঘণ্টায় নতুন নতুন সিদ্ধান্তের ফলে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। সরকার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে এক দিনের জন্য গণপরিবহন চালুর অনুমতি দিলেও লঞ্চে এসব স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। বেশির ভাগ লঞ্চের ডেক ও প্রবেশ পথে ছিল যাত্রীদের গাদাগাদি ভিড়। অনেক লঞ্চে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া লঞ্চে জীবাণুনাশক ছিটানোর নির্দেশ থাকলেও অনেকে তা পালন করেননি।
রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানান, শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার সুবিধার্থে ফেরির সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি গতকাল রোববার ১২টা পর্যন্ত গণপরিবহন ও লঞ্চ চালু হওয়ার কারণে ভোগান্তি কমেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যাত্রীরা ভোগান্তি ছাড়াই ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিতে পারছে এখন। তবে ফেরিঘাট পর্যন্ত আসতে তাদের বিভিন্ন যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, ফেরিঘাট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রীবাহী বাসের কোনো সিরিয়াল নেই। তবে শনিবার রাতে বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিগত গাড়ি ও পণ্যবাহী ট্রাক পার করার কারণে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে দুই শতাধিক যানবাহন।
চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, গার্মেন্টসহ রফতানিমুখী শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার সুবিধার্থে রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত লঞ্চ চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যার কারণে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে ঢাকার কর্মমুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। তবে ছিল না কোনো সামাজিক দূরত্ব। গাদাগাদি করে যাত্রীদেরকে লঞ্চে উঠতে দেখা গেছে। অনেক যাত্রীকে নৌকা দিয়েও লঞ্চে উঠতে দেখা গেছে। তবে লঞ্চযাত্রীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এর সময়সীমা বাড়িয়ে আজ ভোর ৬টা পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করবে বলে জানানো হয়েছে।
চাঁদপুর লঞ্চঘাটে যাত্রীর চাপ থাকলেও লঞ্চের সংখ্যা কম। যার কারণে অনেক যাত্রীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লঞ্চঘাটে অপেক্ষা করতে হয়। তবে অন্যবারের তুলনায় লঞ্চঘাটে এবার প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সকাল থেকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিআইডব্লিউটিএ, পুলিশ ও কোস্টগার্ড সদস্যরা ঘাটে অবস্থান করেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘাট থেকে প্রত্যেকটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ।
লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি বিপ্লব সরকার বলেন, ঘাটে যে পরিমাণ যাত্রী রয়েছে, সেই অনুযায়ী লঞ্চ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছে লঞ্চ। ১২টা পর্যন্ত লঞ্চ চলাচলের সিদ্ধান্ত থাকলেও লঞ্চ যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এর সময়সীমা বাড়িয়ে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করার নির্দেশনা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ভোলা সংবাদদাতা জানান, ভোলার লঞ্চঘাটগুলোতে রাজধানী ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলামুখী যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। এতে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই যাত্রী হুড়াহুড়ি করে লঞ্চে উঠছে। লঞ্চে যাত্রী বেশি হওয়ায় দ্বিগুণ ভাড়া নেয়ার অভিযোগ উঠছে।
সরেজমিন দেখা যায়, রোববার সকাল ৮টা থেকে যাত্রীবোঝাই ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাট এবং চরফ্যাসনের ঘোষেরহাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে আটটি লঞ্চ। এ ছাড়াও ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাট থেকে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরী ঘাটের উদ্দেশ্য দু’টি সিট্রাক ও দু’টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে স্বাস্ব্যবিধি উপেক্ষা করেই এসব লঞ্চ গন্তব্যে ছেড়ে যায়। এতে একদিকে যেমন করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অন্য দিকে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।
তবে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বিআইডব্লিউটিএ, নৌপুলিশ, জেলা পুলিশ ও কোস্টগার্ড প্রচারণা চালাতে দেখা গেলেও সে দিকে সচেতনতা দেখা যায়নি যাত্রীদের।
ঢাকাগামী এমভি দোয়েল পাখি-১ এর যাত্রী সোলাইমান হোসেন বলেন, লঞ্চে দাঁড়ানোর মতো জায়গা নেই। অথচ লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ২৫০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা নিতেছে এমন হইলে কেমনে হইবো। এইডা তো গরিব মারার ব্যবসা শুরু করছে।
মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, গতকাল রোববার থেকে পোশাক কারখানা খোলাকে কেন্দ্র করে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটের ফেরিতে যাত্রী ও ব্যক্তিগত পারাপারের হিড়িক পড়েছে। সকাল থেকে নৌরুটের সচল ৮টি ফেরিতে কঠোর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে পারাপার হচ্ছে শতশত যাত্রী, ব্যক্তিগত গাড়ি। যাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই পোশাক কারখানার শ্রমিক। শুধু জরুরি ও লকডাউনের আওতামুক্ত গাড়ি পারাপারে ফেরি চালু থাকলেও মানা হচ্ছে না সে নিয়ম।
বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়াঘাটে আসা প্রতিটি ফেরিতে ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ রয়েছে। ফেরিতে যাত্রী চাপ ও গাদাগাদিতে উপেক্ষিত থাকছে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব।
আশুলিয়া (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে দেশে কঠোর বিধিনিষেধের দশম দিনে সব উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেয়ায় কর্মস্থলে যোগ দিতে পথে পথে বিড়ম্বনা, ভোগান্তি আর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে শ্রমিকদের। এছাড়া শনিবার রাত থেকে গতকাল রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গণপরিবহন চলাচল করায় আশুলিয়ার দুই সড়কে ধীর গতিতে চলতে দেখা গেছে বিভিন্ন যানবাহন। অনেকটা ভোগান্তি আর বিড়ম্বনা সহ্য করেই তারা গ্রাম থেকে কর্মস্থলে যোগ দিয়েছে। অনেকেই আবার রাতে গ্রাম থেকে রওনা দিয়ে সকালে এসে আবার কাজে যোগদান করেছে। এদিকে আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানায় যোগাযোগ করে জানা গেছে গতকাল প্রায় ৭০ ভাগ শ্রমিক কারখানায় উপস্থিত হয়েছে।
রোববার সকাল থেকে আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক এবং বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। এছাড়া এই দু’টি মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীদের জটলা চোখে পড়েছে।
জানা গেছে, গতকাল রোববার থেকে গার্মেন্ট খুলে দেয়ার কারণে সকাল থেকেই শ্রমিকরা কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছে। তবে সকাল থেকে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে বাস ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহনে করে শ্রমিকরা এসেছে। এতে আশুলিয়ার দুই মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় যানবাহনের ধীর গতি দেখা গেছে। সেই সাথে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক এবং বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনের ধীর গতি এবং বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের চাপ দেখা গেছে। এছাড়া কোনো কোনো স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে সকালে করোনায় সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে বাসে গাদাগাদি করে কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে জানালেও তারা চাকরি বাঁচানোর জন্য কারখানায় যোগদান করছে বলে জানায়।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, সরকারি নির্দেশনার ২৪ ঘণ্টা পরে বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়েছে যাত্রীবাহী ৩টি লঞ্চ। নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে রোববার রাত ৮টার পর কলকারখানার শ্রমিকদের নিয়ে ঢাকায় যাত্রা করে লঞ্চগুলো। তবে এ দিনে ঢাকা থেকে কোনো লঞ্চ বরিশালে আসবে না বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, পয়লা আগস্ট থেকে গার্মেন্টসহ সকল ধরনের কলকারখানা খুলে দিয়েছে সরকার। এমন খবরে শনিবার সকাল থেকে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক-মহাসড়কে ঢাকামুখী শ্রমিকদের ঢল নামে। চাকরি বাঁচাতে তারা যে যার মতো করে পণ্যবাহী পরিবহন, থ্রি-হুাইলার এবং মোটরসাইকেলে কেউ বা আবার পায়ে হেঁটেই ঢাকায় যাত্রা করে।
শ্রমিকদের এমন দুর্ভোগ লাঘবে শনিবার বিকেল থেকে রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাস এবং লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেয় সড়ক এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। খবর পেয়ে শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই বরিশাল-মাওয়া রুটে শুরু হয় বাস চলাচল। যা রোববার বেলা ১টা পর্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। তবে যাত্রী সঙ্কট এবং লঞ্চ কর্মকর্তা ও শ্রমিক না থাকার অজুহাতে বন্ধ রাখা হয় বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের বিলাসবহুল লঞ্চগুলো। তাই শনিবার রাতে বরিশাল নদী বন্দর থেকে ফিরে গেছে অসংখ্যযাত্রী।
সরেজমিন বরিশাল নদী বন্দরে দেখা যায়, রোববার সকাল থেকেই ঢাকামুখী যাত্রীদের ঢল নামতে শুরু করে বরিশাল নদী বন্দরে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে নদী বন্দরের পন্টুন শ্রমিকে পূর্ণ হয়ে যায়। তবে যাত্রী বাড়লেও বরিশাল থেকে কোনো লঞ্চ ছাড়বে না বলে জানিয়ে দেন লঞ্চ মালিকরা। তবে যাত্রী পরিবহনের অনুমতি পেয়ে সকালে অভ্যন্তরীণ রুটের বেশ কয়েকটি ছোট লঞ্চ ছেড়ে যায় নিজ নিজ গন্তব্যে। একইভাবে ভোলা, মেহেন্দিগঞ্জ, ঝালকাঠি, কাঁঠালিয়াসহ অভ্যন্তরীণ অন্যান্য রুট থেকে ছেড়ে আসে বেশ কিছু একতলা লঞ্চ।

 


আরো সংবাদ



premium cement
গ্যাটকো মামলা : খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে শুনানি ২৫ জুন বুড়িচংয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ গলাচিপায় স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে ৩টি সংগঠনের নেতৃত্বে মানববন্ধন থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ছেলে হারা মা সাথিয়ার কান্না যেন থামছেই না বৃষ্টির জন্য নারায়ণগঞ্জে ইস্তিস্কার নামাজ আদায় প্রবাসী স্ত্রী থেকে প্রতারণার মাধ্যেমে দেড় লাখ টাকা চাঁদা আদায়, ছাত্রলীগ নেতাকে শোকজ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ভোটারের তালিকা চান হাইকোর্ট আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরো ৪৬ বিজিপি সদস্য উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে কুপিয়ে হত্যা কক্সবাজারে ট্রেন লাইনচ্যুত, যোগাযোগ বন্ধ

সকল