২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ডুবল ঢাকা এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে

-

জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার পরও কোনো কাজ হচ্ছে না। বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতা যেন একটি সাধারণ দৃশ্য। গতকাল মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই আবার ডুবল ঢাকা। কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর সমান পানি জমে যায়। প্রধান প্রধান সড়কেও পানি জমে যাওয়ায় অনেক সিএনজি, মোটরসাইকেল অকেজো হয়ে পড়ে। এতে কয়েকটি সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। গতকাল বেলা ২টার দিকে বৃষ্টি শেষ হলেও সন্ধ্যায়ও কয়েকটি সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় অফিসগামী মানুষকে।
বর্ষার শুরু থেকেই রাজধানীতে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গতকালও রাজধানীতে বৃষ্টি হয়। তবে উত্তর সিটি এলাকায় স্বল্প বৃষ্টিপাত হলেও দক্ষিণ সিটি এলাকায় বেলা ১টার দিকে শুরু হয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ভারী বৃষ্টিপাত হয়। আর এতেই ডুবে যায় ঢাকার পথঘাট।
সরেজমিনে দেখা যায়, সচিবালয়ের ভেতরের সড়কগুলোতে প্রায় হাঁটু পানি জমে যায়। এ ছাড়া প্রেস ক্লাব এলাকা, সেগুনবাগিচার বিভিন্ন সড়ক, বিজয়নগর থেকে নয়াপল্টন হয়ে ফকিরাপুল সড়কের দুই পাশ, আরামবাগ, দৈনিকবাংলা, কমলাপুর এলাকার সড়কগুলোতেও হাঁটু সমান পানি জমে যায়। নয়াপল্টনে সড়কের পাশে থাকা প্রাইভেট কারের চাকা প্রায় ডুবডুব দেখা যায়। এ পানির মধ্য দিয়ে চলতে গিয়ে অনেক সিএনজি এবং মোটরসাইকেল অকেজো হয়ে পড়ে। ফকিরাপুল এলাকায় সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। রাস্তার একটি অংশ গর্ত করে রাখায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া ফকিরাপুল থেকে আরামবাগমুখী সড়কের পূর্ব দিকের সড়কে অনেক গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে চলতে গিয়ে সব ধরনের গাড়ি সাবধানে চলতে দেখা যায়। বিশেষ করে রিকশাযাত্রীরা ভয়ে ভয়ে পথ চলতে বাধ্য হন।
পুরান ঢাকার মাজেদ সরদার রোড, বাংলাদেশ মাঠ, নাজিরা বাজার চৌরাস্তা ও সিক্কাটুলী এলাকায় পানি জমে যায়। এতে অনেক দোকানপাট ও বাসাবাড়ির নিচতলায় পানি ঢুকে যায়। গতকাল দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, বংশালের বাংলাদেশ মাঠের চার পাশের সড়কে প্রায় হাঁটু পানি জমে রয়েছে। এ পানি ভেঙে চলাচল করছেন পথচারীরা। এর মধ্যে সিক্কাটুুলী রাস্তা, নাজিরা বাজার চৌরাস্তা এলাকায় জলাবদ্ধতার পরিমাণ বেশি। তবে এ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সাত রওজা চৌরাস্তায় নতুন পাইপলাইন বসাতে দেখা গেছে। বর্ষায় এ খোঁড়াখুঁড়ির কারণে নাগরিকদের চলাচলেও ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশনের গাফিলতিতে এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। একবার এক ঘণ্টা টানা বৃষ্টি হলে সড়কে হাঁটু থেকে কোমর পানি জমে যায়। এতে সড়কে যানচলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। এ পানি সরতে এক থেকে দুই দিন সময় লাগে। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। মাজেদ সরদার রোডের বাসিন্দা মাহতাব উদ্দিন বলেন, এখন বর্ষা মৌসুমে দুই-একদিন পরপরই বৃষ্টি হচ্ছে। এমন অবস্থায় এক মাসের বেশি সময় ধরে এ এলাকায় জলাবদ্ধতা লেগে আছে। নোংরা পানির কারণে প্রয়োজনেও বাসা থেকে বের হওয়া সম্ভব হয় না। অথচ সিটি করপোরেশনের তেমন কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। সিক্কাটুলীর বাসিন্দা আক্তার হোসেন বাসা থেকে রিকশায় বঙ্গবাজার যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছেন। কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার আশঙ্কায় বাংলাদেশ মাঠ সংলগ্ন মাজেদ সরদার কমিউনিটি সেন্টারের নিচে আশ্রয় নেন। তিনি বলেন, বংশাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের দূরত্ব এক কিলোমিটারের চেয়েও কম। অথচ এ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সংস্থাটির কোনো মাথাব্যথা নেই। এখন নাগরিকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এতে এ এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। বংশাল থানা এলাকা ডিএসসিসির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। স্থানীয় কাউন্সিলর আউয়াল হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে তার ওয়ার্ডের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ। প্রতিদিনই বাসিন্দারা মুঠোফোনে কল দিয়ে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। বিষয়টি ডিএসসিসির সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমার ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা লেগে আছে। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়নি। এখন বৃষ্টির পানি নামতে পারে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংশ্লিষ্টদের দাবি, পুরনো ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে তারা একটি মেগা প্রকল্প নিয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় বংশালের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলছে। বর্ষার মধ্যেই এ কাজ শেষ হবে। এর পর থেকে এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা হবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement