১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

কক্সবাজারে বন্যা

প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ধস; কক্সবাজারে একই পরিবারের ৫ জনসহ ১৩ জনের মৃত্যু; শতাধিক গ্রাম প্লাবিত; পানিবন্দী ৫ লক্ষাধিক মানুষ; বিধ্বস্ত দুই শতাধিক ঘরবাড়ি
-

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের প্রভাবে তিন দিন ধরে টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার। বর্ষণজনিত পাহাড়ি ঢল ও সামুদ্রিক জোয়ারে যেমন কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে, তেমনি পাহাড়ধস ও বন্যার পানিতে ভেসে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এর মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড়ধসের ঘটনায় একই পরিবারের পাঁচজনসহ ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া পানিবন্দী হয়ে পড়েছে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। পাহাড়ি ঢলে বিধ্বস্ত হয়েছে অন্তত দুই শতাধিক ঘরবাড়ি।
গতকাল বুধবার টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালী ভিলেজার পাড়ায় পাহাড়ধসে একই পরিবারের সৈয়দ আলমের তিন ছেলে ও দুই মেয়েসহ মোট পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- আব্দুশ শুক্কুর (২০), মো: জোবায়ের (১৩), আব্দুল লতিফ (৮), কোহিনূর আক্তার (১৪) ও জায়নুরা (১২)। এ সময় ঘরের অন্যপাশে থাকায় সামান্য আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান সৈয়দ আলম ও রেহেনা বেগম দম্পতি।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য হোসেন আহমেদ জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে পাহাড়ের কিছু অংশ ভেঙে বাড়ির ওপর পড়ে সৈয়দ আলমের পরিবারের পাঁচ সদস্য ঘটনাস্থলেই মারা যান। হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, ঘটনার খবর পেয়ে গভীর রাতে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এদিকে টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: হাফিজুর রহমান।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টায় এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া উখিয়ায় ঢলের পানিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মহেশখালী হোয়ানকে এক বয়োবৃদ্ধ পাহাড়ধসে নিহত হয়েছেন। নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড়ধসে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার ঘুমধুমে বন্যার পানিতে ভেসে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার বাসস্টেশনের পূর্ব পাশে দরগাহ এলাকায় ঢলের পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে তিন যুবক নিখোঁজ হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তাদের লাশ উদ্ধার করে। এ নিয়ে গত দুই দিনে বক্সবাজারে ২১ জনের মৃত্যু হলো।
শতাধিক গ্রাম প্লাবিত : এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের প্রভাবে টানা তিন দিনের বর্ষণজনিত পাহাড়ি ঢল ও সামুদ্রিক জোয়ারে কক্সবাজারের নি¤œাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। পাহাড়ি ঢলে বিধ্বস্ত হয়েছে অন্তত দুই শতাধিক ঘরবাড়ি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, সোমবার রাত থেকে কক্সবাজার জেলায় টানা বর্ষণ চলছে। এতে জেলার ৯টি উপজেলাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ঈদগাঁও, উখিয়া, টেকনাফ ও মহেশখালীতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, কক্সবাজার পৌরসভার নি¤œাঞ্চল সমিতিপাড়া, পেশকার পাড়া ও আলীর জাহালের কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া খুরুশ্কুল, পিএমখালি, মাছুয়ারঘোনা পাহাড়ি প্লাবনে তালিয়ে গেছে। টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও নদীর পানি প্রবেশ করে ঈদগাঁওয়ের জালালাবাদ, ঈদগাঁও, পোকখালীর দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বাড়িঘর ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট ৫ থেকে ৬ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকায় স্থানীয় প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসরত লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মাইকিং করছে। সদর, ঈদগাঁও, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, উখিয়া, রামু ও মহেশখালীতে ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অব্যাহত বর্ষণে মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদী এবং ছোট-বড় কয়েকটি খাল-ছড়া দিয়ে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উখিয়ার কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প, রামুর কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়া, সদরের ঈদগাঁও, পোকখালী, ইসলামাবাদ, টেকনাফের হোয়াইক্যং ও বাহারছড়া ইউনিয়ন এবং চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর, ডুলাহাজারা, চিরিঙ্গা ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। এসব গ্রামের কয়েক হাজার বাড়ি অন্তত পাঁচ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। অপরদিকে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি উপকূলীয় এলাকায় কয়েক ফুট উচ্চতায় আঘাত হানছে। এতে সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সৈকতের ঝাউবাগান।
এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, টানা বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলে উখিয়ার জালিয়াপালং, হলদিয়াপালং, রতœাপালং, রাজাপালং ও পালংখালী ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হওয়ায় বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিস ও স্থাপনায় পানি ঢুকে গেছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজুর রহমান বলেন, উপজেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হোয়ানক ইউনিয়নের কালাগাজির পাড়া ও হরিয়ার ছড়া গ্রামে। দু’টি গ্রামেই শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। সরকারি সহায়তার জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে রামু উপজেলার গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও ফতেখাঁরকুল, রাজারকুল, জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও ভারী বর্ষণে টেকনাফ পৌরসভাসহ হ্নীলারি রঙ্গিখালী জেলেপাড়া, মৌলভীবাজার হোয়াইক্যংয়ে উলুবনিয়া, উনচিপ্রাং নয়াবাজার ও খারাংখালীর বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকটি এলাকায় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া দফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো: আব্দুর রহমান জানান, বঙ্গোপসাগরে নি¤œচাপের কারণে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার উপকূলে চলাচল করা নৌযানগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদে থেকে মাছ শিকারের কথা বলা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরো দু’দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, মহেশখালীর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সহযোগিতা দেয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ বলেন, উখিয়ার প্লাবিত এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। সেখানে তাদের রাতের খাবারসহ শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার করার জন্য ইউএনওদের নির্দেশনা দিয়েছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
কুবিতে‘বেআইনিভাবে' ডিন নিয়োগের প্রতিবাদে সিন্ডিকেট সদস্যের পদত্যাগ জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না : মির্জা ফখরুল গাজায় ত্রাণ প্রবেশে ইসরাইলের নিষেধাজ্ঞা যুদ্ধাপরাধের শামিল : জাতিসঙ্ঘ সঙ্গীতশিল্পী খালিদকে বাবা-মায়ের পাশে গোপালগঞ্জে দাফন রাণীনগরে টমটম গাড়ির ধাক্কায় নিহত ১ স্লিপিং ট্যাবলেট খে‌লেও সরকা‌রের ঘুম আসে না : গয়েশ্বর জনসাধারণের পারাপারে গোলাম পরওয়ারের খেয়া নৌকা উপহার ভোলায় হঠাৎ অসুস্থ ২৯ শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি করোনায় ১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৩১ ‘অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রত্যেকের ঈমানী দায়িত্ব’ নারায়ণগঞ্জের বাজারগুলোতে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম অর্ধেকে নামল

সকল