২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুর্ঘটনা ও প্রাণহানিতে ৬ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ

১৫ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৯৫ জন
-

এবার ঈদুল আজহায় সারা দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এবারের ঈদযাত্রায় ২৬২টি দুর্ঘটনায় ২৯৫ জন নিহত এবং ৪৮৮ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সড়ক-মহাসড়কে ২৪০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭৩ জন নিহত এবং ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২১’ প্রকাশকালে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো: মোজাম্মেল হক চৌধুরী। এ সময় সংগঠনের সহসভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, এবার ঈদযাত্রা শুরুর দিন গত ১৪ জুলাই থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ২৮ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনে ২৪০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭৩ জন নিহত ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন। উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ৯টি ঘটনায় ১১ জন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৩টি দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত ও ৩৬ জন আহত এবং ২১ জন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে ২৬২টি দুর্ঘটনায় ২৯৫ জন নিহত ও ৪৮৮ জন আহত হয়েছেন। তবে ২৩ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ার পর ২৫ জুলাই থেকে সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমতে থাকে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন বলে দাবি সংস্থাটির।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, লকডাউনের কারণে মানুষের যাতায়াত সীমিত হলেও স্বল্প সময়ের জন্য গণপরিবহন চালু করায় সড়কে গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগতযান বিশেষ করে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা-ব্যাটারিচালিত রিকশা, ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানে একসাথে গাদাগাদি করে যাতায়াতের কারণে ঈদে এই বিপুল সংখ্যক সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারো শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এবারের ঈদে ৮৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৯৩ জন নিহত, ৫৯ জন আহত হয়েছেন। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, নিহতের ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং আহতের ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ প্রায়।
সংঘটিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ২৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা, ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ অটোরিকশা, ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ ব্যাটারি রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল ও ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। সংগঠিত দুর্ঘটনার ২৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৪ দশমিক ২৫ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেয়ার ঘটনা, ১৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা, ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে ও ০ দশমিক ৮৩ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ০ দশমিক ৮৩ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। প্রতিবেদনে দুর্ঘটনা ঘটার পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়। কারণগুলো হচ্ছে- লকডাউনের কারণে এবং স্বল্প সময়ের জন্য গণপরিবহন চালু করার ফলে মহাসড়কে ব্যক্তিগত যানবাহন যেমন- প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা-ব্যাটারিচালিত রিকশা, ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানের বেপরোয়া গতিতে যাতায়াত; জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ঈদে যাতায়াতকারী ব্যক্তিগত যানের চালকদের রাতে এসব জাতীয় সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালানো; জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকায় নতুন চালদের এসব সড়কে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে; মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা এবং উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন।
দুর্ঘটনার প্রতিরোধে আট দফা সুপারিশও করেছে সংগঠনটি। সেগুলো হচ্ছে- জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতে অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা। দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, যানবাহনের ত্রুটি সারানোর উদ্যোগ গ্রহণ। ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা। সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা। সড়কে রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা। সড়ক পরিবহন আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা। ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ রোধ করা। গণপরিবহন বিকশিত করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল