১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সর্বত্রই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট

জুনের ১৮ দিনে মৃত্যু ৭৮৬
-

চলতি জুন মাসের ১৮ দিনে সারা দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৭৮৬ জনের। করোনা সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে জুনের অবশিষ্ট দিনগুলোতে মৃত্যু এর চেয়ে বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সর্বত্রই বিপজ্জনক ও অত্যন্ত দ্রুত সংক্রামক ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা কথা বলতে না চাইলেও মহাখালীর কলেরা হাসপাতাল (আইসিডিডিআরবি) ও রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জিনোম সিকোয়েন্স করে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণের তথ্য জানাচ্ছে। আইসিডিডিআরবি রাজধানী ঢাকার করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ৬০ নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করে ৬৮ শতাংশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে। আইসিডিডিআরবির মিডিয়া ম্যানেজার এ কে এম তারিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই জিনোম সিকোয়েন্সগুলো করা হয়। ৬০ নমুনার মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছাড়াও ২২ শতাংশ দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট এবং অবশিষ্ট ১২ শতাংশ নমুনায় চীনের উহান ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে যেখানে করোনাভাইরাস প্রথম দেখা দেয়।
এদিকে সারা দেশে করোনা সংক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় মোট নমুনা পরীক্ষার ১৮.৫৯ শতাংশ করোনাভাইরাসে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে। সারা দেশে করোনায় মোট শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৮৮৩ জন। গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে গড়ে করোনা শনাক্তের হার হলো ১৩.৪৪ শতাংশ। গতকালকের নমুনা পরীক্ষা সাপেক্ষে সারা গড়ে করোনা শনাক্তের সারা দেশের মোট গড়ের চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ বেশি। জনস্বাস্থ্যবিদরা আগে থেকেই সতর্ক করে আসছিলেন, যেহেতু সারা ভারতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবেশী দেশ বলে বাংলাদেশেও এই ভ্যারিয়েন্ট চলে আসবে সতর্ক না হলে।
এর আগে আইইডিসিআর মে মাসের ১৬ তারিখের পর ৫০টি নমুনার সিকোয়েন্স ৮০ শতাংশের মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছিল। তবে সেটা ছিল দেশের বিভিন্ন স্থানের নমুনায়। আইসিডিডিআরবি কেবল রাজধানীর ঢাকার ৬০টি নমুনা পরীক্ষা করে এর ৬৮ শতাংশের মধ্যেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছে।
এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবির জিনোম সিকোয়েন্সগুলোই প্রমাণ করে সারা দেশে করোনার ভারতীয় ও দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টটি ছড়িয়ে পড়েছে। আগে থেকে ব্যবস্থা নিতে পারলে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটি সীমান্তেই নিয়ন্ত্রণ করা যেত। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটি যে বাংলাদেশে আসতে পারে এই পূর্বাভাস আগেই করা হয়েছিল। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, এখনো সময় আছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ যারা আছেন তাদের সাথে পরামর্শ করে বিপজ্জনক এই ভারতীয় ও দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সম্প্রতি দেখা গেছে, ভারতের সংক্রমণ কমে গেছে। আমরা ভারতীয় অভিজ্ঞতাগুলোও কাজে লাগাতে পারি।
আইইডিসিআরর জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৬টি নমুনার ১৫টিতেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। অপর দিকে গোপালগঞ্জ জেলা থেকে সংগৃহীত ৭টি নমুনার ৭টিতেই, রাজধানীর ৪টি নুমনার দু’টিতে, রাজধানীর পাশে নবাবগঞ্জের ৭টি নমুনার ৭টিতেই পাওয়া গেছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। এছাড়া খুলনা শহর থেকে সংগৃহীত ৩ নমুনার ৩টিতেই উল্লিখিত ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এর বাইরে ভারত থেকে সরাসরি চিকিৎসা নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন এমন তিনজনের নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।
জুনের ১৮ দিনে করোনায় মৃত্যু ৭৮৬ : ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যেমন খুব দ্রুত আক্রান্ত করে থাকে আবার এই ভ্যারিয়েন্টটি রোগীকে খুব বেশি সময় দেয় না। শরীরের প্রবেশ করেই ফুসফুসকে ক্ষতি করতে শুরু করে। তার মানে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ভাইরাসটি ফুসফুসে থাকতে খুব বেশি পছন্দ করে। অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, যেহেতু করোনা সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে বেশি এবং ভারতের সাথে বাংলাদেশের মানুষের দৈনিক চলাফেরা আছে, সে কারণে সীমান্ত অঞ্চলের উপজেলা ও জেলা সদরের হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। উপজেলা হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ এবং জেলা হাসপাতালে অক্সিজেনসহ আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা রাখতে হবে যেন উপজেলা থেকে রেফার হয়ে রোগীরা এখানে উন্নতমানের চিকিৎসা পেতে পারে। এর বাইরে সব মেডিক্যাল কলেজে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাহলে মানুষ করোনা চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসবে না। এখন করোনা সংক্রমিত হয়ে চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানিয়েছেন, কলিমুদ্দিন মোল্যা নামে একজন ফ্লুর উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজে ১৬ জুন ৩টায় ভর্তি হন এবং ১৭ জুন সাড়ে ১১টায় তার মৃত্যু হয়। অপর দিকে ১৩ জুন সন্ধ্যা ৭টায় নালতা গ্রামের আনিসুর রহমানের স্ত্রী তাহমিনা খাতুন (৪২) ভর্তি হন এবং ১৭ জুন ভোরে তিনি মারা যান। দেব নগরের কোরবান আলীর স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন (৪০) ১৭ জুন মৃত্যুবরণ করেন। এই কেসগুলোতে দেখা যায় ইনফেকশন হওয়ার পর খুব অল্প সমেয়র মধ্যেই রোগী মারা যাচ্ছে। সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজে ১৭ জুন মোট তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৫ জন করোনায় আক্রান্ত হন। সেখানে সংক্রমণের হার ৪৫.২১ শতাংশ।
বাগেরহাট সংবাদদাতা জানিয়েছেন, বাগেরহাটে করোনা সংক্রমণের হার ৫০ শতাংশ। এই জেলায় ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৯ জন।
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানিয়েছেন, কুড়িগ্রামে ৩৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহী ব্যুরো জানিয়েছে, রাজশাহীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর পাঁচজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুইজন, নাটোরের দুইজন, নওগাঁর তিনজন রয়েছে। এই নিয়ে গত ১৮ দিনে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৮৩ জন মারা গেলেন করোনায়। রামেকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ভর্তি হয়েছেন ৪১ জন।
খুলনা ব্যুরো জানিয়েছে, খুলনা বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৩৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং এ বিভাগে মারা গেছে আটজন। এর মধ্যে খুলনায় দুইজন, যশোরে দুইজন, নড়াইলে দুইজন, মেহেরপুরে ও সাতক্ষীরায় একজন করে মোট আটজন। গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ২২৬ জনের মধ্যে।
রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানিয়েছেন, গত ৪৮ ঘণ্টায় ১০৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
বগুড়া সংবাদদাতা জানিয়েছেন, বগুড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় চারজন মারা গেছেন। বগুড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬১ জন।


আরো সংবাদ



premium cement