১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`
চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে সরকার : পররাষ্ট্র সচিব

ভূমধ্যসাগরে মানবিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন

-

তিউনিসিয়া ও লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে পৌঁছানের চেষ্টার সময় নৌকাডুবির কারণে মানবিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেছেন, ভূমধ্যসাগরের উপকূল থেকে উদ্ধার হওয়া কিছু বাংলাদেশীর সাথে আমাদের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের প্রাথমিক কর্তাবার্তা হয়েছে। এতে জানা গেছে, ইউরোপে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মানবপাচারকারী চক্র তাদের অনিরাপদ নৌযানে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার ঝুঁকি নিতে প্রলুব্ধ করেছে। এগুলো মানবপাচারের জঘন্যতম উদাহরণ। মানবপাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রতি এসব ঘটনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে সরকার।
ভূমধ্যসাগরের উপকূল থেকে ভিকটিমদের উদ্ধার করে জরুরি মানবিক সহায়তা দেয়ায় তিউনিসিয়া ও লিবিয়া সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাকে (আইওএম) ধন্যবাদ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব।
আন্তর্জাতিক মানবপাচার বিরোধী দিবস উপলক্ষে গতকাল আইওএম আয়োজিত ওয়েবিনারে মাসুদ বিন মোমেন এসব কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়া লোকজনের মধ্যে বাংলাদেশ এখন শীর্ষে। গত ২১ জুন লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে ১৭ জন বাংলাদেশী প্রাণ হারান। তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড ভূমধ্যসাগর থেকে বাংলাদেশীসহ ৩৮০ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। এর আগে গত ২৪ জুন তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড ২৬৭ জনকে উদ্ধার করে, যার মধ্যে ২৬৪ জনই বাংলাদেশী।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধে আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও তা বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সম্পদ ও সক্ষমতাজনিত সীমাবদ্ধতা। ভুল তথ্য দিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমানোর জন্য মানবপাচারকারীরা নানাভাবে সাধারণ মানুষকে প্রলুব্ধ করে থাকে। দুঃখজনকভাবে এ প্রক্রিয়ার সাথে পরিবারের ঘনিষ্ঠজনরাও জড়িত থাকেন। এসবের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মাসুদ বিন মোমেন বলেন, একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে কেবল দারিদ্র্যের কারণেই সাধারণ মানুষ মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ছে, এটি সঠিক না। এক দশকের বেশি ধরে বাংলাদেশ আর্থসামাজিক খাতে ক্রমেই অগ্রগতি অর্জন করে যাচ্ছে। এর ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার বাইরে চলে এসেছে। এমনকি করোনা মহামারীকালেও এ ধারা অব্যাহত ছিল, যা আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তিনি বলেন, মানবপাচারের সাথে দেশী-বিদেশী চক্র জড়িত রয়েছে। ভূমধ্যসাগরের মতো মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনাগুলো এড়াতে আমাদের মানবপাচারের উৎস ও গন্তব্যের চক্রগুলোকে একসাথে মোকাবেলা করতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন আন্তঃদেশীয় সমন্বয়, যা হতে হবে আন্তরিক।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, জেনেশুনে অনিশ্চয়তার দিতে পা বাড়াতে গিয়ে অনেকেই নিজেদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলার পাশাপাশি পরিবারের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনছে। এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদাও ক্ষুণœ হচ্ছে। এ ধরনের অবৈধ কাজের সাথে জড়িত থাকার জন্য এসব মানুষকেও দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, জবাবদিহিতা না করা এবং বিচারহীনতা অনেক সময় একই মুদ্রার দুই পিঠ হয়ে থাকে। তবে চূড়ান্তভাবে মানবপাচারের শিকার মানুষদের জীবন বাঁচানো, দুর্ভোগ কমানো এবং তাদের মর্যাদা সমুন্নত রাখার চেষ্টা করা আমাদের কর্তব্য। আর এ লক্ষ্যে মানবপাচার প্রতিরোধের জন্য সংশ্লিষ্টদের সাথে বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব জোরদার করতে চায়। মানবপাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লক্ষ্যভিত্তিক নীতি রয়েছে উল্লেখ করে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এ নীতি বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপও রয়েছে। টিকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় এ নীতির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। মানবাপাচার রোধসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদগুলোতে বাংলাদেশ সই করেছে, স্থানীয়ভাবে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, সাতটি বিভাগীয় শহরে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্থানীয় প্রশাসনের সর্বনিম্ন স্তর ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত মানবপাচারবিরোধী কমিটি রয়েছে। পুলিশ সদর দফতরে মানবপাচারসংক্রান্ত মনিটরিং সেল রয়েছে।
মানবপাচার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ২০২০ সাল থেকে পরপর দুই বছর মধ্যম সারিতে রয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, পরিস্থিতি উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, মানবপাচার রোধে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফোরামে এবং দ্বিপক্ষীয়ভাবে বিশেষ করে ভারতের সাথে সক্রিয় রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে মানবপাচারের শিকার বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মানবপাচার বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের স্পেশাল রেপোর্টিয়ার সিউভান মুলালি, জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সিপ্পো, আইওএমের উপদেষ্টা ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জোঅ্যান ওয়াগনারসহ বিশিষ্টজনরা ওয়েবিনারে যোগ দেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে সৌদি ও মিসর যাবেন ব্লিঙ্কেন গাজায় ‘শতভাগ’ মানুষ ‘তীব্র খাদ্য সঙ্কটে’ : মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাভালনির মৃত্যু : ৩০ রুশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ইইউ’র জীবাশ্ম জ্বালানির তহবিল বন্ধ করল কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় নাভালনির মৃত্যু : ৩০ রুশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ইইউর সালাম মুর্শেদীকে গুলশানের বাড়ি ছাড়তে হাইকোর্টের নির্দেশ গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্যে মিসর ও সৌদি আরব যাচ্ছেন ব্লিঙ্কেন আমাকে অ্যাপ্রোচ করেছিল, আমি গ্রহণ করিনি : মেজর অব. হাফিজ জাতিসঙ্ঘ সংস্থার প্রধানকে গাজায় প্রবেশে বাধা ইসরাইলের মিয়ানমারে বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার খবরে ‘শঙ্কিত’ জাতিসঙ্ঘ প্রধান ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ২৩

সকল