২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘরবাড়ি ছাড়ছেন ডিএনডির মানুষ

জলাবদ্ধতা নিরসনে জেলা প্রশাসনের কমিটিও চিন্তিত
-

ঘরের ভেতরে হাঁটুপানি। প্রথমে খাটের নিচে দু’টি ইট, পরে চারটি ইট দিয়ে কোনোমতে টিকে থাকতে চেয়েছে দিনমজুর মিলন মিয়ার পরিবার। কিন্তু পানি বেড়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছেন তিনি। ফতুল্লার লালপুর ডিএনডি এলাকার বাসিন্দা মিলন মিয়া গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, ‘এত্ত কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না। অনেক দিন ধরে পানির ভেতর বসবাস করছি। খেতে পারি না। রাতে ঘুমাতেও পারি না। বাসা পানিতে তলিয়ে গেছে, আমাদের সীমাহীন কষ্ট।’
মিলন মিয়ার মতো ডিএনডি এলাকায় বসবাসকারী নিম্নাঞ্চলের অনেক বাসিন্দাই নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ঘরবাড়ি ছাড়ছেন। এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে পানিতে। অনেক বসতঘরে পানি ঢুকেছে। অনেক বাড়ির নিচতলা ডুবে আছে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোসাম্মৎ রহিমা আক্তারের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটির সদস্যসচিব সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা। প্রতিনিধিদল পরিদর্শনে গেছে ফতুল্লার লালপুর পৌষার পুকুরপাড় এলাকায়। সেখানে জলাবদ্ধতার দৃশ্য দেখে হতবাক কমিটির প্রত্যেকেই। জলাবদ্ধতা দূর করার উপায় নিয়ে চিন্তিত প্রতিনিধিদলও।
সরেজমিন দেখা গেছে, পানিতে থইথই করছে ফতুল্লার লালপুর, ইসদাইর ও এনায়েতনগরের বিসিক শিল্পনগরী এলাকা। এসব এলাকায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। জলাবদ্ধতা বেড়ে তলিয়ে যায় বসতবাড়ি। সড়ক পথে চলছে নৌকা। কেবল বৃষ্টির পানিই নয়, এর সাথে যোগ হয় আশপাশের ডাইং কারখানার কেমিক্যালযুক্ত বিষাক্ত তরল বর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাশনের দূষিত পানি। এসব ময়লা পানি মাড়িয়েই চলতে হচ্ছে লাখো মানুষকে। ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান স্বপন বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে জেলা প্রশাসনের গঠিত কমিটির সবাই পরিদর্শনে এসেছেন। কোন দিক দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা যায়, এটা নিয়ে একটি ম্যাপ তৈরি করতে বলেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ডিএনডি প্রজেক্টের প্রতিনিধিরা বলছেন, এটা নিয়ে তেমন কিছু করার নেই। কারণ এলাকাটি পার্শ্ববর্তী খালের চেয়ে নিচু। তাই পানি খালে নেয়ার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। তারা আপাতত একটি পাম্প দিতে চাচ্ছে। কিন্তু পাম্প দিলেওতো সেটি পরিচালনার জন্য বিদ্যুৎ বিল নিয়ে সমস্যা থেকে যাবে। বিদ্যুৎ বিল বহন করার মতো ইউনিয়ন পরিষদের এত বড় ফান্ড নেই। মাসে তিন লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল কিভাবে দেবে। বিদ্যুৎ বিল নিয়ে তারা এখনো কিছু বলেনি। তারা বলছে রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর উঁচু করতে। খালে পানি এলে তারা পাম্প দিয়ে পানি সেচবে। এখন রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়ি উঁচু করাও তো সবার পক্ষে সম্ভব নয় ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোটা অঙ্কের বাজেট নিয়ে ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ চলছে গত কয়েক বছর ধরে। কিন্তু দিনে দিনে জলাবদ্ধতা কমার পরিবর্তে আরো বাড়ছে। বিশেষ করে ফতুল্লা থানার ফতুল্লা ও কুতুবপুর ইউনিয়নে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। এবার বর্ষা শুরু না হতেই চরম দুর্ভোগের কবলে পতিত হয়েছে সর্বস্তরের মানুষ। বিশেষ করে ফতুল্লা থানার ইসদাইর থেকে লালপুর এলাকা পর্যন্ত ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কুতুবপুর ইউনিয়নেরও বিভিন্ন এলাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের কার্যালয় ডিএনডির ভেতরে। অথচ কিভাবে কি কাজ হচ্ছে এটা জানেন না জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ডিএনডি প্রজেক্টের কাজ কিভাবে হচ্ছে আমরা জানি না। কখনো আমাদের মতামত নেয়া হয়নি। এটা জানেন শামীম ওসমান। কারণ তিনিই ক্রেডিট নিচ্ছেন। তবে আমি মনে করি ডিএনডি প্রকল্পের কাজ যদি পরিকল্পিতভাবে না হয় তাহলে এটা বুমেরাং হবে। সরকারের দেয়া শত শত কোটি টাকার কাজের কোনো সুফল জনগণ পাবে না।
জানা গেছে, ফতুল্লার রামারবাগ, লামাপাড়া ও কাঠেরপুলসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক জলজট লেগে আছে। এসব এলাকায় জলজটের সাথে ডাইংয়ের কেমিক্যাল ও রঙ মিশ্রিত বিষাক্ত পানি মিশে একাকার। এর সাথে যুক্ত হয়েছে বাসাবাড়ির টয়লেটের বর্জ্যমিশ্রিত পানিও। এসব দূষিত ও বিষাক্ত পানি মাড়িয়েই কর্মস্থলে ছুটছেন এসব এলাকার লাখো মানুষ। একই অবস্থা ফতুল্লার ভুইগড় এলাকায়। এখানে প্রায় রাস্তাঘাট ডুবে গেছে পানিতে। একই চিত্র বিরাজ করছে ফতুল্লার লালখা, ইউনিকম টেক্সটাইল মোড়, লালপুর পৌষার পুকুরপাড়, গাবতলী, টাগারপাড়, ইসদাইর, ফতুল্লা রেলস্টেশন রোড, পাইলট স্কুল রোড, তক্কারমাঠ, পিলকুনী ও দাপা ইদ্রাকপুরসহ আশপাশের এলাকায়।
জলাবদ্ধতা রয়েছে এনায়েতনগর, কুতুবপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকাতেও। ইউনিয়নের মুন্সিবাগ, রসুলপুর, শহীদনগর, পিলকুনি, আলিগঞ্জ, নুরবাগসহ প্রায় প্রতিটি সড়কে হাঁটুপানি। বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পানি প্রবেশ করেছে অনেকের ঘরেও। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শিশু ও মুসল্লিরা। নোংরা পানি মারিয়েই চলতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর ডিএনডি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এর আগে প্রথম ধাপে ২০১৬ সালে একনেকের সভায় ডিএনডি প্রকল্পের জন্য ৫৫৮ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্প পাস হয়। পরবর্তীতে ডিএনডি এলাকায় নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রথম সংশোধনীতে বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কার্যক্রম চলাকালীন প্রায় সাড়ে তিন বছরে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৫০.৬৫ শতাংশ।
এ দিকে অর্থসঙ্কটে পড়েছে ডিএনডি প্রকল্প। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ প্রকল্প বাবদ ৩৫০ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ের কার্যক্রম পরিকল্পনা করা হলেও ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ফলে প্রকল্পের কর্মপরিকল্পনা থাকলেও অর্থ সঙ্কটে অধিকাংশ চলমান কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
সরকার ভিন্ন মত ও পথের মানুষদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে : মির্জা ফখরুল ধুনটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বৃদ্ধের মৃত্যু বাকৃবির এক্স রোটারেক্টরর্স ফোরামের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠিত পাবনায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড, হিট স্ট্রোকে মৃত্যু ১ দাগনভুঞায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তির ঘটনায় আ’লীগ নেতাকে শোকজ দখলে থাকা ৪ গ্রাম আজারবাইজানকে ফিরিয়ে দেবে আর্মেনিয়া স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে স্ত্রীর আত্মহত্যা! কুলাউড়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর মৃত্যু যেসব এলাকায় রোববার ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে পলাশ প্রেসক্লাবের সভাপতি মনা, সম্পাদক রনি তীব্র গরমে আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না

সকল