২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
করোনায় এক বছর ৯ মাস পেছাল প্রকল্প

টপোগ্রাফিক মানচিত্র ড্রোনে হালনাগাদ

-

নগর পরিকল্পনায় আধুনিক তথ্য-উপাত্তসংবলিত টপোগ্রাফিক মানচিত্র হালনাগাদ করবে মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ড্রোন)। মহামারী করোনার কারণে প্রকল্পের কার্যক্রম দু’দফা পিছিয়ে গেল। সর্বশেষ ২০০৩ সালে এই মানচিত্র প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু গত ১৮ বছরে মানচিত্রগুলো হালনাগাদ না হওয়াতে পরিকল্পনাবিদদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করতে পারছে না। যন্ত্রপাতি স্বল্পতায় এটা হালনাগাদ করা সম্ভব হয়নি। তাই সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে মনুষ্যবিহীন আকাশযান সংগ্রহ করে টপোগ্রাফিক মানচিত্র হালনাগাদের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, স্বাধীনতার পর রাজধানী ঢাকার লোকসংখ্যা ও আয়তন বেড়েই চলেছে। এর চার পাশে গড়ে ওঠা চারটি স্যাটেলাইট টাউন নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী, সাভার ও কেরানীগঞ্জ ঢাকা শহরের সাথে যুক্ত হতে চলছে। নাগরিক সুবিধা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, পরিকল্পিত বাসস্থান নির্মাণ, জননিরাপত্তা, খাদ্যনিরাপত্তা, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার, হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ, রাস্তা-কালভার্ট নির্মাণ, উড়াল সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ঢাকা শহর দেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র, প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সদর দফতর। যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, অপর্যাপ্ত ও সরু রাস্তার কারণে যানজট সৃষ্টি, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ সিস্টেমের কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি, ইটভাটায় বায়ুদূষণ, শিল্পকারখানার রাসায়নিক বর্জ্যে নদীর পানি দূষণ ও পয়ঃনিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় নগরবাসীর সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নগর পরিকল্পনাবিদদের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নগর পরিকল্পনায় আধুনিক তথ্য-উপাত্তসংবলিত টপোগ্রাফিক মানচিত্র তাই অনেক জরুরি।
বাংলাদেশ জরিপ অধিদফতর মানচিত্র প্রণয়নকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে, তারা ২০০৩ সালে ঢাকা শহর ও পাশের এলাকার ১:২০,০০০ স্কেলের আকাশ আলোকচিত্র ধারণ করে ১:৫০০০ স্কেলের মানচিত্র প্রস্তুত করে। তৈরি করা হয়েছে জিআইএস বেসিক ডেটা। মানচিত্রগুলো হালনাহাদ না হওয়াতে পরিকল্পনাবিদরা ক্রমবর্ধমান চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করতে পারছেন না। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানও আকাশ আলোকচিত্র প্রণয়ন করে না। আকাশ আলোকচিত্র ধারণের কোনো যন্ত্রপাতি জরিপ অধিদফতরে নেই। ডিজিটাল রঙিন আকাশ আলোকচিত্র সফটওয়্যারের সাহায্যে প্রসেস করা হয়। বৈদেশিক সহায়তায় ইতঃপূর্বে আকাশ আলোকচিত্র ধারণ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এখন সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাইতে শুরু করে পরিকল্পনামন্ত্রী প্রকল্পটি অনুমোদন দেন। তিন বছর মেয়াদে এই প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। এখন এটার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সাথে ব্যয় বাড়ছে দুই কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। অর্থ ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ৬৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।
বাস্তবায়নসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের আওতায় ছয়টি ড্রোনসহ আমদানিকৃত মালামালের ক্রয়কার্য চলতি বছরের জানুয়ারিতে সম্পন্ন হয়েছে। ক্রয়কৃত ড্রোনগুলোর ওপর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এই অফিসের জনবলকে সংশ্লিষ্ট কারিগরি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করার মাধ্যমে আকাশ আলোকচিত্র ধারণ করে আনুমানিক ৩৬১ বর্গকিলোমিটার প্রকল্প এলাকার মাঠ জরিপ কাজ সম্পন্ন করা হবে। এই বছর সেটি করার সম্ভাবনা কম। কারণ শুষ্ক মৌসুমেই ড্রোন প্রশিক্ষণ ও উড্ডয়নের মাধ্যমে আকাশ আলোকচিত্র ধারণ করা সম্ভব।
এ ছাড়া প্রকল্প শুরুর তারিখ ২০১৮ সালের জুলাই হলেও প্রকল্পটি মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন পেতে চার মাস সময় লেগেছে। ফলে ২০১৮ সালের নভেম্বরের পর কাজ শুরু করা হয়। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক দরপত্র পদ্ধতিতে আহ্বানকৃত যন্ত্রাংশসহ ছয়টি ড্রোন ক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে দেরি হয়। তাই মেয়াদ এক বছর ৯ মাস বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। আর রাজস্ব বাজেটে ভ্রমণ ব্যয় খাতে ৯৯ লাখ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়নকাজের জন্য প্রতি পাঁচ বছর অন্তর আকাশ আলোকচিত্র ধারণ করা প্রয়োজন; কিন্তু যন্ত্রপাতির স্বল্পতায় ১০ থেকে ১৫ বছর পর পর আকাশ আলোকচিত্র ধারণ করতে হচ্ছে। জরিপ অধিদফতরের যন্ত্রপাতি না থাকায় বৈদেশিক সহায়তা নিয়ে এই কাজটি এ পর্যন্ত সম্পন্ন করতে হয়েছে। গত ২০০৩ সালে যে আকাশ আলোকচিত্র ধারণ করা হয়েছে তা ১৫ বছরের পুরনো, যা দিয়ে পরিকল্পনাবিদরা কাজ করতে পারছেন না।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক ঢাকা শহরের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় মহাপরিকল্পনাটি ২০৩৫ সাল পর্যন্ত হালনাগাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজউক কর্তৃক সমগ্র ঢাকা এলাকার জিপিএস সার্ভে সম্পন্ন করে সিএস বা আরএস মৌজা ম্যাপে বিস্তারিত এরিয়া প্ল্যান করা হয়। অন্য দিকে অন্যান্য সংস্থা যেমনÑ ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) কর্তৃক স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (এসটিপি) এবং ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকা রাজউক কর্তৃক প্রণীত মহাপরিকল্পনা এলাকার আওতাধীন। ফলে প্রকল্পটি রাজউক এবং অন্যান্য সংস্থার প্রকল্পের সাথে দ্বৈধতা রয়েছে। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা আরো সুনির্দিষ্ট এবং প্রাসঙ্গিক হওয়া দরকার।

 


আরো সংবাদ



premium cement