২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টানা বর্ষণে নৌপথে রূপ নিয়েছে চট্টগ্রামের সড়ক-অলিগলি

-

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবায়নাধীন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও নগরীর জলাবদ্ধতা কমা তো দূরের কথা বরং বেড়েছে। এখন সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর বিস্তীর্ণ সড়ক, অলিগলি পানি নিমজ্জিত হয়ে নৌপথে রূপ নিচ্ছে! সাথে বাড়ছে নাগরিক দুর্ভোগ।
গতকাল শনিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় নগরীতে ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। কিন্তু বর্ষার শুরুতে এই পরিমাণ বৃষ্টিতেই নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকায় কোমর সমান পানিতে আটকে ছিল খোদ চসিকের একটি টিম।
গত ৬ জুন সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল পানি নিমজ্জিত হলে চসিকের নতুন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এর জন্য সিডিএর বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের কারণে বিভিন্ন খাল-নালায় দেয়া বাঁধকে দায়ি করেন। সর্বশেষ গত ১৫ জুন নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয় সভায় আগামী ৩০ জুনের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর খালে থাকা সব বাঁধ অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে নগরের বিভিন্ন খালের বুক থেকে বাঁধ সরানোর কাজ শুরু হয়েছে বললেও এমন আশ্বাসকে শুধুমাত্র ‘কথার কথা’ বলে অভিযোগ তুলছেন চসিক সংশ্লিষ্টরা।
চসিকের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নগরের ফরেস্ট গেট এলাকায় শিক্ষা বোর্ড অফিসের সড়কে রিটেইনিং ওয়ালের কাজ চলছে। একইভাবে বহদ্দারহাট এলাকার চাক্তাই খাল অংশে এখনো বাঁধ রয়ে গেছে। এসব অংশসহ নগরের বেশ কিছু জায়গায় ড্রেন-খালের মাটি তুলে রাখা হয়েছে সড়কে। সড়কে ফেলে রাখা মাটির স্তূপের কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া চাক্তাই খালের বিভিন্ন অংশে লোহার পাতের বাঁধ থাকার কথাও জানান তারা। যার কারণে বৃষ্টির পানি দ্রুত নামতে না পেরে ঢুকে যাচ্ছে লোকালয়ে। সড়ক থেকে শুরু করে গলি, বাসা, বাড়ি ডুবে যাচ্ছে কোমর থেকে হাঁটুপানিতে।
সিডিএ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খালের দুই পাশের রিটেইনিং ওয়াল করার জন্য বিভিন্ন খালের অংশে বাঁধ দেয়া হয়েছে। খালের দুই পাশে বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষায় দেয়া হয়েছে এসব শিট ফাইল। প্রয়োজন অনুসারে ৬ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত শিট ফাইলে গাঁথুনি দেয়া হয়েছে। কিন্তু বর্ষায় জলাবদ্ধতা সহনীয় রাখতে এসব বাঁধ অপসারণের সিদ্ধান্ত হওয়ায় এখন অপসারণের কাজ চলছে।
এ দিকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও গত প্রায় চার বছর ধরে চলমান এই প্রকল্পের কোনো সুফলই নগরবাসী পায়নি। বরং বেড়েছে জলাবদ্ধতা। এখন নতুন করে বলা হচ্ছে এই প্রকল্পে ৩৬টি খাল সংস্কার এবং পুনঃখনন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু নগরীর খালের সংখ্যা অর্ধশতাধিক হওয়ায় সব খাল অন্তর্ভুক্ত না হলে প্রকল্পের সুফল মিলবে না। তা ছাড়া বিদ্যমান প্রকল্পটির এক দফায় এক বছর সময় বাড়ানো হলেও এখন পর্যন্ত অর্ধেক কাজ বাকি। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ আরো বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকল্প ব্যয়ও প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সূত্র মতে, এ নিয়ে আজ রোববার ঢাকায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে এবং তাতে প্রকল্প ব্যয় এবং মেয়াদ বাড়ার আভাস দিয়েছে সিডিএ সূত্র।
সূত্র জানায়, জলাবদ্ধতা থেকে মহানগরীকে রক্ষা করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৬টি খাল সংস্কার, খনন এবং সম্প্রসারণ ছাড়াও খাল দখল করে থাকা প্রায় তিন হাজার ১৫০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। খাল ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার ২৪০ কিলোমিটার নালা পরিষ্কার, খালের পাড়ে ১৭৬ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, খালগুলোর এক পাশে ১৫ ফুট চওড়া রাস্তা এবং অপর পাশে পাঁচ ফুট ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ৫৪টি ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর সাথে যুক্ত পাঁচটি খালের মুখে স্লুইসগেট নির্মাণের কাজ রয়েছে। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ।
২০১৭ সালে নেয়া প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২০ সালের জুনে প্রকল্প মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়। সরকার এক বছর মেয়াদ বাড়ায়। এতে করে চলতি জুনেই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলেও জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল নিমজ্জিত : এ দিকে গত শুক্রবার রাত হতে টানা বর্ষণে চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল নিমজ্জিত ছিল গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত। বৃষ্টির সাথে জোয়ারের পানি একাকার হয়ে কোথাও হাঁটুপানি, আবার কোথাও কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে নগরীর মূল সড়ক ও অলিগলি। টানা বৃষ্টির কারণে নিমজ্জিত অবস্থায় নাকাল হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। গতকাল দিনভর থেমে থেমে বর্ষণে স্থবির হয়েছে পুরো বন্দরনগরীর জীবনযাত্রা। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস গতকাল শনিবার বেলা ৩টা হতে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও গতকাল বিকেল ৪টা হতে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারী (২৪ ঘণ্টায় ৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (২৪ ঘণ্টায় ৮৯ মিলিমিটার বা তার বেশি) বর্ষণ হতে পারে। অতিভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে বলেও আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
অতিভারী বর্ষণে নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, কাতালগঞ্জ, রহমতগঞ্জ, খাতুনগঞ্জ, বাকলিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা, নাছিরাবাদ শিল্পাঞ্চল, কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকা, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। শুধু সড়কে নয়, অলিগলি উপচে বাসা ও দোকানপাটেও ঢুকেছে পানি। নগরীর নিম্নাঞ্চলের বেশির ভাগ বাসার নিচতলায় ও দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়েছে। নগরের ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র চাক্তাই খাতুনগঞ্জও পানিতে ডুবেছে। বিভিন্ন স্থানে সড়ক-বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেপড়ায় থমকে যায় জনজীবন। নিমজ্জিত অবস্থায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে যানজটও চোখে পড়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
হোচট খেল লিভারপুল, পিছিয়ে গেল শিরোপা দৌড়ে যোদ্ধাদের দেখতে প্রকাশ্যে এলেন হামাস নেতা সিনওয়ার! ফের পন্থ ঝড়, ঘরের মাঠে গুজরাটকে হারাল দিল্লি ইউক্রেনকে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ আরো বেড়েছে ইউক্রেন যুদ্ধে দুর্নীতি, পুতিনের নির্দেশে গ্রেফতার রুশ উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী!  আমেরিকানরা কি ধর্ম থেকে সরে যাচ্ছে? গাজায় রিজার্ভ ব্রিগেড মোতায়েন ইসরাইলের উপজেলা নির্বাচন জটিলতা ভোটাধিকারের প্রতি মর্যাদা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধাপরাধের ধারাবাহিক ধারা’ অনুসরণের অভিযোগ

সকল