২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ফায়ার সার্ভিস বার্ন হসপিটাল

কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট ৪ বছরেও চালু হয়নি

ভবনের কাজের মান নিয়ে আইএমইডির প্রশ্ন; ৪৬টি যন্ত্রপাতির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে
-

নির্মাণ করেই ফেলে রাখা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের বার্ন হসপিটালটি। শুধু জনবলের অভাবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ এই হসপিটালটি গত চার বছরেও চালু করা যায়নি। মেডিক্যালের জন্য কেনা ৩৩০টি যন্ত্রপাতির মধ্যে ইতোমধ্যে ৪৬টির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। পাঁচটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত। অন্য দিকে নির্মিত ভবনের সিঁড়ির মোজাইক ও ওয়াশিং এরিয়ার টাইলসের কাজে নিপুণতার অভাব পাওয়া গেছে। জানালার গ্রিল, টাইলস, স্যানিটারি ইত্যাদি আইটেম উল্লেখিত স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী হয়নি বলে জানিয়েছে আইএমইডি। আইএমইডির অভিমত হলো, হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুই করা যায়নি। এতে এক দিকে যেমন সম্পদের অবচয় হচ্ছে, অন্য দিকে উপকারভোগীরা সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভবনের কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
প্রকল্পের পটভূমি থেকে জানা গেছে, প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার্থে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর (এফএসসিডি) সবার আগে দ্রুত অকূস্থলে উদ্ধারকাজ পরিচালনায় এগিয়ে যায়। দায়িত্ব পালনকালে অনেক সময় অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা অগ্নিশিখা ও বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে আগুনে আক্রান্ত হন। তাদের দ্রুত চিকিৎসার্থে সংস্থার জন্য একটি বার্ন ইউনিট হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুনে সমাপ্ত করার জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী ১৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা খরচে এর অনুমোদন দেন। কিন্তু সেই সময় ও খরচে প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা শেষ করতে পারেনি। প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে ২৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকায় উন্নীত করে বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তিন বছরের প্রকল্পটি শেষ হয় পাঁচ বছরে। প্রকল্পের আওতায় চার কোটি ৭৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হয়। আর ভবন নির্মাণে খরচ হয় ১৬ কোটি ৭৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
প্রকল্পের আওতায় কাজগুলো ছিল : ১০তলা ভিত্তিসহ পাঁচতলা হাসপাতাল ভবন, পাঁচ তলা ভিত্তিসহ দোতলা কিচেন ও বিনোদন ভবন, হাসপাতালের জন্য মেডিক্যাল সরঞ্জাম, বার্ন ইকুইপমেন্ট, সার্জিক্যাল ইকুইপমেন্ট, আসবাবপত্র ও তৈজসপত্র ক্রয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করা।
এক তথ্যে জানা গেছে, ২০১০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দেশে বিদ্যমান ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ছিল ২০৩টি। এলএসডি অধিদফতরের আওতায় কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৩৩৬ জন। ২০১৫ সালে এই জনবল ৭১ হাজার ৭০৭ জনে উন্নীত হবে ধরা হয়।
কাজের পর্যালোচনায় আইএমইডির তথ্যে দেখা যায়, প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুনে সমাপ্ত হলে ইতোমধ্যে চার বছর অতিক্রম হয়েছে। অথচ হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুই করা যায়নি। এতে এক দিকে যেমন সম্পদের অবচয় হচ্ছে, অন্য দিকে উপকারভোগীরা সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতালটি চালু করার আগে প্রয়োজন স্যানিটারি সিস্টেমের লিকেজ, ইলেক্ট্রিক্যাল, মোজাইক ও টাইলস এবং পানি নিষ্কাশনের সমস্যাগুলো নিরসনের ব্যবস্থা করা। অগ্নি প্রতিরোধের জন্য অগ্নিপ্রতিরোধক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হলেও সেগুলো স্থাপন করা হয়নি। মজুদ থাকা অবস্থায় ইতোমধ্যে সেগুলোর কেমিক্যালের মেয়াদ পার হয়ে গেছে।
ঠিকাদারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী কাজ সম্পাদনের মেয়াদ ২০১৫ সালের ২৮ আগস্ট হলেও প্রকৃত পক্ষে কাজটি সম্পন্ন করা হয় প্রায় দুই বছর পর অর্থাৎ ২০১৭ সালের ৩ আগস্ট। চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর পুনরায় ভবনের নকশা পরিবর্তন করা হয়। চূড়ান্ত নকশা পেতে বিলম্ব হয়। সে সময় কাজ বন্ধ ছিল বলে আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, কাজ সমাপ্তিতে প্রায় দুই বছর বিলম্ব হয়। কিন্তু বিলম্বের জন্য কোনো জরিমানা ঠিকাদারের ওপর আরোপ করা হয়নি।
হাসপাতালটি রাজস্ব খাতে পরিচালিত হওয়ার পরিকল্পনা ছিল। প্রকল্প দলিলে হাসপাতাল পরিচালনার জন্য ১৫২টি পদের সংস্থান রাখা হয়। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সাংগঠনিক কাঠামোয় ৭৮টি পদ অস্থায়ীভাবে রাজস্ব খাতে সৃজনে সম্মতি দেয়। আর অর্থ বিভাগ হাসপাতালের জন্য ৩৮টি পদ সৃজনের এবং ২৪টি পদ আউটসোর্সিং করার সম্মতি দেয়।
ভবনের কাজের ব্যাপারে আইএমইডি বলছে, দরজার চৌকাঠ ও পাল্লার ফিনিশিং সন্তোষজনক নয়। টয়লেটের ফিটিংস ফিক্সচারের মান সন্তোষজনক না। লবির ফলস সিলিং মেরামতের প্রয়োজন। একটি বাথরুমে কোনো ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা নেই। ইলেক্ট্রিক ক্যাবলের কাভারিং ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় আছে। কিছু অংশের প্লাস্টার ও রঙের মান ভালো না। নিচতলার সামনের লবির গ্রানাইটে ফাটল দেখা দিয়েছে। দোতলার টয়লেটগুলোতে পানি লিক করে। ফলে নিচতলায় পড়ে দেয়াল ও ফলস সিলিংয়ের ক্ষতি হচ্ছে।
অগ্রগতি পর্যালোচনা প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, অফিসারদের বেতন, কর্মচারীদের বেতন, ভাতাদি, টিকা ও ওষুধ ইত্যাদি খাতে অর্থ সংস্থান থাকলেও কোনো অর্থ ব্যয় করা হয়নি। অধিদফতরের নিজস্ব জনবল দ্বারা প্রকল্পের কাজ পরিচালিত হওয়ায় এ সব খাতে অর্থ ব্যয় হয়নি।
আইএমইডি প্রকল্পটি সম্পর্কে বলছে, হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ক্রয় সম্পন্ন হলেও কোনো জনবল নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি। যার ফলে হাসপাতালটি চালু হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১৫২টি পদের বিপরীতে ৭৮টি পদ এবং অর্থ মন্ত্রণালয় ৬২ পদের মধ্যে ৩২টি রাজস্ব খাতে ও ২৪টি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগের অনুমতি দেয়। এই জনবল দ্বারা তিনটি শিফটে চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব নয়। প্রায় চার বছর যাবৎ হাসপাতালটি চালু করতে না পারায় ক্রয় করা মেডিক্যাল যন্ত্রপাতির ৩৩০টির মধ্যে ৪৬টির মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। ২৩৩টি এখনো ভালো আছে। তবে পাঁচটি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
এই বার্ন ইউনিট হসপিটালের ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: সাজ্জাদ হোসাইনের সাথে গতকাল মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এটি চালু করার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে কমিটি করা হয়েছে। যন্ত্রপাতির ব্যাপারে তিনি বলেন, যেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে সেগুলো ছোটখাটো যন্ত্রপাতি।


আরো সংবাদ



premium cement
বিশ্বের অন্যতম স্মার্ট হজ ব্যবস্থাপনা হবে বাংলাদেশে : ধর্মমন্ত্রী সিলেটে ৪৪ লাখ টাকার ভারতীয় চিনিসহ গ্রেফতার ৪ অবৈধ সম্পদ : এস কে সিনহার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৬ জুন টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ে চাপম্যান-আফ্রিদির উন্নতি থানচিতে ট্রাকে দুর্বৃত্তদের গুলি চীনের আনহুই প্রদেশের সাথে ডিএনসিসি’র সমঝোতা স্মারক সই আ’লীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষ : ২ শতাধিক ককটেল বিষ্ফোরণ, আহত ৫ রাঙ্গামাটিতে ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহত ৬, আহত ৮ প্রতিবাদ সমাবেশকারীদের গ্রেফতারের নিন্দা জামায়াতের ‘সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না’ ফরিদপুরে বেইলি ব্রিজ অপসারণ করে স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন

সকল