করোনার উৎপত্তিস্থল চীনেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপ
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ৩০ জুলাই ২০২১, ০১:১৬
করোনার উৎপস্থিল চীনে এবার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। করোনার সংক্রমণের হার দেশটিতে যখন নিচের দিকে তখন এই ধরন শনাক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনজুড়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয় চীনের উহান থেকে। এরপর ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে। ধারণ করেছে মহামারী রূপ। কঠোর বিধিনিষেধে করোনা শনাক্তের হার চীনে প্রায় শূন্যের কোঠায়। এমন অবস্থায় ডেল্টার প্রকোপ দেখা দিয়েছে জিয়াংসু প্রদেশের নানজিং শহরে। চীন যখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে তখনই উৎকণ্ঠার খবর দিলো দেশটির সরকার। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ৪৯ জনের দেহে কোভিড শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৮৬।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন প্রদেশে ২৪ জন করোনায় শনাক্ত হন। এর মধ্যে রাজধানী বেইজিংয়েও একজন আছেন। এ ছাড়া ১৪ জনের শরীরে নতুন করে করোনার উপসর্গ পাওয়া গেছে। নানজিং শহরের নানজিং লুকোউ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এক কর্মী পর্যাপ্ত সুরক্ষাব্যবস্থা না নিয়ে উড়োজাহাজ পরিষ্কার করছিলেন। সেখান থেকে ডেল্টার ধরন ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে শহরটিতে ডেল্টার আতঙ্কে স্থানীয়রা। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বিমানবন্দরটি। শুধু বিমানবন্দর নয় ডেল্টার সংক্রমণ ঠেকাতে নানজিং শহরও লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। বলা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার ২০০ জনের দেহে কোভিড শনাক্ত হয়েছে।
সিডনিতে লকডাউন কার্যকরে পুলিশকে বাড়তি ক্ষমতা : এক দিনে রেকর্ড ২৩৯ নতুন কোভিড রোগী শনাক্তের পর অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় শহর সিডনির কর্তৃপক্ষ বিধিনিষেধ না মানা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে পুলিশকে বাড়তি ক্ষমতা দিয়েছে। গত বছর মহামারী শুরুর পর নিউ সাউথ ওয়েলসের এ রাজধানী আর কখনোই বৃহস্পতিবারের মতো এক দিনে এত রোগী পায়নি বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সংক্রমণ মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, সিডনির আটটি ভাইরাস ‘হটস্পটের’ ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে এখন থেকে চার দেয়ালের বাইরে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে, থাকতে হবে বাড়ির পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে। শনাক্ত রোগীর ঊর্ধ্বগতি থামাতে শহরটিতে জুনের শেষ থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের পঞ্চম সপ্তাহ চললেও অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরনের বিস্তার কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে সেখানে টানা ৯ সপ্তাহের লকডাউন দেয়া হয়েছে; ২৮ আগস্ট এ বিধিনিষেধ শেষ হওয়ার কথা।
ভারতের বড় রাজ্যগুলোর অধিকাংশ মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি : ভারতের আটটি বড় রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের বেশি মানুষের দেহে কোভিড-১৯ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে বলে সে দেশের একটি সরকারি জরিপের ফলাফল থেকে জানা গেছে। গত বুধবার প্রকাশিত ওই জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ২৯ হাজার নাগরিকের ওপর পরিচালিত সেরো-প্রিভেলেন্স সার্ভে থেকে দেখা গেছে, সেখানকার সবচেয়ে বড় ও জনসংখ্যাবহুল আটটি রাজ্যে ৭০ শতাংশ বাসিন্দার কোভিড-১৯ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। জরিপের ফলাফল বলছে, মধ্যপ্রদেশের সাত কোটি তিন লাখ জনসংখ্যার ৭৯ শতাংশের দেহে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি মিলেছে। বিহার রাজ্যের ৭৫ শতাংশ এবং সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশের ৭১ শতাংশ বাসিন্দার শরীরে অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়েছে বলে জরিপে দেখা গেছে।
পশ্চিমবঙ্গে কোভিড বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ল : ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কোভিড বিধিনিষেধের মেয়াদ আরো বাড়ল। আপাতত আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে বিধিনিষেধের মেয়াদ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজ্য সচিবালয় নবান্ন থেকে জারি করা বিবৃতি থেকে এ কথা জানা যায়। রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী, ১৫ আগস্টের আগে সাধারণ যাত্রীদের জন্য লোকাল ট্রেন চলবে না। তবে সংরক্ষিত কামরার দূরপাল্লার ট্রেন চলবে। বাস, ট্রাম বা অন্যান্য গণপরিবহন অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলতে পারবে। কলকাতা মেট্রোরেল চলবে। তবে যাত্রী থাকবে কম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে। অফিসগুলোকে অর্ধেক কর্মী নিয়ে কাজ চালাতে বলা হয়েছে। রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত জারি থাকবে কারফিউ।
অর্ধেকের বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়েছে জার্মানি : জার্মানির অর্ধেকের বেশি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্পান বুধবার এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, তার দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ ভ্যাকসিনের দুই ডোজ গ্রহণ করেছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই ভ্যাকসিন কার্যক্রম এখনো ধীর গতিতেই চলছে। কিন্তু জার্মানি সে ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে আছে। জার্মানিতে ইতোমধ্যে চার কোটি ১৮ লাখ মানুষ সম্পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করেছেন। অর্থাৎ তারা ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজই গ্রহণ করেছেন। অপর দিকে ভ্যাকসিনের একটি ডোজ গ্রহণ করেছেন ৬১ দশমিক ১ ভাগ মানুষ।
টিকা ব্যবসায়ে রমরমা অ্যাস্ট্রাজেনেকা : করোনাভাইরাসের টিকা বিক্রি করে ব্যবসায়ে রমরমা ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যালস জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকা। চলতি বছরের প্রথমার্ধেই ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। নিজেদের তৈরি এই ভ্যাকসিন বিশ্বের ১৭০টিরও বেশি দেশে ইতোমধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যাসকল সোরিওট। খবর রয়টার্স।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, ২০২১ সালের প্রথমার্ধে বিশ্বজুড়ে ৪০ কোটি ৯০ লাখ ভ্যাকসিন ডোজ সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ইউরোপেই বিক্রি হয়েছে ৫৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। এ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের উদীয়মান বাজারে ৪৫৫ মিলিয়ন ডলারের ভ্যাকসিন বিক্রি হয়েছে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলার অন্যতম প্রধান টিকা হয়ে উঠছে ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি এই ভ্যাকসিন। ব্রিটেনে করোনা টিকাদান কর্মসূচির গতি ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। যার ফলে চলতি মাসে দেশটির অর্থনীতি পুরোদমে পুনরায় খুলে দেয়া হয়েছে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যাসকল সোরিওট বলেছেন, আমাদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ভ্যাক্সজেভরিয়ায় নাটকীয় অগ্রগতি সাধন করেছি। আজ পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং আমাদের অন্যান্য অংশীদাররা বিশ্বের ১৭০টিরও বেশি দেশে ১০০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে। ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের সাথে সমন্বয় করে যৌথভাবে করোনার টিকা উদ্ভাবন করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে তারা মুনাফা ছাড়াই এই ভ্যাকসিন বিক্রি করছে। যদিও ভ্যাকসিনটির সুরক্ষা নিয়ে কিছু কিছু দেশে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। এমনকি এই টিকা নেয়ার পর বিরল রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটছে জানিয়ে টিকাটির প্রয়োগ স্থগিত করেছে ইউরোপের কয়েকটি দেশ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা